Ajker Patrika

দ. এশিয়া কি জেন-জির অভ্যুত্থানের উর্বর ক্ষেত্র

  • ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সরকার পতন হয় শ্রীলঙ্কার।
  • এরপর চার বছরে তিন দেশের সরকার পতন হয়েছে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ২৭
নেপালের বিক্ষোভের একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত
নেপালের বিক্ষোভের একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

লোহার ফটক থেকে ড্রামের শব্দ ভেসে আসছে। হাজারো মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে ফেলছে। সুসজ্জিত ভবনে ঢুকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ভেঙে ফেলছে ভবনের জানালা, শিল্পকর্ম। অনেকেই সেখান থেকে দামি জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। এই সুসজ্জিত ভবনে থাকা দামি জিনিসপত্র, শিল্পকর্ম সবই ছিল কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রতীক। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অল্প কিছুদিনের জন্য সবকিছু জনসাধারণের হয়ে গিয়েছিল।

এই চিত্র গত সপ্তাহের নেপালের। ২০২২ সালের এমন চিত্র দেখা গিয়েছিল শ্রীলঙ্কায় এবং গত বছর বাংলাদেশে। এই দেশগুলোয় তরুণদের আন্দোলনে সরকার পতন হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় চার বছরে তিন দেশের সরকার পতন হলো। এখন একটি প্রশ্ন বড় আকারে এসে হাজির হয়েছে, তাহলে কি দক্ষিণ এশিয়া জেন-জির অভ্যুত্থানের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।

এ প্রসঙ্গে আল জাজিরার সঙ্গে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক পল স্ট্যানিল্যান্ডের। তাঁর মতে, এটা অবশ্যই খুবই আশ্চর্যজনক। নতুন ধরনের অস্থিরতার রাজনীতি চলছে এই অঞ্চলে।

গত বৃহস্পতিবার নতুন একটি ঘটনা ঘটে গেল নেপালে। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। তবে কোনো কাগুজে ব্যালটে নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কারকিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার তরুণ এই ভোটে অংশ নেন।

নেপালের সরকার পতনের আন্দোলন হয়েছে মাত্র তিন দিন। এই আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল, দশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি তরুণদের দাবি নিয়ে উপহাস করেছিলেন।

পল স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটি নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। এই অঞ্চলে বিভিন্ন সময় বড় বড় আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু সরকার পতন হয়নি খুব একটা। এখন চিত্র বদলে গেছে।

নেপাল, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কা—প্রতিটি দেশে আন্দোলনের কারণ ছিল ভিন্ন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই তিন দেশেই তরুণেরা মিথ্যা আশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাননি।

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জেরে তরুণেরা বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু মূল কারণ আসলে বৈষম্য, দুর্নীতি এবং সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের স্বজনপ্রীতি। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিলেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে মাঠে নেমেছিল পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী। শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এসব সংকটের জেরে বিক্ষোভ, এরপর সরকার পতন।

এই তিন দেশের আন্দোলন খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তাঁর মতে, এই দেশগুলোয় দুর্নীতি, আর্থসামাজিক বৈষম্য যে চরমে গিয়ে ঠেকেছিল তার দিকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নজর দেয়নি। তরুণেরা যে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল সেটাও উপেক্ষা করছিলেন নেতারা। অন্যদিকে যাঁরা এই তিন দেশে সরকারপ্রধান ছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৭০ বছরের ওপরে। মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, নেতাদের সঙ্গে তরুণদের কোনো ধরনের যোগাযোগ তৈরি হয়নি। তরুণদের সঙ্গে রাজনীতিবিদ ও তাঁদের সন্তানদের জীবনযাপনের যে বৈষম্য, সেটাও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই বৈষম্য ছিল অনেক বেশি। এ কারণে তরুণেরা স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক পল স্ট্যানিল্যান্ডের মতে, এই তিন দেশের আন্দোলনে একটি মিল হলো, তরুণেরা আরও ভালো রাজনীতিক চায়, ভালো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চায়। তারা যে জীবন কল্পনা করে এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল চায়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই তিন দেশেই তরুণেরা একে অপরের কাছ থেকে আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছে, শিক্ষা নিয়েছে। তরুণেরা একে অপরকে দেখে উজ্জীবিত হয়েছে। ফলে এখন আরেকটি প্রশ্ন উঠছে, এরপর কোথায় হবে এমন অভ্যুত্থান?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‎ডিভোর্সের পরও জোর করে রাতযাপন, বর্তমান স্বামীকে নিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে হত্যা ‎

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ‘সন্ত্রাসী খেল’ ফাঁস করে দিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী জইশের সদস্য

নিজের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি কলেজশিক্ষকের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত