Ajker Patrika

ফের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পুতিনের নির্দেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৭
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

ফের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি করতে ক্রেমলিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘ বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অবিলম্বে’ এমন পরীক্ষা শুরু করতে নির্দেশ দেওয়ার পর মস্কো এই সিদ্ধান্ত নিল।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল বুধবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পুতিন বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা বিস্তৃত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, ‘তাহলে রাশিয়া বাধ্য থাকবে সমান প্রতিক্রিয়া জানাতে।’

পুতিন বলেছেন, ‘এ কারণে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিচ্ছি—বিষয়টি নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে, নিরাপত্তা পরিষদে বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে এবং পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি-সংক্রান্ত প্রাথমিক পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে।’

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে রাশিয়া আর কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা আবার বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অনড় অবস্থায় পুতিনের ওপর ট্রাম্পের হতাশা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গত অক্টোবর পুতিনের সঙ্গে হাঙ্গেরিতে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন। পরদিন তিনি দুই বড় রুশ তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

এরপর গত ৩০ অক্টোবর ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রতিরক্ষা বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন ‘অবিলম্বে’ পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রও ‘অন্য পরাশক্তিদের সমান অবস্থানে’ থাকে। এর কয়েক দিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার নতুন ‘বুরেভেস্তনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করেন। পারমাণবিক শক্তিচালিত এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

ক্রেমলিন প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, পুতিন একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে একটি পরিকল্পিত পরামর্শ বৈঠকে বসেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোউসোভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ‘রাশিয়ার প্রতি সামরিক হুমকির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পারমাণবিক বাহিনীকে এমন প্রস্তুত অবস্থায় রাখতে হবে, যাতে শত্রুর অগ্রহণযোগ্য ক্ষতি ঘটানো যায়।’

বেলোউসোভ আরও জানান, রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলের নোভাইয়া জেমলাইয়া ঘাঁটি অল্প সময়ের নোটিশেই পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে প্রস্তুত। রুশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা যদি এখন যথাযথ পদক্ষেপ না নেই, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমের জবাব দেওয়ার সময় ও সুযোগ হারিয়ে ফেলব।’

বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন—পুতিন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করেননি। পেসকভ বলেন, ‘আমরা কবে প্রস্তুতি শুরু করব, তা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে কতটা সময় লাগে তার ওপর।’

বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় শক্তি। সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশনের হিসাবে, রাশিয়ার কাছে বর্তমানে ৫ হাজার ৪৫৯টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে, যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারহেড সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৫৫০ টি, এর মধ্যে সক্রিয় প্রায় ৩ হাজার ৮০০ টি। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের মজুত ছিল ৩১ হাজারের বেশি ওয়ারহেড।

চীন অনেক পেছনে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত তার পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বাড়িয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে চীনের ওয়ারহেড সংখ্যা প্রায় ৬০০ এবং ২০২৩ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১০০টি করে বাড়ছে। অন্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো হলো—ফ্রান্স, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেন। ১৯৯৬ সালে যখন বিস্তৃত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন থেকে মাত্র তিন দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে, আর উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালের পর থেকে পাঁচবার পরীক্ষা চালিয়েছে—সর্বশেষ ২০১৭ সালে। ২১শ শতকে এটি একমাত্র দেশ যারা এমন বিস্ফোরণ চালিয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় যেসব দেশ নিয়মিত এ ধরনের পরীক্ষা চালাত, সেসব বিস্ফোরণের পরিবেশগত ক্ষতি ছিল ভয়াবহ।

ট্রাম্প এখনো পরিষ্কার করে বলেননি, তিনি যে পরীক্ষার কথা বলেছেন, তা কি বিস্ফোরণভিত্তিক পারমাণবিক পরীক্ষা, নাকি পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা। পরের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষা করবে, বিস্ফোরণ লাগবে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, যে কোনো দেশের পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা শুরু করলে তা অন্যদেরও একই পথে ঠেলে দেবে। এতে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে। জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক আন্দ্রে বাকলিৎস্কি বলেন, ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া আসলে ‘কর্ম-প্রতিকর্ম চক্রেরই’ উদাহরণ, যা নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ডেকে আনতে পারে। তিনি এক্সে পোস্ট করে লেখেন, ‘কেউই এটা চায় না, কিন্তু হয়তো শেষ পর্যন্ত আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের আরও এক শহর দখল করবে রাশিয়া: কমান্ডার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ আক্রমণের পর ভগ্নদশায় পতিত ইউক্রেনের কুপিয়ানস্ক শহরের একাংশ। রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী ও এক কুকুর। ছবিটি ২০২৩ সালের প্রথম দিকে তোলা। ছবি: সংগৃহীত
রুশ আক্রমণের পর ভগ্নদশায় পতিত ইউক্রেনের কুপিয়ানস্ক শহরের একাংশ। রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী ও এক কুকুর। ছবিটি ২০২৩ সালের প্রথম দিকে তোলা। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সেনারা আশা করছে, তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহর সম্পূর্ণ দখল করতে পারবে। শহরটি দখলে অভিযান চালানো ইউনিটের কমান্ডার এমন তথ্য দিয়েছেন। তবে কিয়েভ এখনো জায়গায় পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করছে না। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুপিয়ানস্কের কাছে ঘেরাও হওয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবস্থার অবনতি দ্রুত ঘটছে। রুশ সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া, এখান থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের পালানোর আর কোনো পথ নেই।

রুশ সেনাবাহিনীর ৬৮ তম মোটরাইজড রাইফেল ডিভিশনের ১২১ তম রেজিমেন্টের কমান্ডার, যার কল সাইন লাভরিক—বলেছেন, তাঁর ইউনিট কেবল বুধবারই শহরে ২৫টি ভবন ক্লিয়ার করেছে এবং ‘অগ্রগতি অব্যাহত।’ তিনি এক ভিডিওতে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শহর সম্পূর্ণ মুক্ত হবে। আমাদের মনোবল খুবই ভালো, এবং আমরা আমাদের মিশন সফল করব।’

গত মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছিলেন, খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক এবং দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের ক্রাসনোআর্মেইস্ক শহর রুশ সেনারা ঘেরাও করেছে। তিনি ঘেরাও হওয়া সৈন্যদের সম্মানজনকভাবে আত্মসমর্পণ করতে অনুরোধ করেছিলেন।

মস্কোর হিসাব অনুযায়ী, দুই শহরে ১০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা আটকা পড়েছে। কিয়েভ এখনো জানায়নি যে, তারা শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে এবং রাশিয়ান সেনারা পিছিয়ে পড়ছে। তবে জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড মঙ্গলবার জানিয়েছে, ‘ভেতরের বিশ্লেষণ অন্য গল্প বলছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা ও সেনা কমান্ডার জানিয়েছেন, ‘গুরুতর পরাজয়ের’ আশঙ্কা বাড়ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগে দাবি করেছিলেন, কুপিয়ানস্কের কাছে রাশিয়ান সেনার উপস্থিতি মাত্র ৬০ জন এবং ইউক্রেনীয় সেনারা ওই এলাকায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, জেলেনস্কি ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।’ তারা জানিয়েছে, ‘কিয়েভ রেজিমের প্রধান বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ইউক্রেনীয় (সশস্ত্র বাহিনী প্রধান আলেকজান্দর) সিরস্কির ভুল রিপোর্ট শোনার পর, তার কাছে মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেই।’

কুপিয়ানস্ক উত্তর–পূর্ব রণাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাব হিসেবে বিবেচিত। রাশিয়ার সেনারা আগে শহরের আংশিক নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছিল। সেপ্টেম্বরে তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল, যেখানে শহরের কেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, স্টেডিয়াম এবং টিভি টাওয়ারের কাছে তাদের সেনাদের দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কে ইতিহাস: পাঁচ নারী নিয়ে মেয়র মামদানির প্রশাসনের সূচনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাঁচ নারী সদস্য নিয়ে নতুন প্রশাসন গঠনের কাজ শুরু করেছেন জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
পাঁচ নারী সদস্য নিয়ে নতুন প্রশাসন গঠনের কাজ শুরু করেছেন জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বুধবার ঘোষণা করেছেন, তিনি তাঁর প্রশাসন গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নতুন প্রশাসন গঠনে যে ট্রানজিশন টিম গঠন করা হয়েছে, তাতে পাঁচজনই নারী। আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই কাজ শুরু করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠবে এক দক্ষ ও সহানুভূতিশীল সিটি হল, যা এই প্রচারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ৩৪ বছর বয়সী এই নবনির্বাচিত মেয়র কুইন্সে সংবাদ সম্মেলনে পুরোপুরি নারী নেতৃত্বে গঠিত ট্রানজিশন টিম ঘোষণা করেন। এই টিমের নির্বাহী পরিচালক ইলানা লিওপোল্ড। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকছেন সাবেক ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র মারিয়া তোরেস-স্প্রিংগার, ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান লিনা খান, ইউনাইটেড ওয়ের প্রেসিডেন্ট ও সিইও গ্রেস বোনিলা এবং সাবেক ডেপুটি মেয়র ফর হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস মেলানি হার্টজগ।

লিনা খানকে দলে নেওয়া মামদানির প্রশাসনে সংস্কারক নীতি প্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়। জো বাইডেনের সময় এফটিসিতে আক্রমণাত্মক অ্যান্টি–ট্রাস্ট পদক্ষেপের জন্য খান জাতীয়ভাবে পরিচিত হন এবং প্রগতিশীল ও রক্ষণশীল উভয় মহলে প্রশংসিত।

অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করার পর প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, ‘এই শহর আমাদের প্রস্তুত দেখতে চায়। আমাদের হাতে আছে ৫৭ দিন—এটাই কাজ শুরু করার সময়।’ তাঁর জয় নিউইয়র্কের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়—প্রথম মুসলিম মেয়র, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এবং শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র।

তবে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হুমকি দিয়েছেন, মামদানি দায়িত্ব নিলে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করবেন। ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘যদি মামদানি জয়ী হন, নিউইয়র্কে আমি আইনে বাধ্য না হলে ফেডারেল ফান্ড দেব না।’ প্রায়ই তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দেন।

২০২৬ অর্থবছরে নিউইয়র্কের বাজেটে ফেডারেল তহবিল প্রায় ৭৪০ কোটি ডলার, যা মোট ব্যয়ের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। নির্বাচনের দিন ট্রাম্প আরও উসকানিমূলক পোস্টে লেখেন, ‘কোনো ইহুদি যদি জোহরান মামদানিকে ভোট দেয়, সে নির্বোধ।’ যদিও মামদানি বহুবার ইহুদিবিদ্বেষের নিন্দা করেছেন।

প্রচারণাজুড়ে তাঁকে ঘিরে চলেছে তীব্র ইসলামবিদ্বেষী হামলা। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র‍্যান্ডি ফাইন ও অ্যান্ডি ওগলস বিচার বিভাগকে আহ্বান জানান মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করতে। টেক্সাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান চিপ রয় নির্বাচনের আগে লেখেন, মামদানি ‘আধুনিক ডেমোক্র্যাট দলের প্রতীক’ এবং তাঁর নেতৃত্বে ‘একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ ঘটছে।

সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে তুলনায় অক্টোবরে মামদানিকে নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী পোস্ট বেড়েছে ৪৫০ শতাংশ। এক মাসে ১৭ হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৬ হাজার পোস্ট হয়েছে, যা ৭৩ লাখের বেশি লাইক পেয়েছে।

তবে মামদানি আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা গত এক বছর যে নীতিগুলোর কথা বলেছি, আমি নিশ্চিত সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব। রাজনীতি যাই হোক, নিউইয়র্কবাসীর সমস্যা একটাই—আমরা সবাই একই সংকটে ভুগছি।’

মামদানির প্রগতিশীল নীতিগুলোর মধ্যে আছে অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া স্থির করা, বাসে বিনা মূল্যে যাতায়াত, সর্বজনীন শিশুসেবা, শহর পরিচালিত মুদি দোকান ও ধনীদের ওপর বাড়তি কর। তাঁর প্রচার তহবিলে ২০ মিলিয়ন ডলার এসেছে সাধারণ দাতাদের কাছ থেকে, গড়ে প্রতি অনুদান প্রায় ৮০ ডলার।

মামদানির দপ্তর জানিয়েছে, শিগগিরই তাঁরা ডেপুটি মেয়র ও বিভিন্ন দপ্তরের কমিশনারদের নাম ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, ‘কিছু নাম পরিচিত হবে, কিছু নতুন। কিন্তু সবাই এক লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ—পুরোনো সমস্যার নতুন সমাধান।’ মামদানি বলেন, ‘১ জানুয়ারি যখন আমরা নতুন প্রশাসনের শপথ নেব, নিউইয়র্কবাসী তখন শুধু নতুন মেয়র নয়, নতুন এক যুগকেও স্বাগত জানাবে—যেখানে প্রত্যেকে নিজের অংশীদারত্ব অনুভব করবে, আর এই শহরের সাফল্য হবে আমাদের সবার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামদানি সম্মানজনক আচরণ করলে তাঁকে সহায়তা করব: ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মামদানিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে মামদানিকে ‘সম্মানজনক আচরণ’ করতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মামদানিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে মামদানিকে ‘সম্মানজনক আচরণ’ করতে হবে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে সতর্ক করেছেন, সফল হতে হলে মামদানিকে ওয়াশিংটনের প্রতি ‘সম্মানজনক আচরণ’ করতে হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে জোহরান মামদানি প্রথম কোনো মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ইতিহাস গড়ার পর মামদানি যখন তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দলের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছিলেন, তখনই ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।

মামদানি তাঁর বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্পের বিরোধিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘ওটা বিপজ্জনক মন্তব্য।’ ট্রাম্প ফক্স নিউজের ব্রেট বায়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রতি তাঁকে কিছুটা শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তা না হলে সফল হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।’ ওয়াশিংটন বলতে ট্রাম্প মূলত ফেডারেল সরকার এবং তাঁর প্রশাসনকেই বুঝিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই সে সফল হোক। আমি চাই শহরটা সফল হোক।’ এরপর দ্রুত স্পষ্ট করেন, তিনি আসলে নিউইয়র্ক শহরকে সফল দেখতে চান, মামদানিকে নয়। এর আগে, গতকাল বুধবার ট্রাম্প এক ভাষণে বলেন, তাঁর প্রশাসন নতুন মেয়রকে ‘সাহায্য করবে।’ তবে একই বক্তব্যে তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলেও আখ্যা দেন।

ফ্লোরিডার মায়ামিতে আমেরিকান বিজনেস ফোরামের ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘কমিউনিস্ট, মার্কসবাদী আর গ্লোবালিস্টরা তাদের সুযোগ পেয়েছিল। তারা শুধু বিপর্যয় এনেছে। এবার দেখা যাক, নিউইয়র্কে এক কমিউনিস্ট কেমন করে। আমরা দেখব কী হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাঁকে সাহায্য করব, একটু হলেও করব। আমরা চাই নিউইয়র্ক সফল হোক।’

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্প মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছিলেন। তিনি মামদানিকে ‘উন্মাদ কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, যদি মামদানি জেতে, তবে শহরের ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেবেন।

মামদানি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, তিনি কমিউনিস্ট নন, বরং একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল বিনা মূল্যে সর্বজনীন শিশু যত্ন, ফ্রি বাস সার্ভিস এবং সরকারি পরিচালিত মুদি দোকান চালুর প্রতিশ্রুতি। প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের শহর নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মামদানি। তার এই বিজয় সারা দেশে প্রতিধ্বনি তুলেছে। ডেমোক্র্যাট পার্টির মধ্যপন্থী ও প্রগতিশীল অংশের দ্বন্দ্বের মধ্যে এই জয়কে অনেকে জাতীয় রাজনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

বিজয়ী ভাষণে মামদানি তাঁর জয়কে ট্রাম্পকে হারানোর এক উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। টেলিভিশন প্রিয় প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ভলিউমটা বাড়িয়ে দিন।’ বুধবার অগ্রাধিকারের বিষয় তুলে ধরে দেওয়া বক্তৃতায় মামদানি জানান, তিনি ট্রাম্পের বিরোধিতা অব্যাহত রাখবেন, তবে আলোচনার সুযোগও খোলা রাখবেন। মামদানি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কে আমি মুখ বন্ধ রাখব না। তাঁর কর্মকাণ্ড যেমন, আমি তেমনই বলব। তবে সেই সঙ্গে সংলাপের দরজাটাও খোলা রাখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজার প্রশাসন সামলাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, হামাসের সঙ্গে ‘চুক্তি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৪
গাজায় টহলরত হামাসের এক সদস্য। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি
গাজায় টহলরত হামাসের এক সদস্য। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সঙ্গে একটি ‘অস্থায়ী চুক্তিতে’ পৌঁছেছে। এই চুক্তির আওতায় গাজার প্রশাসন সামলাবে রামাল্লায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি অস্থায়ী কমিটি। গত মঙ্গলবার হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এসব কথা বলেন।

মুসা আবু মারজুক বলেন, এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একজন মন্ত্রী। আর এই কমিটি গাজার সীমান্ত পারাপার ও নিরাপত্তা বাহিনী তত্ত্বাবধান করবে। তবে ওয়াশিংটন এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

আবু মারজুক আরও বলেন, তেল আবিব গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দিতে অস্বীকার করছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া পরিকল্পনার বিপরীত। কারণ, সেখানে গাজায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়েছিল।

হামাসের এই নেতা বলেন, ‘এই বিষয়ে এখনো দীর্ঘ আলোচনা প্রয়োজন।’ মারজুক নিশ্চিত করেছেন, আন্তর্জাতিক ওই নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে মারজুক বলেন, ‘গাজার মাটিতে হামাসই কার্যত নিয়ন্ত্রণে আছে। যদি তাদের নিরস্ত্র করা হয়, অন্য গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র হাতে উঠবে। যেমন ইরাকে সেনাবাহিনী বিলুপ্ত হওয়ার পর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, আল কায়েদা আর আইএস উত্থান ঘটায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে স্থিতিশীলতা আসবে না, বরং যুদ্ধবিরতি বা অন্য কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন আরও কঠিন হবে। গাজায় কোনো শূন্যতা নেই, যেকোনো বিকল্প বাহিনী অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের দ্বারা গঠিত ও তাদের সম্মতিতে হতে হবে, যাতে কোনো অভ্যন্তরীণ সংঘাত না হয়।’

এর আগে হামাস ও পিএ-এর ফাতাহ দল মিসরে বৈঠক করে কিছু প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছিল। তবে সেসব চুক্তি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অন্তত দুই বছর মেয়াদি ‘প্রশাসন’ পরিচালনার প্রস্তাব রয়েছে, যা পরে বাড়ানো যেতে পারে।

ওয়াশিংটনের খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, পিএ কেবল তখনই গাজার প্রশাসন নিতে পারবে, যখন তারা ‘সংস্কার কর্মসূচি সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করবে’ এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘বোর্ড অব পিস’ থেকে ‘চূড়ান্ত অনুমোদন’ পাবে।

তবে কিছু আরব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার কয়েকটি অংশ প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করা এবং হামাসকে অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য করার শর্ত। পশ্চিমা কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে আই ২৪ নিউজ জানিয়েছে, আরব দেশগুলো এই ধারা মেনে নিতে রাজি নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত