Ajker Patrika

দক্ষিণ কোরিয়ায় আন্দোলনে অগ্রভাবে ছিলেন নারীরা, তাঁরাই এখন রাজনীতিতে অদৃশ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৯: ১১
ইউনবিরোধী আন্দোলনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ছবি: আন্দোলনকারী লি জিনহা
ইউনবিরোধী আন্দোলনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ছবি: আন্দোলনকারী লি জিনহা

৩ ডিসেম্বর রাত। ভিডিও গেম খেলছিলেন আন বিয়ংহুই। হঠাৎ খবর পেলেন দেশে সামরিক আইন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। কিন্তু ইন্টারনেটে ঢুকতেই দেখেন হাজার হাজার পোস্ট। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের হঠাৎ ঘোষণা, সংসদ ভবনের জানালায় সৈন্যদের লাথি ও সংসদ সদস্যদের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করার সেই বিখ্যাত দৃশ্য—সবই ততক্ষণে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।

প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাস্তায় নেমে আসেন লাখ লাখ মানুষ, যার একটি বড় অংশ দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণীরা। আন বিয়ংহুইও যোগ দেন ওই বিক্ষোভে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরের বাসিন্দা। কয়েক মাইল হেঁটে পাড়ি দিয়ে রাজধানী সিউলে গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। কেবল ইউনের সামরিক আইন জারির ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই ক্ষুব্ধ নন এই নারীরা, বরং এমন এক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তাঁরা এককাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, যিনি বারবার বলার চেষ্টা করেছেন যে দক্ষিণ কোরিয়ায় কোনো লিঙ্গবৈষম্য নেই। তবে বাস্তবতা কি আসলেই ইউনের বক্তব্যকে সমর্থন করে?

দেশটির নারীদের ভাষ্যমতে ও সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, প্রকৃত চিত্র বরং উল্টো। নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতার ঘটনা বেশ নিয়মিতই। নাটকীয় চার মাস পর যখন ইউন অভিশংসিত হন, তখন আনন্দে ফেটে পড়েন আন্দোলনে অংশ নেওয়া এই নারীরা। কিন্তু ৩ জুন, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যখন দেশে প্রস্তুতি চলছে, তখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেন আবার অদৃশ্য হয়ে পড়েন নারীরা।

নারীদের অভিযোগ, প্রধান দুই প্রার্থীই নারীর সমতার প্রশ্নে নীরব। নারীদের অধিকারের বিষয়ে ২০২২ সালের নির্বাচনে অভিশংসিত ইউনের অবস্থানও একই রকম ছিল। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘অতিরিক্ত নারীবাদী’ এই সমাজে তিনি পুরুষের পক্ষ নেবেন।

এবারের নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থীর বাইরে তৃতীয় আরেক প্রার্থীও মনোযোগ কাড়ছেন। নারীবিরোধী স্পষ্ট অবস্থানের কারণে তিনি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

নতুন এই প্রার্থীর এমন জনপ্রিয়তা দক্ষিণ কোরীয় তরুণীদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে নতুন এক লড়াই হিসেবে। ২৪ বছর বয়সী বিয়ংহুই বলেন, ‘আমরা তো ভেবেছিলাম, ইউন-বিরোধী সমাবেশে গিয়ে আমরা পৃথিবীকে একটু হলেও বদলাতে পেরেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কিছুই বদলায়নি, নারীর কণ্ঠরোধের চেষ্টাই অব্যাহত।’

ইউনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন যে নারীরা

বিয়ংহুই যখন সিউলের জনস্রোতে পৌঁছান, চারপাশের দৃশ্য তাঁকে স্তব্ধ করে দেয়। হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে হাজারো নারী রাস্তায় নামেন—হুডি জ্যাকেট গায়ে চেপে হাতে লাইটস্টিক আর ব্যানার নিয়ে জোর গলায় স্লোগান দেন তাঁরা। তাঁদের কণ্ঠে ছিল একটাই দাবি—প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের পদত্যাগ।

বিয়ংহুই বলেন, ‘আমার চারপাশে নানা বয়সের নারীরা ছিলেন। কিন্তু বয়স যা-ই হোক, সবার মধ্যে যেন তারুণ্য ভর করেছিল। আমরা গার্লস জেনারেশনের “ইনটু দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড” গাইছিলাম।’ ২০০৭ সালের এই গান একসময়কার আরেক প্রেসিডেন্ট-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক ছিল, সেই ঐতিহ্য টেনেই এবার তা হয়ে উঠেছিল ইউন-বিরোধী ক্ষোভের কণ্ঠস্বর।

নারীদের অংশগ্রহণের নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম চোসুন ডেইলির এক অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্দোলনকারীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ছিলেন ২০-৩০ বছর বয়সী নারী। বিবিসি কোরিয়ানের আরেক বিশ্লেষণ বলছে, ডিসেম্বরে একটি বিক্ষোভে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী ছিলেন ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী—প্রায় ২ লাখ, যা মোট জমায়েতের ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে ওই আন্দোলনে একই বয়সের পুরুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।

এই বিক্ষোভ ছিল এক দীর্ঘদিনের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ—একটি সমাজে যেখানে নারীরা বছরের পর বছর ধরে বৈষম্য, হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছে, তারই ফল ছিল ওই বিক্ষোভ। ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াতেই লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য সর্বোচ্চ—৩১ শতাংশ। এর পাশাপাশি দেশটিতে ক্রমশ জন্মহার কমে যাওয়ার জন্যও দায়ী করা হচ্ছে নারীদের। রাষ্ট্র ও সমাজ একযোগে তাঁদের ঘাড়ে চাপিয়েছে বিয়ের বাধ্যবাধকতা এবং সন্তান ধারণের দায়িত্ব। পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য রাজনীতিকদের পক্ষ থেকেও অব্যাহত চাপ রয়েছে।

২৩ বছর বয়সী কিম সায়েয়ন বলেন, ‘আমার জমে থাকা সব হতাশা যেন সেদিন ফেটে বেরিয়ে এসেছিল। অনেকে এসেছিলেন শুধু তাঁদের ক্ষোভ জানাতেই।’ ২৬ বছর বয়সী লি জিনহা নিয়ম করে প্রতিবাদে যেতেন। তিনি বলেন, ‘ভীষণ ঠান্ডা, বিশাল ভিড়, পায়ে ব্যথা, কাজের চাপ—সব সত্ত্বেও আমি যেতাম। কারণ মনে হতো, এটা আমার দায়িত্ব।’

ইওহা উইমেন্স ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গো মিন-হির মতে, ইউন সুক-ইওলের ‘নারীবিরোধী’ ভাবমূর্তি নতুন কিছু নয়। সুক-ইওল স্পষ্ট করে বলেছিলেন—তরুণীদের জন্য তাঁর কোনো বিশেষ নীতি নেই। অন্যদিকে ইউনের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন বহু তরুণ। তাঁদের কাছে ইউন ছিলেন এক ‘রক্ষাকর্তা’, যিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে তাঁদের হতাশা আর ক্ষোভের রাজনৈতিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এই তরুণদের ভাষ্য—তাঁরা ‘বিপরীত বৈষম্যের শিকার’। তাঁরা নারীবাদীদের ‘পুরুষবিদ্বেষী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নারীবিদ্বেষ ছড়াচ্ছিল। আর প্রেসিডেন্ট ইউনের আমলে অনলাইনে নারীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের বিদ্বেষ একধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘নারীর অধিকারে অতিরিক্ত মনোযোগী’ জেন্ডার ইকুইটি মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করা হবে। তাঁর দাবি ছিল, দক্ষিণ কোরিয়ায় কাঠামোগত লিঙ্গবৈষম্য বলে কিছু নেই—যদিও বাস্তবতা বলছে, লিঙ্গসমতা সূচকে দেশটির অবস্থান উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে।

২০২১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরীয় পুরুষদের ৭৯ শতাংশই মনে করে, তারা তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে ‘গভীর বৈষম্যের শিকার’। কোরিয়ান উইমেনস অ্যান্ড পলিটিকস সেন্টারের পরিচালক কিম ইউন-জু বলেন, ইউনের দল সচেতনভাবেই লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনকে রাজনৈতিক কৌশল বানিয়েছিল। ইউনের শাসনকালে ‘নারী’ শব্দটি ছাঁটাই করা হয়েছে বহু সরকারি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে। তরুণীদের চোখে এটি ছিল অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়ার শামিল। আর এ কারণেই ইউনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল নারীদের।

বিয়ংহুই বলেন, দেগুতে তাঁর দেখা বিক্ষোভগুলোতে নারীর উপস্থিতিই ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি অভিযোগ করেন, আন্দোলনের সময় পুরুষেরা নারীদের গালি দিয়ে যেতেন। তিনি বলেন, তরুণদের আচরণ কেমন ছিল? তাঁরা গাড়ি চালিয়ে এসে গালি দিতেন, গা ঘেঁষে হুমকি দিয়ে যেতেন। বিক্ষোভটা যদি তরুণদের দ্বারা পরিচালিত হতো, তবে কি এমন হতো?’—প্রশ্ন করেন বিয়ংহুই।

ভোটের মাঠে নারীদের কণ্ঠ অনুপস্থিত

ইউনের পতনের পর তাঁর দল পিপল পাওয়ার পার্টি চরম বিশৃঙ্খলায় পড়ে। এবারের নির্বাচনে ১৮ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নেই। গত নির্বাচনে অন্তত ১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজন ছিলেন নারী।

প্রধান বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিপি) লি জে-মিয়ং এগিয়ে থাকলেও নারীদের প্রতি তাঁর অবস্থান খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। সায়েন নামের এক তরুণী বলেন, ‘তাঁদের নীতিতে শুরুতে নারী ইস্যু খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। পরে এসে কিছু কিছু পরিবর্তন এনেছেন তাঁরা। কাঠামোগত বৈষম্য দূর করতে বাস্তবসম্মত কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হোক, সেটাই আমাদের চাওয়া।’

নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে লি বলেছিলেন, নারী-পুরুষ কেন ভাগ করছেন? সবাই তো কোরীয়। পরে সমালোচনার মুখে দল স্বীকার করে—নারীরা কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার। এরপর তারা প্রতিশ্রুতি দেয়—সমতার জন্য বাজেট বাড়াবে।

২০২২ সালে লি ছিলেন নারীদের পক্ষে সরব; দলের অভ্যন্তরে যৌন হয়রানির ঘটনায় কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নারী নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারে অনেকটাই চুপ তিনি। অধ্যাপক ইওহা উইমেন্স ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গো মিন-হি বলেন, লি এবার ভোট হারাতে চান না, তাই তিনি সবাইকে খুশি রাখতে চাচ্ছেন। নারীবাদ এখন ভোটে জেতার কৌশল নয়।

এই অবস্থায় তরুণীরা বঞ্চিতবোধ করছেন। সায়েন বলেন, ‘আমরা এত বড় আন্দোলন করলাম, অথচ আমাদের কণ্ঠ প্রতিফলিত হচ্ছে না।’

ভবিষ্যতের শঙ্কা ও প্রতিরোধ

ইউনের সাবেক শ্রমমন্ত্রী কিম মুন-সু জন্মহার বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনার ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তরুণ নারীদের বক্তব্য—সমস্যা শুধু অর্থ নয়, বরং কর্মজীবন ও পরিবার সামলানোর কাঠামোগত অসাম্যই মূল বাধা, এখনো পুরো সমাজ নারীর বিরুদ্ধে।

এই কারণেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে নারী ও পরিবারবিষয়ক মন্ত্রণালয়—যেটি ইউন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। এখন বিরোধী প্রার্থী লি জে-মিয়ং বলছেন, তিনি এই মন্ত্রণালয় আরও শক্তিশালী করবেন। আর কিম বলছেন, এটা বাদ দিয়ে ‘ভবিষ্যৎ যুব ও পরিবার মন্ত্রণালয়’ গঠন করবেন। এই মন্ত্রণালয়ের বাজেটও খুবই ছোট—সরকারের পুরো বাজেটের মাত্র ০ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে লিঙ্গ সমতার পেছনে খরচ হয় মাত্র ৭ শতাংশ।

অধ্যাপক গো মিন-হি বলেন, মন্ত্রণালয়টি ছোট হলেও এটা একটা বড় বার্তা দেয়। কিন্তু এটি একেবারে তুলে দেওয়ার অর্থ—লিঙ্গসমতা রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বহীন।

আরেক প্রার্থী লি জুন-সক—ইউনের সাবেক দলের নেতা—এই মন্ত্রণালয়ের বিরোধিতা করছেন। এখন তিনি নিজের রিফর্ম পার্টি খুলেছেন। যদিও নির্বাচনে এগিয়ে নেই তাঁর দল, তবে তরুণদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র যিনি খোলাখুলি লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে কথা বলছেন, তিনি ৬১ বছর বয়সী কওন ইয়ং-গুক। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা কম।

বিবিসির প্রতিবেদন অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে সংগীত শিক্ষকের প্রশিক্ষণ পাবেন আরও ১৭ হাজার নারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরব সরকার শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের অংশ হিসেবে বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগীত শিক্ষা চালু করতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সংগীত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে হাজারো শিক্ষককে। বিশেষ করে, কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকদের।

সৌদি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২০২২ সালের শেষ দিকে দুই মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মিউজিক কমিশন কর্তৃক পরিচালিত একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল সংগীত শেখানোর দক্ষতা বাড়ানো এবং সংগীত শিক্ষক গড়ে তোলা। প্রথম ধাপে ১২ হাজারেরও বেশি নারী শিক্ষক সরকারি ও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে প্রশিক্ষণ নেন।

এবার শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ধাপ—যেখানে আরও ১৭ হাজার নারী শিক্ষককে সংগীত শিক্ষার পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মূলত একটি ‘সাংস্কৃতিক দক্ষতা উন্নয়ন কৌশলের’ অংশ, যার মাধ্যমে শিশুদের প্রাথমিক বয়স থেকেই সংগীত ও শিল্পের সঙ্গে পরিচিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি সরকার।

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—সংগীত শেখানোর এই উদ্যোগ সৌদি শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যৌথ নীতি অনুসারে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো—সংগীত ও অন্যান্য শিল্পকে ক্রমান্বয়ে বিদ্যালয়ের মূল পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় রিয়াদের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আর্টস কলেজ প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে শিল্পকলার পাশাপাশি সংগীত বিষয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে সেখানে উচ্চশিক্ষার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ২০২০ সালে সৌদি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘মিউজিক কমিশন’ গঠন করা হয়, যার কাজ হলো সংগীত খাতের বিকাশ তদারকি করা, সংগীত শিক্ষায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, তরুণ প্রতিভাদের উৎসাহিত করা এবং সংগীতকে দেশের অর্থনীতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব দ্রুত পরিবর্তনের পথে। দেশে এখন নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে কনসার্ট, সিনেমা প্রদর্শনী, নাট্য উৎসব ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। শিল্প ও বিনোদনের এই উত্থান দেশের সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

সংগীত শিক্ষকদের দায়িত্ব কী হবে

নতুন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা মূলত কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের জন্য সংগীত শিক্ষা পরিচালনা করবেন। তাঁরা গান, তাল-লয়, বাদ্যযন্ত্রের মৌলিক ধারণা এবং স্থানীয় লোকসংগীত শেখাবেন—যাতে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই সংগীত ও শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন শুরু, সকালেই মামদানি ও কুমোর বার্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জোহরান মামদানি ও অ্যান্ড্রু কুমো। ছবি: সংগৃহীত
জোহরান মামদানি ও অ্যান্ড্রু কুমো। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সকাল ৬টা থেকে খোলা হয়েছে ভোটকেন্দ্র, যা খোলা থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত)।

নির্বাচনের আগের রাত থেকেই মেয়র প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারে সরব হয়ে উঠেছেন। নিউইয়র্কের রাজনীতিতে ভিন্নধর্মী প্রচারণার জন্য পরিচিত প্রার্থী জো মামদানি এবং সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো—দুজনই সামাজিক মাধ্যমে ভোটারদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

কুমো এক আন্তরিক বার্তায় ভোটারদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমি আপনাদের ভোট চাই—অভিজ্ঞতার পক্ষে ভোট দিন, পরিবর্তনের জন্য ভোট দিন, জননিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগের পক্ষে ভোট দিন। নিউইয়র্ক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরী, আসুন আমরা একসঙ্গে তাকে আবার উজ্জ্বল করে তুলি।’

অন্যদিকে মামদানি প্রচারে ভিন্নধর্মী পথ বেছে নিয়েছেন। নিজের যোগ্যতার কথা না বলে তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি সৃজনশীল ভিডিও পোস্ট করেছেন—যেখানে একটি ফুল ফুটে উঠছে, আর সেই ফুলের ভেতর থেকে তার মুখ ভেসে উঠছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল—‘ভোটকেন্দ্র এখন খোলা।’ সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ভোটকেন্দ্রের অবস্থান জানার লিংক।

এই ভিন্ন প্রচারণা তাঁদের দুজনের রাজনৈতিক দর্শন ও প্রচার কৌশলের পার্থক্যকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। কুমো যেখানে অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তাকে সামনে আনছেন, মামদানি সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণে জোর দিচ্ছেন।

এই নির্বাচনের রিপাবলিকান মনোনীত অপর প্রার্থী হলেন কার্টিস স্লিউয়া। তিনি ১৯৭৯ সালে ’গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী অপরাধ দমনকারী সংগঠনের নেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এই সংগঠনটি নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে ব্যবস্থায় টহল দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়।

এদিকে নির্বাচনের দিন শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের এই মহানগর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল এবং ঘনবসতিপূর্ণ শহর। ম্যানহাটন, ব্রুকলিন, কুইন্স, দ্য ব্রঙ্কস ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ড—এই এলাকাগুলো মিলেই নিউইয়র্ক সিটি গঠিত।

মঙ্গলবার চূড়ান্ত ভোট অনুষ্ঠিত হলেও এই নির্বাচনের প্রাথমিক ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল গত ২৫ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২ নভেম্বর। মঙ্গলবারের ভোটের ফলই নির্ধারণ করতে যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই শহরের নেতৃত্ব কে দেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পৃথিবীকে রক্ষা করেছেন যিশু, মাতা মেরি নন: ভ্যাটিকান সিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পোপ লিও। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
পোপ লিও। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

খ্রিষ্টানদের একমাত্র ত্রাণকর্তা যিশু—কুমারী মেরি এতে কোনো ভূমিকা রাখেননি বলে ঘোষণা দিয়েছে ভ্যাটিকান সিটি। পোপ লিওর অনুমোদনে প্রকাশিত এক নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানের উচিত নয় মাতা মেরিকে ‘সহমুক্তিদাতা’ (co-redeemer) বলে সম্বোধন করা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার ভ্যাটিকানের ‘শীর্ষ মতবাদ দপ্তর’ পোপ লিওর সম্মতিতে এ ডিক্রি বা নির্দেশনা জারি করে।

প্রসঙ্গত, ভ্যাটিকানের শীর্ষ মতবাদ দপ্তর হলো ধর্মীয় মতবাদের ‘ডিকাস্ট্রি’। এই ‘ডিকাস্ট্রি’ (Dicastery) ভ্যাটিকান সিটির একটি প্রশাসনিক বিভাগ, যা রোমান ক্যাথলিক চার্চের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মূলত একটি মন্ত্রণালয়ের মতো কাজ করে, যা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় যেমন—ধর্মীয় সংলাপ, মানব উন্নয়ন বা যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো পরিচালনা ও দেখাশোনা করে।

আজ পোপ লিওর নির্দেশনায় বলা হয়, মাতা মেরির জন্য এই উপাধি ব্যবহার উপযুক্ত নয়...এটি খ্রিষ্টান বিশ্বাসের মূল সত্যগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি ও ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।

ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশু তাঁর ক্রুশবিদ্ধ হওয়া ও মৃত্যুর মাধ্যমে মানবজাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক ছিল—মাতা মেরি যিশুর এই মুক্তির কাজে কোনোভাবে অংশ নিয়েছিলেন কি না।

এই প্রশ্নে চার্চের ভেতরে দীর্ঘদিন মতবিরোধ ছিল। সর্বশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে ভ্যাটিকান আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল—যিশুই বিশ্বের একমাত্র ত্রাণকর্তা।

প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস মেরিকে ‘সহমুক্তিদাতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, মাতা মেরি কখনোই তাঁর ছেলের কাছ থেকে নিজের জন্য কিছু নিতে চাননি। এ ধারণা একেবারেই নির্বুদ্ধিতা।

পোপ ফ্রান্সিসের পূর্বসূরি পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শও একই অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে জন পল দ্বিতীয় প্রথম দিকে এই উপাধিকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি মতবাদ দপ্তর ‘সংশয়’ প্রকাশ করার পর তিনি প্রকাশ্যে এই উপাধি ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন।

ভ্যাটিকানের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যিশুর মা হিসেবে মেরির ভূমিকা বিশেষ, তবে তিনি ত্রাণকর্ত্রী নন—বরং ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে এক মধ্যস্থতাকারী। নির্দেশনায় বলা হয়, মেরি যিশুর জন্ম দিয়ে ‘মানবজাতির প্রতীক্ষিত মুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন’।

বাইবেল অনুসারে, দেবদূত যখন মেরিকে জানান যে, তিনি গর্ভবতী হতে চলেছেন, মেরির উত্তর ছিল—‘তা-ই হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারত এখন বৈশ্বিক পরাশক্তি: ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার। ছবি: সংগৃহীত

ভারতকে একটি ‘বৈশ্বিক পরাশক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার। তিনি বলেছেন, ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ‘অধিক দৃঢ়’। আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিরক্ষা, উদ্ভাবন, বাণিজ্য থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার মতো নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত।

সম্প্রতি, ভারত সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর এনডিটিভিকে দেওয়া একমাত্র সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ভারতের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ভুলব না—ওই ভয়াবহ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই ছিলেন প্রথম বিশ্বনেতা, যিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন করেছিলেন। ভারত আমাদের পাশে ছিল এবং আমরা তা স্মরণে রাখব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছি। ভারতের বন্ধুত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’ তিনি জানান, দুই দেশ শিগগিরই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা-বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

গাজা ইস্যুতে শান্তি আলোচনার স্থবিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে একমাত্র বাস্তব কাঠামো হিসেবে ধরে রাখা। এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য ও বাস্তবসম্মত একটি পরিকল্পনা। বিশ্বের অনেক দেশ যখন এই পরিকল্পনা থেকে সরে যেতে চাইছে, তখন ভারত বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রসঙ্গে সার বলেন, ‘বর্তমানে এমন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব নয়, যা আমাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।’ তিনি দাবি করেন, মধ্যপ্রাচ্যে এখনো গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ সক্রিয়।

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা বলছে না যে অবশ্যই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র থাকতে হবে—এই বিষয়টি পরিস্থিতি-নির্ভর। অতীতের ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি এবং তার পুনরাবৃত্তি করব না।’

হামাস প্রসঙ্গে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হামাসের সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজায় তাদের শাসনের অবসান ঘটানো। হামাস আজও প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রকাশ্যে হত্যা করে ভয় ছড়াচ্ছে। আমরা চাই গাজায় অন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠুক—যাতে এই সন্ত্রাসী শাসনের চিরতরে ইতি টানা যায়।’

গিডিওন সার বলেন, ভারত ও ইসরায়েল ‘একই রকম বেদনা ও অভিজ্ঞতা’ বহন করে। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ এখন সর্বত্র। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের মানুষও এর ভয়াবহতা জানে। আমরা লস্কর-ই-তাইয়েবার মতো সংগঠনকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছি এবং গোয়েন্দা, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে পরস্পরকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছি।’

ইসরায়েলি মন্ত্রী আরও জানান, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিনিময়ের নতুন কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা উভয়ের মধ্যে ‘বাস্তব কৌশলগত অংশীদারত্ব’ প্রতিফলিত করছে।

অর্থনীতি ও যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গিডিওন সার বলেন, ‘ইসরায়েল “ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর” পুনরায় সক্রিয় করতে প্রস্তুত। যুদ্ধের কারণে প্রকল্পটি কিছুদিন স্থগিত ছিল, তবে আমরা আবার এটি এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’

হাইফা বন্দরে আদানি গ্রুপের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের পারস্পরিক আস্থার প্রতীক। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশ ও এখানে হওয়া বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেয়। আমরা আদানির বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই—এটি দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর মাধ্যমে পর্যটন, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে নতুন গতি আসবে।

সাক্ষাৎকারের শেষ অংশে গিডিওন সার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করছে। তাদের আলোচনা সব সময় খোলামেলা ও কৌশলগত বিষয়কেন্দ্রিক। আমি আশা করি, তাঁরা শিগগিরই সাক্ষাৎ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত