Ajker Patrika

আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবান ও পাকিস্তান বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৩
afgansitan pak
afgansitan pak

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দুই দেশের সেনাদের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, যা ইতিমধ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহে আফগান রাজধানী কাবুলে বিমান হামলার পর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় ইরান, কাতার ও সৌদি আরব উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।

শনিবার রাতে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইনায়াতুল্লাহ খোরেজমি এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর ‘বারবার সীমান্ত লঙ্ঘন’ ও ‘আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলার’ জবাবে তালেবান বাহিনী ‘সফল পাল্টা অভিযান’ চালিয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের টুইটার) এক পোস্টে জানান, ‘অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।’

অন্যদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি আফগান বাহিনীর হামলাকে ‘অকারণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘প্রতিটি ইটের জবাব আমরা পাথর দিয়ে দেব।’ এক্সে দেওয়া আরেক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘আফগান বাহিনীর বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকর জবাব দিয়েছে। কোনো উসকানি সহ্য করা হবে না।’

রেডিও পাকিস্তান নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানায়, আফগান বাহিনী সীমান্তের অন্তত ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘জোরালো ও তীব্র পাল্টা হামলা’ চালিয়েছে। রাতে আকাশে গোলাগুলির ঝলকানি দেখা গেছে এমন ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে তারা। তবে সংঘর্ষ শেষ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, আফগান তালেবান সরকার পাকিস্তানি তালেবান যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং এসব হামলার পেছনে ভারতের ‘গোপন সমর্থন’ রয়েছে। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, এসব যোদ্ধা আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। তবে নয়াদিল্লি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে আফগান তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় না।

ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আঞ্চলিক শক্তিগুলো। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—উভয় দেশকে সংযম দেখাতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, দুই দেশের স্থিতিশীলতা গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাতারও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয় দেশকে সংলাপ ও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সংযম অবলম্বন করতে হবে এবং এমনভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে যাতে উত্তেজনা না বাড়ে ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

একইভাবে সৌদি আরবও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাজ্য উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের, সংঘাত না বাড়ানোর এবং সংলাপ ও প্রজ্ঞার পথে চলার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে উত্তেজনা কমে এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজ্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যাবে এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

দুই দেশের সীমান্তে সংঘর্ষের এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকট ও পাকিস্তানের সীমান্ত নীতি নিয়ে পুরোনো অবিশ্বাস এখন আবারও সহিংস রূপ নিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সংযম ও সংলাপ হয়তো সাময়িকভাবে হলেও পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে পারে।

সূত্র: আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিগত সরকারের সমর্থকদের পক্ষে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রায় সব দল: ডিআইজি হাবীব

চীনের বেলুন সহ্য হয়নি, এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কাতারকে বিমানঘাঁটি দিচ্ছেন ট্রাম্প

চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানার পর লাপাত্তা মেজর জেনারেল কবীর, সন্ধানে তৎপরতা জানাল সেনাসদর

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত