Ajker Patrika

আল-জাজিরার প্রতিবেদন

চীন কি পাকিস্তান ও তালেবানের বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি (মাঝে) ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ছবি: পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি (মাঝে) ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ছবি: পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গতকাল বুধবার কাবুলে হাত ধরাধরি আর অর্ধেক হাসি মুখে ছবি তুললেন পাকিস্তান, চীন ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসতেই এমন দৃশ্য ধরা পড়ল ক্যামেরায়। এটি ছিল গত ১২ সপ্তাহের চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগে মে মাসে বেইজিংয়ে তাঁদের মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সেই মে মাসের বৈঠকের পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার অবসান হয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক হয়। সেই বৈঠকেই চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন এই অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াতে চাইছে। তবে একই সঙ্গে তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। অন্যদিকে চীনও তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ শুরু করেছে। ভারতও আফগান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে।

তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক এখনো তিক্ত। একসময় পাকিস্তান তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল, কিন্তু এখন ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে যে—তালেবান সীমান্তে সহিংসতায় জড়িত গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান অভিযোগ করছে, পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের বহিষ্কার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এ পরিস্থিতিতে চীন পাক-তালেবানের মধ্যে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি কূটনীতিক আল-জাজিরাকে জানান, চীনের কাছে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, উন্নয়ন ও সংযোগ তখনই সফল হবে, যখন এ দেশগুলো স্থিতিশীল হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।

২০১৫ সালে চালু হওয়া ৬২ বিলিয়ন ডলারের সিপিইসি প্রকল্পকে পাকিস্তানের জন্য একটি ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ প্রকল্পের গতি মন্থর হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ চীন সফরে গিয়ে সিপিইসির দ্বিতীয় ধাপ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবেন।

এ প্রকল্পের ধীরগতির পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা একটি কারণ হলেও চীনের প্রধান উদ্বেগ হলো প্রকল্পের অবকাঠামো এবং সেখানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা। পাকিস্তানের বৃহত্তম কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনা কর্মী ও স্থাপনাগুলোকে আক্রমণ করে আসছে।

দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার চীনা নাগরিক পাকিস্তানে বসবাস করছেন এবং ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। চীন আফগান মাটিতে সক্রিয় পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) নিয়েও উদ্বিগ্ন।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক আব্দুল বাসিত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পর চীন দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ভূরাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর না হলে সিপিইসি তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারবে না।

এ পরিস্থিতিতে চীনের মূল লক্ষ্য হলো, পাক-তালেবান উদ্বেগ দূর করা। নিজেদের স্বার্থে একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী অঞ্চল নিশ্চিত করা।

ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির গবেষক মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, চীন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে কাছে টানতে চাইছে। তবে তিনি এ প্রচেষ্টার দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিয়ে সতর্ক। তাঁর মতে, বেইজিংয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে তাদের প্রচেষ্টার ফলাফল এখনো সীমিত।

চীনের কূটনৈতিক ও আর্থিক ওজন থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে তারা কতটা কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হতে পারবে—সেটা এখনো অনিশ্চিত। পাকিস্তানি ওই কূটনীতিক বলেন, চীন চাইলে নিশ্চয়ই গ্যারান্টরের ভূমিকা নিতে পারে, কারণ, উভয় দেশই তাদের ওপর আস্থা রাখে। তবে তারা আদৌ সেই দায়িত্ব নেবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—চীন কি কেবল শান্তির ডাক দেবে, না পাকিস্তান ও তালেবানের মধ্যে সত্যিকারের ‘বন্ধুত্ব ফেরানোর’ কাজটাও করতে পারবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর, আবারও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড

২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নামের আগে গণহত্যাকারী, ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত