Ajker Patrika

নেপালে জেন-জি আন্দোলনের ওপর ব্যর্থ মাও বিপ্লবের ভূতের আছর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অগ্নিসংযোগের পর নেপালের সাবেক মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের বাসভবনের চিত্র। ছবি: সাবিন নিংলেখু
অগ্নিসংযোগের পর নেপালের সাবেক মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের বাসভবনের চিত্র। ছবি: সাবিন নিংলেখু

দীর্ঘ এক দশকের ‘জনযুদ্ধ’ শেষে ২০০৬ সালে কাঠমান্ডুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল মাওবাদীরা। রাজধানীতে প্রবেশের পর এক মাও নেতাকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘এখন আপনার স্বপ্নের শহর কেমন হবে?’ তিনি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ব্যাংককের মতো শপিং মল, পশ্চিমাদের মতো চকচকে সড়ক’। মাওবাদী নেতার সেই কল্পিত শহর বাস্তবায়নে দরকার ছিল সরকারি অর্থনৈতিক প্রকল্পের পাশাপাশি বেসরকারি পুঁজির ব্যাপক বিনিয়োগ।

একজন বিপ্লবীর মুখে এমন কথা ছিল বিদ্রূপাত্মক, কিন্তু স্বপ্নের এই রূপরেখা ছিল একটি কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের উন্মোচন। ২০১৫ সালের ভূমিকম্প-পরবর্তী কাঠমান্ডুতে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে থাকে। বহুতল ভবন, বিলাসবহুল হোটেল, আধুনিক ক্যাফে, অত্যাধুনিক প্রাইভেট হাসপাতাল শহরের চেহারা পাল্টে দেয়। নতুনভাবে গড়ে ওঠা হিলটন হোটেল যেন এর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সেই স্বপ্ন ভেঙে দেয় জেন-জি আন্দোলন। আগুনে ধ্বংস করে দেওয়া হয় হিলটন হোটেলসহ বহু স্থাপনা।

কীভাবে শুরু হলো এই আন্দোলন

কিছু তরুণ-তরুণীর একটি ভাইবার গ্রুপ থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। প্রথমে কবিতা ও সৃজনশীল প্রতিবাদের মাধ্যমেই এই আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বর সরকার ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দিলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ভাইবার গ্রুপের ১৫-২০ জন সদস্য বেড়ে ৩০০ ছাড়িয়ে যায়।

৮ সেপ্টেম্বর হাজারো মানুষ কাঠমান্ডুর মৈতিঘর মণ্ডলা থেকে সংসদ ভবনের উদ্দেশে মিছিল শুরু করে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ‘অদৃশ্য শক্তি’র অনুপ্রবেশ ঘটে; যাদের মধ্যে কেউ কেউ হতে পারে অসন্তুষ্ট রাজনৈতিক কর্মী, জীবিকার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল তরুণ, কিংবা ডানপন্থী রাজতন্ত্রী ও হিন্দুত্ববাদী।

দিন শেষে ৭২ জন নিহত হয়, শত শত আহত। পরদিন কারফিউ অমান্য করে মানুষ আবার রাস্তায় নামে। স্লোগান ওঠে, ‘অলি চোর, দেশ ছাড়’। মুহূর্তেই আগুন জ্বলে ওঠে সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, আইনসভা ভবন, এমপিদের বাড়িঘরে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। ভাইরাল হয়, কংগ্রেস নেতা শের বাহাদুর দেউবা ও তাঁর স্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জু দেউবাকে টেনে বের করার ভিডিও।

রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি ভবনে জেন-জিদের রেখে যাওয়া ছাপ। ছবি: সাবিন নিংলেখু
রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি ভবনে জেন-জিদের রেখে যাওয়া ছাপ। ছবি: সাবিন নিংলেখু

দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতীক হিলটন হোটেল

২০২৫ সালের জুনে সাংবাদিক দিল ভূষণ পাঠকের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তিনি ইউটিউবে টাফ টক নামের একটি শো প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে ভূষণ দাবি করেন, দেউবা পরিবারের ছেলে জয়বীর দেউবা অস্বাভাবিক কম দামে (১৭৭ মিলিয়ন ডলারে) হিলটন হোটেলের শেয়ার কিনেছেন। এ ছাড়া দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায়ও তাঁর ব্যবসা রয়েছে।

এই কেলেঙ্কারি তুলে ধরে ভূষণ দেখিয়েছিলেন, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এক হয়ে জনগণকে কীভাবে জিম্মি করছে। এর পাশাপাশি তাদের সন্তানেরা এই ক্ষমতা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, যা ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদের ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী করবে।

এরপরেই ভূষণের বিরুদ্ধে জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এটি কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক আঁতাতকেই নয়, বরং ক্ষমতাশালীদের হুমকির মুখে পড়লেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কীভাবে পদদলিত করা হয়, সেই প্রবণতাকেও নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। ফলে এই আন্দোলনের স্লোগান হয়ে ওঠে #NepoBaby ও #Corruption। আর হিলটন হোটেল ছিল এই দুয়েরই ফল এবং নিখুঁত লক্ষ্যবস্তু।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, নেপালের অনেক মানুষের মতো সাংবাদিক ভূষণেরও কোনো ধারণা ছিল না যে মাত্র তিন মাস পর জেন-জি আন্দোলন হবে। তাঁরা ভাবতেই পারেননি, হিলটন হোটেল ও অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের মাধ্যমে করা এমন অনেক স্থাপনা এবং দেউবা পরিবারের মতো অন্যান্য ‘ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের’ ভাগ্যে কী ঘটবে।

বিপ্লব-পরবর্তী ভৌতিক অবস্থা

বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘পুরোনো শাসনব্যবস্থা’র প্রতিনিধিত্বকারী আটটি প্রধান রাজনৈতিক দল নেপালি জনগণের দাবি করা সংস্কারের পক্ষে কোনো মত দেয়নি। উল্টো তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির নিয়োগকে অসাংবিধানিক বলে একটি যৌথ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, পুরোনো দলগুলো এখনো সময়ের পরিবর্তন ও বিপ্লব-পরবর্তী অবস্থা বুঝতে ব্যর্থ কিংবা তারা পরিবর্তন মেনে নেয়নি।

কাঠমান্ডুর আগুন দেন জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। ছবি: মনজিৎ লামা
কাঠমান্ডুর আগুন দেন জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। ছবি: মনজিৎ লামা

যুব কমিউনিস্ট ও কংগ্রেসের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। কারণ, এত দিন ধরে তারা যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করে এসেছে, তা হঠাৎ ভেঙে পড়েছে। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (ইউনিফায়েড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বা ইউএমএল ও সিপিএন) একজন বিশিষ্ট নেতা মহেশ বসনেট সম্প্রতি একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে তিনি জেন-জিদের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া তাঁর বাড়ি দেখাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা একদল অনুচরের মধ্যে একজনকে বলিউডের বিখ্যাত একটি সংলাপ বলতে শোনা যায়। তিনি বলছিলেন, ‘চুন চুন কে মারেঙ্গে’ অর্থাৎ একটা একটা করে বেছে বেছে মারব। তিনি মূলত জেন-জিদের উদ্দেশে এই কথা বলেন। এরই মধ্যে পুরোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়ে জেন-জি আন্দোলনের একজন সদস্য আত্মহত্যা করেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে আদিবাসী, মধেশি, দলিত ও ভূমিহীন তরুণেরা আলাদাভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে, যা আন্দোলনের মূলধারার জেন-জেড নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে।

৯ সেপ্টেম্বরের অগ্নিকাণ্ডে নেপালের সাবেক মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের বাড়িও পুড়ে যায়। মজার বিষয়, ‘প্রচণ্ডপথ’-এর রচয়িতা, যিনি একসময় রাজতন্ত্র ভেঙে সমাজতান্ত্রিক নেপালের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই প্রচণ্ডই জেন-জিদের বিপ্লবের আগুনে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হলেন। তাঁর বাড়ির দেয়ালেও লেখা হলো, ‘বিপ্লব সংক্রামক’। কারণ, ২০০৬ সালের পর এই বিপ্লবী মাওবাদীরাও ক্ষমতার লোভে পুঁজিবাদী রাজনীতিতে ডুবে গিয়েছিল।

কিন্তু প্রচণ্ডের বাসভবনের ধ্বংসাবশেষ সেই মাও বিপ্লবের ব্যর্থ ভুতুড়ে প্রতিচ্ছবি, যাকে একসময় পরিবর্তনের অগ্রদূত বলে মনে করা হয়েছিল। আর এই ব্যর্থতার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী।

১৯২০ থেকে ত্রিশের দশকে মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী শাসনামলে কারাগারে থাকার সময় ইতালির দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসি লিখেছিলেন, ‘সংকটটি মূলত এই কারণে যে, পুরোনোটা মরে গেছে এবং নতুনটির এখনো জন্ম হয়নি; এই অন্তর্বর্তী সময়ে নানা ধরনের রোগগ্রস্ত লক্ষণ দেখা দেয়।’ নেপাল এখন সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে নতুন ইতিহাস রচনার পথে তাদের ওপর আছর করতে পারে ব্যর্থ মাও বিপ্লবের ভূত। জেন-জিদের এই আন্দোলনের পর নেপালের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—এই সময়কে সুস্থ রাখা।

দ্য ওয়ার থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

লেখক: সাবিন নিংলেখু, আরবান পলিটিকস ও সামাজিক আন্দোলন গবেষক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিবিসির ডিজিকে কেন পদত্যাগ করতে হলো, ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে এডিট করার দায় নিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে এডিট করার দায় নিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। ওই বক্তৃতায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিলে) দাঙ্গার আগের ঘটনা নিয়ে তৈরি বিবিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল।

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা টারনেস হঠাৎই পদত্যাগ করেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। বিবিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

গত সপ্তাহে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানায়, গত গ্রীষ্মে বিবিসির সম্পাদনা মানদণ্ড কমিটির পরামর্শক মাইকেল প্রেসকট এক অভ্যন্তরীণ নোটে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। নোটটি থেকেই ফাঁস হয় বিতর্কিত সম্পাদনার অভিযোগ। সাবেক সাংবাদিক প্রেসকট দাবি করেন, ‘Trump: A Second Chance?’ নামের বিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পের দুটি বক্তব্য একত্রে দেখানো হয়। এই বক্তব্য দুটি প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এতে বোঝানো হয়, ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন—‘পুরোদমে লড়াই করো।’

কিন্তু আসল বক্তব্যে ট্রাম্প কেবল বলেন, ‘আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দিতে যাচ্ছি।’ সে সময় ট্রাম্প তখনও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী জয়ের বিরোধিতা করছিলেন। প্রেসকট আরও অভিযোগ করেন, বিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার নিয়ে বিতর্কিত কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছে এবং বিবিসি অ্যারাবিক এমন এক সাংবাদিককে প্রচারের সুযোগ দিয়েছে যিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন।

বিশ্বজুড়ে ২১ হাজার কর্মী নিয়ে বিবিসি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক সার্ভিস সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের প্রদত্ত টিভি লাইসেন্স ফি থেকে পরিচালিত হয়, সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক আয়ও রয়েছে। সংবাদ থেকে শুরু করে বিনোদন—সব ধরনের বিষয়েই তাদের আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন প্রকাশের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বিবিসিকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ’ বলে সমালোচনা করেন। ট্রাম্পও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সাংবাদিকরা এবার ধরা পড়েছে। তারা নির্বাচনের ফল পাল্টাতে চেয়েছিল, তারা অত্যন্ত অসৎ মানুষ।’

এদিকে, যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়ামন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বলেন, এই অভিযোগগুলো ‘অত্যন্ত গুরুতর।’ বিবিসির প্যানোরামা প্রোগ্রামের ঘটনাই শুধু নয়, পুরো সংবাদ সংস্থার সম্পাদকীয় মানদণ্ড নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখানে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—বিবিসির প্রতিবেদনে হয়তো একটি পদ্ধতিগত পক্ষপাত আছে।’

ন্যান্ডি আরও বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে—বিবিসির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভাষা ও মানদণ্ড অনেক সময় একরকম থাকে না—চাই সেটা ইসরায়েল-গাজা প্রসঙ্গ হোক, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু হোক বা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কিত বিষয়ই হোক।

এর আগেও এ বছর বিবিসি ‘Gaza: How To Survive A Warzone’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্রের ‘গুরুতর ত্রুটি’ স্বীকার করে ক্ষমা চায়। অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে শাস্তি পায়। কারণ, তাদের আরেকটি প্রোগ্রামকে ‘গুরুতরভাবে বিভ্রান্তিকর’ বলা হয়েছিল। পরে জানা যায়, সেই প্রামাণ্যচিত্রে যে শিশুর কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা ছিল হামাসের সাবেক উপ-কৃষিমন্ত্রীর সন্তানের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারে শাটডাউন: একদিনে ৩৩০০ ফ্লাইট বাতিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সরকারি অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ছবিটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের। ছবি: এএফপি
সরকারি অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ছবিটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ চলাচলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মার্কিন সরকারে চলমান শাটডাউন বা অচলাবস্থার কারণে দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইনস ৩ হাজার ৩০০ টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এক শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে ‘বিমান চলাচল প্রায় বন্ধের পর্যায়ে নেমে আসতে পারে।’

স্থানীয় সময় গতকাল রোববার এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। আর ঠিক সেই সময়ই তহবিল বিল পাস নিয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার ৪০ তম দিনে এসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সরকার পুনরায় চালু করতে অস্থায়ী এক চুক্তিতে পৌঁছায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ক্লান্তি ও অনুপস্থিত কর্মীদের কারণে ফ্লাইট সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। অনেক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (বিমান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা) অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বেতন না পাওয়ায় কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

মোট ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে ‘অপরিহার্য কর্মী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারের শাটডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে তারা বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার জানায়, কেবল রোববারই যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ৩০৪টি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং ১০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। শনিবার বাতিল হয়েছিল আরও ১ হাজার ৫০০ টির বেশি ফ্লাইট, শুক্রবার প্রায় ১ হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।

এফএএ-এর ধাপে ধাপে ফ্লাইট কমানোর নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ৪ শতাংশ কমানো হয়। সোমবার থেকে তা ৬ শতাংশ, বৃহস্পতিবারে ৮ শতাংশ, আর শুক্রবারে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে।

রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি সতর্ক করেন, থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটির আগে বিমান চলাচল একেবারেই স্থবির হয়ে যেতে পারে। তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ঘনিয়ে এলে সবাই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভ্রমণে বের হবে। তখন বিমান চলাচল প্রায় থেমে যাবে।’ ডাফি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। যত দিন পর্যন্ত বিমান নিয়ন্ত্রকদের বেতন দেওয়া না হয়, তত দিন এটি আরও খারাপ হবে।’

থ্যাঙ্কসগিভিং যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। ২০২৪ সালে এই সময় প্রায় ৮ কোটি মানুষ ভ্রমণ করেছিলেন। শুধু ছুটির পরের রোববারেই বিমানবন্দরে প্রায় ৩১ লাখ যাত্রী চলাচল করেছিলেন, যা ছিল রেকর্ড।

এদিকে, মার্কিন সিনেটররা জানিয়েছেন—তারা সরকার পরিচালনায় অর্থায়ন পুনরায় চালু করার বিষয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে—এমন এক অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছেছেন। রোববার রাতে সিনেট সেই বিলের প্রাথমিক ভোটাভুটি শুরু হয়। কয়েকজন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট জানান, তারা রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভোট দিয়ে সরকার পুনরায় চালু করার পক্ষে যাবেন।

তবে এই বিল কার্যকর করতে হলে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে তা পাস হতে হবে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর লাগবে। তাহলেই সরকার বন্ধের অবসান ঘটবে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—সরকার পুনরায় খুললেও বিমান চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক হবে কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতি: বিবিসির মহাপরিচালক ও হেড অব নিউজের একযোগে পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ আরেক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার পর ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, ডেভি ও টারনেসের পদত্যাগ বিবিসিতে পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে। ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

ডেবোরা টারনেস রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, প্যানোরামা বিতর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যা বিবিসির ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতিষ্ঠানে নেতাদের পূর্ণ জবাবদিহি থাকতে হয়। তাই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। কিছু ভুল হয়েছে, তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—বিবিসি নিউজ প্রতিষ্ঠানগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট—এই অভিযোগ সঠিক নয়।’ টারনেস গত তিন বছর ধরে বিবিসির নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

টেলিগ্রাফের প্রকাশিত নথিতে আরও বলা হয়, বিবিসি আরবির ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’র কথাও উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রচারযন্ত্র।’ সম্প্রতি সম্প্রচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি দুইটি ভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে দেখিয়েছে, যেন ট্রাম্প সমর্থকদের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার আগে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ‘প্রাণপণে লড়তে’ বলছেন। কিন্তু ভাষণের যে অংশে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশপ্রেমিকের মতো নিজেদের মত প্রকাশের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। ভাষণের এই দুই অংশ মূলত প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুল্ক থেকে আয়ের ২০০০ ডলার করে জনগণকে দেবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের সব নাগরিককে ২০০০ ডলার করে ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তা থেকে অর্জিত অর্থ থেকে এই ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার আবারও আমেরিকান নাগরিকদের ২ হাজার ডলার করে ‘ডিভিডেন্ড’ বা ‘লভ্যাংশ’ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ অর্থ আসবে এই বছর শুল্ক থেকে সরকারের তোলা বিলিয়ন ডলার রাজস্ব থেকে। বিষয়টি তিনি বহুবার বলেছেন, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করেননি।

ট্রাম্প আবারও তাঁর শুল্কনীতি নিয়ে সরব হয়েছেন এমন এক সময়, যখন বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বড় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। পাশাপাশি, সাম্প্রতিক নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বড় ধাক্কা লেগেছে। যেখানে ভোটাররা মূল্যস্ফীতির জন্য তাদের দায়ী করেছেন, যা আংশিকভাবে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ফল।

ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ট্রিলিয়ন ডলার আয় করছি এবং শিগগিরই ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ পরিশোধ শুরু করব। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন কারখানা গড়ে উঠছে সর্বত্র।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্য অন্তত ২ হাজার ডলারের একটি ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে (অবশ্যই উচ্চ আয়ের মানুষ ছাড়া)।’

এর আগে, এই সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক আইনগতভাবে বৈধ কি না, তা নিয়ে শুনানি হয়। বিচারপতিরা শুনানিতে ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, এই শুল্ক আসলে রাজস্ব সংগ্রহের এক প্রকার করের মতো কাজ করেছে—বাণিজ্য ভারসাম্যজনিত কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে নয়।

যদি আদালত শেষ পর্যন্ত রায় দেয় যে এসব শুল্ক অবৈধ ছিল, তাহলে সরকারকে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আমদানিকারকদের ফেরত দিতে হতে পারে। রোববার এবিসি নিউজের দিস উইক—অনুষ্ঠানে ট্রেজারি সচিব বা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, শুল্কের উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনা।

ট্রাম্প এই বছর একাধিকবার এমন ‘শুল্ক ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি নির্দিষ্টভাবে ২ হাজার ডলার পরিমাণের কথাই বলছেন। সুপ্রিম কোর্ট কবে এই শুল্ক মামলার রায় দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি আদালত শুল্ক বহাল রাখে, তাহলে নতুন প্রশ্ন উঠবে—এই ডিভিডেন্ড দেওয়ার অনুমোদন আদৌ আছে কি না, কারা এটি পাবেন, আর এতে সরকারের ঋণ পরিশোধের প্রচেষ্টায় কতটা প্রভাব পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত