Ajker Patrika

ধসে পড়ছে বিশ্বের ১০ নম্বর অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণি

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ২১
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি অত্যাধুনিক এলাকা। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি অত্যাধুনিক এলাকা। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রা প্রদেশের হালিমা নাসুতিয়ন একসময় ভাবতেন, তাঁর জীবনে সবকিছুই আছে। বছরের পর বছর, তিনি এবং তাঁর স্বামী আগুস সাপুত্রা বিয়ে, পড়াশোনা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করেও অর্থ জমাতে পারতেন। পরিবারের ভাইবোনদের ভরণপোষণের ব্যয় বহন করেও প্রতি মাসে তাঁরা প্রায় ৩০ লাখ রুপাইয়া বা ১ হাজার ৯১৭ ডলার সমপরিমাণ অর্থ উপার্জন করতেন।

মাসিক আয়ের এক-চতুর্থাংশ ব্যয় করেও হালিমা-আগুস দম্পতি ইন্দোনেশিয়ার উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির সদস্য ছিলেন। দেশটির সরকারি হিসাবে, যারা মাসে অন্তত ২০ লাখ রুপাইয়া (১২৭ ডলার) থেকে ৯ দশমিক ৯৯ লাখ রুপাইয়া (৬৩৮ ডলার) পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে তারাই মধ্যবিত্ত।

কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির পর সবকিছু বদলে গেছে। ধীরে ধীরে ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। হালিমা নাসুতিয়ন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা সবই হারিয়েছে (কোভিড মহামারির কারণে)।’ সেই মহামারির পর পেরিয়ে গেছে আরও কয়েক বছর। কিন্তু এখনো হালিমা-আগুস দম্পতি খাবি খাচ্ছেন তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে।

হালিমা-আগুস দম্পতি হলেন ইন্দোনেশিয়ার সেই লাখো পরিবারের একটি যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ। চলতি বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখে। তবে উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা একই সময়ে ১২ কোটি ৮৮ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ। এই দুই শ্রেণি ইন্দোনেশিয়ার ২৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এই পতনের প্রধান কারণ। জাতীয় দারিদ্র্য হ্রাস ত্বরান্বিতকরণ টিমের নীতি বিশেষজ্ঞ এগা কুরনিয়া ইয়াজিদ বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তঃসংযুক্ত কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকোচনের জন্য দায়ী। মধ্যবিত্তরা মূলত কর রাজস্বে বড় অবদান রাখে। কিন্তু তারা খুবই সীমিত সামাজিক সহায়তা পায়। এই সহায়তার বেশির ভাগই চাকরি নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য বিমার মতো আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘নগদ অর্থ সহায়তা ও জ্বালানি ভর্তুকির মতো অন্যান্য সহায়তা কার্যক্রমে প্রায়ই ভুলভ্রান্তি হয়। এসব সহায়তা সঠিকভাবে এই শ্রেণির কাছে পৌঁছায় না।’

নাসুতিয়ন ও তাঁর স্বামী মহামারির সময় সরকারি সহায়তার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। নুসাতিয়ন বলেন, ‘মহামারির সময় কাজ হারানোর পর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আমরা কোনো সাহায্য পাইনি। গ্রামের স্থানীয় কার্যালয় থেকে প্রতি মাসে মাত্র ৩ লাখ রুপিয়া (প্রায় ১৯ ডলার) সহায়তা পেয়েছি, যা কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই বেরিয়ে যেত।’

মহামারি শেষে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশের তালিকায় ১০ নম্বরে থাকা ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি স্থিতিশীল গতিতে এগিয়ে যেতে শুরু করে। যেখানে দেশটির বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৫ শতাংশ। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় দেশটির বাণিজ্যও চাপে পড়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিবিদ ইয়াজিদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানের মতো প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। এটি পিএমআই (পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স) সূচকে প্রতিফলিত হচ্ছে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা কমে যাচ্ছে। এটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর আরও চাপ তৈরি করছে।’

আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) অর্থনৈতিক গবেষক আদিনোভা ফাউরি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকট গভীরতর কাঠামোগত সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরে। বিশেষ করে, দেশটিতে শিল্প খাতের অবক্ষয়ের প্রভাব স্পষ্ট।’

ফাউরি আরও বলেন, ‘যেখানে একসময় শিল্প খাত অধিকাংশ শ্রমিককে নিয়োজিত করত, এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিকদের বড় একটি অংশ সেবা খাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে এর বেশির ভাগই অনানুষ্ঠানিক খাত, যেখানে বেতন কম এবং সামাজিক সুরক্ষা নেই বললেই চলে।’

শ্রমিকদের অবস্থা এবং উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ফাউরি। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে শুধু কম মজুরির ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়, বরং শ্রমিকদের অবস্থা ও নিয়মকানুন উন্নত করতে হবে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো নতুন বাজারে প্রবেশ করা সম্ভব হবে, যেখানে উন্নত শ্রম মানদণ্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।’

ফাউরি আরও বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু দক্ষতার দিক থেকে নয়, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার দিক থেকেও। অন্যান্য দেশ থেকে শিখতে হবে। গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। ”

এদিকে, গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রাবোও সুবিয়ান্তো। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাবোও ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্র্য ও শিশুদের অপুষ্টি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি স্কুলে বিনা মূল্যে খাবারের কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনার কথা বলেন।

কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, কোভিডের পর দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নাসুতিয়ন এবং তাঁর পরিবার এখনো তাদের বিপর্যস্ত জীবন গুছানোর চেষ্টা করে চলেছেন। তাঁরা তাদের পরিবারের জন্য কিস্তিতে ফার্নিচার ও অন্যান্য সামগ্রী কিনেছিলেন। কিন্তু এসব কেনার পরই তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা আর্থিক সমস্যায় পড়ে গেছেন।

নাসুতিয়ন বলেন, ‘আমরা আমাদের গাড়ি, জমি বিক্রি করেছি এবং বাড়ি বন্ধক দিয়েছি। সব শেষ। আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।’ এরপর, নাসুতিয়নের স্বামী জীবিকার তাগিদে অন্য একটি কাজ নিতে বাধ্য হন। তিনি পাম ফল সংগ্রহের কাজে যোগ দেন। মাসিক আয় মাত্র ২৮ লাখ রুপাইয়া (প্রায় ১৭৯ ডলার)।

নাসুতিয়ন নিজেও একটি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করেন। মাসিক বেতন মাত্র ১০ লাখ রুপাইয়া। বর্তমানে এই দম্পতির মাসিক খরচ দুই মিলিয়ন রুপাইয়ার (প্রায় ১২৭ ডলার) মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই পরিমাণ খরচ মধ্যবিত্তের জীবনের জন্য ন্যূনতম সীমা বলে বিবেচিত ইন্দোনেশিয়ায়।

নাসুতিয়ন বলেন, ‘আমাদের জীবন এখন একেবারেই ভিন্ন। আমরা এখন আগের মতো স্থিতিশীল নই। আবার ব্যবসা শুরু করতে পুঁজির প্রয়োজন, কিন্তু সঞ্চয় করার মতো অর্থ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনোভাবে বেঁচে থাকার মতো অর্থ উপার্জন করছি। জীবন চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। আশা করি, পরিস্থিতি একদিন বদলাবে। আল্লাহ ভরসা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধীরে ধীরে চলছিল গাড়িটি, ট্রাফিক সিগন্যালে থামতেই বিকট বিস্ফোরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: পিটিআই
ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোর একটি। অন্যান্য দিনের মতো আজকেও অসংখ্য মানুষের ভিড় ছিল লালকেল্লার সামনে।

সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে আছে অনেক গাড়ি। কিন্তু ছোট একটি গাড়ি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। ওই গাড়িতেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দিল্লি পুলিশ কমিশনার সত্যেশ গোলচা সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভাঙাচুড়া গাড়ি, ছিন্নভিন্ন লাশ এবং রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে আছে কাচের টুকরা।

গোলচা আরও জানান, ফরেনসিক দল, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং তাঁকে প্রতিনিয়ত আপডেট জানানো হচ্ছে।’

দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি চিফ এ কে মালিক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, বিস্ফোরণের পর যে আগুন লেগেছিল, তা সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল।

ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানান, আগুনে ছয়টি গাড়ি, দুটি ই-রিকশা ও একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে অবস্থিত চাঁদনি চক ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ভরগবের দোকান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে পুরো ভবন কেঁপে উঠেছিল।

আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি গুরুদুয়ারায় ছিলাম, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনি। শব্দটা এতটাই জোরে ছিল, আমি বুঝতেই পারিনি কী ঘটেছে।’

এ ঘটনার পর দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাশ্মীরের চিকিৎসক জঙ্গি সংগঠন জইশের সদস্য, হরিয়ানার তাঁর বাসায় মিলল ৩ টন বিস্ফোরক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪১
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত

হরিয়ানার ফরিদাবাদে এক চিকিৎসকের ভাড়া নেওয়া দুই বাড়ি থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি (প্রায় ৩ টন) বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। তিনি ভারতে প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্ত করতেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধার করা পদার্থগুলো সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যা সাধারণত বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফরিদাবাদ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ সকাল থেকে ওই বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।

শাকিল ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। দিল্লি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ধোজ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনপ্রাপ্ত।

গতকাল রোববার পুলিশ ধোজ এলাকার তাঁর ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২০টি টাইমার, অ্যাসল্ট রাইফেল, হ্যান্ডগান ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। শাকিল সেখানে সাড়ে তিন বছর ধরে থাকতেন। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ মেলায় ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে আরও একটি পিস্তল, আটটি গুলি, দুটি খালি কার্তুজ, দুটি অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, আটটি বড় স্যুটকেস, চারটি ছোট স্যুটকেস ও একটি বালতি উদ্ধার করা হয়।

হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত
হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বাড়িটি ধোজ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর টাগা গ্রামে। ওই বাড়ির মালিক এক মাওলানা, যাকে ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর, আনন্তনাগ, গান্ডারবাল, শোপিয়ানসহ বিভিন্ন জায়গায় এবং ফরিদাবাদে একাধিক স্থানে তল্লাশিতে এক নতুন ধরনের ‘প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক’ উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। যেখানে বহু শিক্ষিত ও পেশাজীবী, বিশেষত চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। গত ১৫ দিনের এই যৌথ অভিযানে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগেও উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে কর্মরত কাশ্মীরি চিকিৎসক ড. আদিল আহমদ রাঠেরকে শ্রীনগরে জইশ-ই-মোহাম্মদ সমর্থনকারী পোস্টার লাগানোর অভিযোগে আটক করা হয়।

শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ফরিদাবাদ পুলিশ তাঁর এক নারী সহকর্মীর সুইফট গাড়ি উদ্ধার করে, যেখানে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি পিস্তল পাওয়া যায়। ওই নারী চিকিৎসককেও পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই পেশাজীবী জঙ্গি চক্রটি পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাঁরা শুধু প্রচারমূলক পোস্টার লাগানোই নয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায়ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

শাকিল ও রাঠের ছাড়াও আরিফ নিসার দার, ইয়াসির উল আশরাফ, মাকসুদ আহমদ দার (শ্রীনগর), মৌলভি ইরফান আহমদ (শোপিয়ান), জমির আহমদ আহাঙ্গারকেও (গান্ডারবাল) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অস্ত্র ও বিস্ফোরকসামগ্রীর পাশাপাশি পুলিশ ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির নির্দেশনা-সংবলিত বই ও নথিপত্রও উদ্ধার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে রেড ফোর্টের পাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের বাইরে গাড়িতে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নিরাপত্তা সংবেদনশীল এলাকায় হওয়ায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের একাধিক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভ্যানের দরজা উড়ে গেছে এবং একটি গাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল দেহের খণ্ডাংশ।

প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের ধরন বা উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

দিল্লি, মুম্বাই, জয়পুর, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দুই ডজন অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে এবং এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফরেনসিক ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আলামত সংগ্রহ করছে।

ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের পরই দিল্লিতে বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানার ফরিদাবাদে দুটি আবাসিক ভবন থেকে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি (৩ টন) বিস্ফোরক উদ্ধার করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। এর মধ্যে ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল, যা সার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রাণঘাতী বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই অভিযান পরিচালিত হয় জম্মু ও কাশ্মীরের এক চিকিৎসক আদিল রশিদ রাঠারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। সিসিটিভিতে জইশ-ই-মোহাম্মদ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে পোস্টার লাগাতে দেখে রাঠারকে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পোস্টারগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হুমকি ছিল বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তে মুজাম্মিল শাকিল নামের আরও একজন চিকিৎসকের নাম উঠে আসে। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁর নামে থাকা দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১২টি স্যুটকেসভর্তি বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও টাইমার ডিভাইস উদ্ধার করে।

এ ছাড়া এক নারী চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার গাড়িতে একটি রাইফেল ও গুলি পাওয়া গেছে। আরও একটি রাইফেল উদ্ধার হয় কাশ্মীরের আনন্তনাগের মেডিকেল কলেজের একটি লকার থেকে, যেখানে আদিল রাঠার গত বছর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের ইঙ্গিত

এ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আল-কায়েদা সম্পৃক্ত আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ জড়িত বলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের দাবি। অভিযানের মাধ্যমে তারা এই দুটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত একটি আন্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আদিল রাঠার, মুজাম্মিল শাকিল, নারী চিকিৎসকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও কয়েক ঘণ্টা পর দিল্লির হৃদয়স্থলে হওয়া এই বিস্ফোরণ—দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ছিল, যা আংশিকভাবে সফল হয়েছে।

ঘটনার পর পুরো দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে এবং লালকেল্লা এলাকা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিস্ফোরণ সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত বহন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছিন্নভিন্ন শরীর, হাত পড়ে আছে রাস্তায়—প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় দিল্লি বিস্ফোরণের বীভৎসতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ছবি: পিটিআই
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর মানুষের দেহের অংশ উড়ে এসে তাঁর সামনে রাস্তায় পড়তে দেখেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি কাঁপা কণ্ঠে বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে ‘কান কয়েক মিনিট ধরে বাজতে থাকে’। তিনি বলেন, ‘একজনের শরীর টুকরা হয়ে গিয়েছিল। আমি রাস্তায় একটি হাত পড়ে থাকতে দেখেছি। এটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, বিস্ফোরণটা ছিল ভয়ংকর।’

আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের ভবন, জানালা ও দরজা কেঁপে ওঠে।

আজ সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের বাইরে বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে সব সময় পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। ঘটনাস্থলটি জামা মসজিদ থেকে মাত্র ১ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরে এবং গুরুদুয়ারা সিসগঞ্জ সাহিব থেকে মাত্র কয়েক শ মিটার দূরে।

ঘটনার পরপর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, গাড়িগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ ও দগ্ধ দেহাবশেষ। ডজনখানেক অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়ার কাজ শুরু করে।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির ছাদ থেকে এক বিশাল আগুনের গোলা দেখেছি। মুহূর্তেই ভয়ংকর শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে যাই। আমার বাড়ি গুরুদুয়ারার কাছে।’

আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটল। আমার মনে হলো, শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’

বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত