Ajker Patrika

জনসংখ্যার হ্রাস নিয়ে উদ্বেগে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ দেশ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

জনসংখ্যার হ্রাস নিয়ে উদ্বেগে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ দেশ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

একটি দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে কিংবা বাড়ানোর জন্য প্রত্যেক নারীর গড়ে ২.১ থেকে ২.৪ জন হারে শিশু জন্ম দেওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে সেখানকার নারীরা গড়ে ১.৪৯ জন শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এর আগের বছর শিশু জন্মের এই হার ছিল নারী প্রতি গড়ে ১.৫৫ জন। ২০১০ সাল থেকেই এই দুটি অঞ্চলে এভাবে নারীদের প্রজনন হার কমতে দেখা গেছে। একই রকম চিত্র দেখা গেছে, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। এ দুটি অঞ্চল আলাদাভাবে তথ্য নথিভুক্ত করে। 

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রজনন হারও গত বছর নারী প্রতি ১.৬২ জন শিশুতে নেমে এসেছে। এটি একটি রেকর্ড। ১৯৬০ সালে দেশটিতে নারীদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার ছিল গড়ে ৩.৬৫ জন। 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেরোন্টোলজির (বার্ধক্যের প্রভাব নিয়ে অধ্যয়ন) অধ্যাপক সারা হার্পার জানিয়েছেন, শুধু যুক্তরাজ্য কিংবা যুক্তরাষ্ট্র নয়—পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ দেশে এখন সন্তান প্রসবের হার প্রতিস্থাপন হারের চেয়ে কম। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশু জন্মের হার বর্তমানে সর্বনিম্ন। বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা বাড়ছে শুধু সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে। 

জন্মহার কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ দেশগুলোতে বার্ধক্যের পাশাপাশি কমতে থাকা জনসংখ্যা এবং পেনশনভোগীদের সংখ্যার তুলনায় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। অর্থাৎ কোনো দেশের কোম্পানিগুলো যদি পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ না করতে পারে তাহলে সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে? একটি ক্ষুদ্র কর্মশক্তি বিপুল অবসরপ্রাপ্ত জনসংখ্যার পেনশনের জন্য কীভাবে অর্থ প্রদান করবে? বিষয়গুলো এখন বিভিন্ন দেশের সরকারি অর্থনীতিবিদদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এ অবস্থায় জন্মহার বাড়ানোর জন্য অনেক দেশেই শিশু যত্নের পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি কর মওকুফ এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করে নারীদের সন্তান জন্মদানকে আরও সহজ করে তোলা হচ্ছে। তবে এই পদক্ষেপগুলো জনসংখ্যা কমে যাওয়ার গতিকে কমিয়ে রাখতে পারলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জনসংখ্যা বাড়াতে পারছে না। কারণ কর্মক্ষম নারীরা এখন একটি কিংবা দুটির বেশি সন্তান নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের জনসংখ্যার পতনের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য মূলত দুটি উপায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের কর্মক্ষম থাকার বয়স আরও বাড়াতে হবে অথবা অন্য দেশ থেকে অভিবাসনের মাধ্যমে লোকসংখ্যা নিয়ে আসতে হবে। এমন একটি দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টানা যায়। এই দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত অবসরে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি। দুটি বিকল্পের মধ্যে তাই তারা প্রথমটিকে বেছে নিয়েছে। 

এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর সেন্টার ফর এজিং রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর অ্যাঞ্জেলিক চ্যান জানিয়েছেন, অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো, মধ্যবয়সে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বয়স্ক কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। 

সিঙ্গাপুরে কোনো ব্যক্তির অবসরে যাওয়ার বয়সসীমাকে পুনঃ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আরও দীর্ঘ করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন চ্যান। এর মানে হলো—অবসরে যাওয়ার পরও যদি কোনো ব্যক্তি কাজে থাকতে সক্ষম হন এবং ইচ্ছা প্রকাশ করেন তবে তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া। 

বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬৩ বছর। কিন্তু এটিকে ২০২৬ সালের মধ্যে ৬৪ বছর এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৫ বছরে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। আর ২০৩০ সালের মধ্যে পুনঃ নিয়োগের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে থাকতে পারার বয়সসীমা ৭০ পর্যন্ত উন্নীত করার চিন্তা করছে দেশটি। এ জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যের মান উন্নত করার পাশাপাশি  বিপুল অর্থ খরচ করছে সিঙ্গাপুর। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক রোনাল্ড লি জানিয়েছেন, দেশটিতে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক আমেরিকানরা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে বিষয়টিকে নেতিবাচক বলতে নারাজ লি। তিনি আশা করেন, মানুষকে আরও প্রাণবন্ত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তাঁদের বয়সের ব্যাপ্তি আরও বাড়ানো সম্ভব এবং মানুষের অবসরে যাওয়ার বয়স ৭০-এর কোঠায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। 

বর্তমানে আমেরিকানরা ৬৬ বছর ২ মাস বয়স হলেই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা পেনশন পান। তবে এটিকে ধীরে ধীরে বেড়ে ৬৭ বছরে নিয়ে যাওয়া হবে। 

বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক লির চিন্তা অনেকের কাছে খুব বেশি পছন্দের নাও হতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এটা অনিবার্য। আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য অবসর গ্রহণ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় কাজ করাই এর সুস্পষ্ট সমাধান। 

জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক হার্পারের মতে, এই সমস্যার আরেকটি সমাধান হলো—অভিবাসন বাড়ানো। তবে এই বিষয়টিকে প্রায় সময়ই আটলান্টিকের উভয় পাশ অর্থাৎ ইউরোপ ও আমেরিকায় রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

হার্পার মনে করেন, জন সংখ্যাগতভাবে দেশগুলোর উচিত সেই দেশগুলোকে অভিবাসী হওয়ার অনুমতি দেওয়া যেসব দেশে সন্তান জন্মদানের হার অনেক বেশি। আগামী চার দশকজুড়ে বিপুলসংখ্যক কর্মী সহ সারা বিশ্বে অভিবাসন প্রক্রিয়া বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু এটি করতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত