Ajker Patrika

ইন্দোনেশিয়ার গ্রামে নারীকে সহায়তা করতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পুরুষেরা

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ২২: ৩৯
ইন্দোনেশিয়ার গ্রামে নারীকে সহায়তা করতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পুরুষেরা

গৃহস্থালির কাজে পুরুষেরা সাধারণত নারীদের সহযোগিতা করে না। এটির কোনো অর্থনৈতিক মূল্য আছে বলেও তারা মনে করে না। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সাম্প্রতিক সময়ে এই কাজগুলোর অর্থনৈতিক মূল্য হিসাব করতে শুরু করেছে। গৃহস্থালির এই কাজগুলোর অর্থনৈতিক মূল্য হিসাব না করা সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিবর্তনে প্রধান বাধা বলে মনে করা হয়। যেখানে বিশ্বে এই ধরনের কাজে পুরুষদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সময় ও শ্রম ব্যয় করে নারীরা। 

শ্রমবাজারে নারীদের তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ, মজুরি ও চাকরিতে বৈষম্যের বিশ্লেষণে এই গৃহস্থালি কাজে লিঙ্গবৈষম্য এত দিন অনেকটা উপেক্ষা করা হয়েছে।

আইএলওর ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে গৃহস্থালি কাজের ৭৫ শতাংশই করে নারীরা। বাংলাদেশে এই অনুপাত ৮৮ শতাংশ। আইএলওর হিসাবে মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের অর্থমূল্য বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ বা ১১ ট্রিলিয়ন ডলার। 

এই বৈষম্য দূর করতেই ইন্দোনেশিয়ার গ্রামগুলোতে পুরুষদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউএন উইমেন। সেখানে পুরুষ সঙ্গীদের নারীর প্রতি তার আচরণ, সংসারে দায়িত্ব বণ্টনে সমতা ও ঘরের কাজগুলো ভাগ করে নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

‘টুগেদার ডিজিটাল’ শীর্ষক এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ইন্দোনেশিয়ার নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়। মূল কর্মসূচি হলো উদ্যোক্তাবিষয়ক ও ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি লৈঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
 
এই কর্মসূচির আওতায় ইন্দোনেশিয়া ও চীনের নারীদের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হতে সহযোগিতা করা হয়। ৫ বছরব্যাপী এ কর্মসূচিটি শুরু হয়েছে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। 

ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপ ও পশ্চিম নুসা টেঙ্গারা রাজ্যের ছয়টি গ্রামে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছে। এ গ্রামগুলোতে নারীদের ব্যবসার মধ্যে রয়েছে—ক্যাফে, সেলুন, মোবাইলের প্রিপেইড কার্ড বিক্রি, দরজি, মুদি দোকান ও ফ্যাশন হাউস। 

নারীদের ব্যবসা প্রসারে প্রধান বাধাটি হলো—গৃহস্থালির কাজ; উদ্যোগ, ডিজিটাল ও নেতৃত্বের দক্ষতা; নেটওয়ার্ক ও অর্থায়নে লৈঙ্গিক পক্ষপাতিত্ব।

নারী উদ্যোক্তার জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার পেরতিউই ত্রিউইদিয়াহেনিং বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার উদ্যোক্তা খাত ডিজিটালাইজেশন ও ইতিবাচক সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব তৈরির দিকে এগোচ্ছে। তবে নারী উদ্যোক্তাদের গৃহস্থালি কাজ ও এর পেছনে ব্যয়িত সময়ের মতো অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়। আমরা আশা করছি, এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু ও সমৃদ্ধ করার জন্য আরও সহযোগিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারব।’ 

এসব প্রশিক্ষণে নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ, গৃহস্থালি কাজে অংশগ্রহণ, পরিবারে পুরুষের ভূমিকা, নারীর ওপর পরিবারের কাজের ভার ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো হয়। অর্থাৎ পুরুষদের শেখানো হয় নারী যখন তার ব্যবসায় মনোযোগী হয় তখন কীভাবে সহযোগিতাকারী সঙ্গী হয়ে ওঠা যায়। 

উত্তর লম্বকে অবস্থিত লান্টান গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন এর জন্য দুঃখিত। পুরুষ সঙ্গীর জন্য ইউএন উইমেন্সের লিঙ্গ সমতাবিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার পর এখন তাঁর বোধ হচ্ছে তাঁর কাজগুলো কত ভুল ছিল। 

তিনি বলেন, ‘আগে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে রূঢ় আচরণের কথা ভাবলে এখন আফসোস হয়। ব্যবসা চালানোর পাশাপাশি পরিবারের দেখভালের জন্য আমার স্ত্রী যে পরিশ্রম করে তা দেখে আমি নিজের ব্যবহার পরিবর্তন করে আরও সহযোগিতাপূর্ণ হতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত