Ajker Patrika

ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা পাকিস্তানের সঙ্গে হলেও ভারতের টার্গেটে চীন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০ আগস্ট ওডিশার পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরের পাশে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ‘অগ্নি-৫’-এর সফল পরীক্ষা চালায় ভারত। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০ আগস্ট ওডিশার পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরের পাশে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ‘অগ্নি-৫’-এর সফল পরীক্ষা চালায় ভারত। ছবি: এপির সৌজন্যে

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে। ২০ আগস্ট ভারত মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘অগ্নি-৫’-এর সফল পরীক্ষা চালায়। ওডিশার পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরের পাশে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।

সংস্কৃত ‘অগ্নি’ শব্দের অর্থ আগুন। ১৭ দশমিক ৫ মিটার লম্বা অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন ৫০ হাজার কিলোগ্রাম (কেজি)। এটি ১ হাজার কেজির বেশি ওজনের পারমাণবিক বা প্রচলিত পেলোড বহন করতে সক্ষম। এর পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি এবং গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার, যা এটিকে বিশ্বের দ্রুততম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তান নতুন একটি আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের ঘোষণা দেয়। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চার দিনের সংঘাতের সময় ভারতের হাতে তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর পাকিস্তান এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

তবে অনেকে বলছেন, ভারতের এ সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি পাকিস্তানের জন্য যতটা না বার্তা, তারচেয়ে বেশি চীনের জন্য। অগ্নির পাল্লায় চীনের উত্তরাঞ্চলসহ এশিয়ার বেশির ভাগ এলাকা ও ইউরোপের কিছু অংশও চলে আসে। এটি ২০১২ সাল থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্রের দশম পরীক্ষা এবং গত বছরের মার্চের পর প্রথম পরীক্ষা। বিশ্লেষকদের মতে, এ পরীক্ষার সময়টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি এমন এক সময় করা হয়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে।

যদিও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের এ পরিবর্তন হয়েছে, তবে ভারত এখনো চীনকে তার প্রধান হুমকি হিসেবে দেখে। নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর এয়ার পাওয়ার স্টাডিজের বিশিষ্ট ফেলো মনপ্রীত শেঠি আল-জাজিরাকে বলেন, চীনের হুমকির কারণে ভারতের একটি দূরপাল্লার, কিন্তু আন্তমহাদেশীয় নয় এমন ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে। অগ্নি-৫ ঠিক এমন একটি পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারত চীনের বিরুদ্ধে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধ সক্ষমতা হিসেবে তৈরি করছে। এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই।

১৪ আগস্ট ইসলামাবাদে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ফাতাহ-৪ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে পাকিস্তান। ছবি: এপির সৌজন্যে
১৪ আগস্ট ইসলামাবাদে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ফাতাহ-৪ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে পাকিস্তান। ছবি: এপির সৌজন্যে

অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্লারিও এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, যদিও অগ্নি-৫ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো চীনের ওপর আঘাত করা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার বাড়িয়ে চলেছে। আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) ঘোষণার আগে পাকিস্তান ফাতাহ-৪ নামের একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে, যার পাল্লা ৭৫০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ভারত অগ্নি-৬-এর ওপর কাজ করছে, যার পাল্লা ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এতে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে স্বাধীনভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা (এমআইআরভি) থাকবে।

পাকিস্তানের সবচেয়ে দূরপাল্লার অপারেশনাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো শাহিন-৩, যার পাল্লা ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার। তবে পাকিস্তানের আবাবিল ক্ষেপণাস্ত্রের এমআইআরভি সক্ষমতা থাকলেও এর পাল্লা মাত্র ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ভারতের দুটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ রয়েছে এবং আরও দুটি নির্মাণাধীন রয়েছে, যা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণেও সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ভারতের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তিকে স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে না। কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক অ্যাশলি জে টেলিস বলেন, পাকিস্তান তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, যাতে তারা ভারত ছাড়াও ইসরায়েল এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকেও তাদের পাল্লার মধ্যে আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে ‘অস্থিতিশীল’ হিসেবে দেখা হয়, কারণ, শুরুর দিকে তাদের মধ্যে ‘পশ্চিমাবিরোধী’ মনোভাব ছিল। বিশেষ করে, ৯/১১ ও অ্যাবোটাবাদ অভিযানের (২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে ধরা) পর এটি একটি নির্দিষ্ট মার্কিনবিরোধী রূপ ধারণ করে।

অন্যদিকে মার্কিন ও ইউরোপীয় শক্তিগুলো ভারতকে ‘নিরাপত্তা প্রদানকারী’ হিসেবে দেখছে এবং উৎসাহিত করছে। ২০০৮ সালে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ (এনএসজি) থেকে ছাড় পাওয়ার মাধ্যমে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ (এনপিটি) চুক্তিতে স্বাক্ষর না করেও বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক বাণিজ্য করছে। এ বিশেষ মর্যাদা বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থানকে আরও উন্নত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ডিবি হেফাজতে ১৫ জন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

পুলিশের ওপর ৪ দফা হামলা, গাজীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নিল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত