Ajker Patrika

প্রাণভয়ে লুকিয়ে ছিলেন আমাজনে বেঁচে যাওয়া শিশুদের বাবা

প্রাণভয়ে লুকিয়ে ছিলেন আমাজনে বেঁচে যাওয়া শিশুদের বাবা

বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর আমাজন জঙ্গল থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া কলম্বিয়ার চার শিশুকে উদ্ধারের ঘটনাটি সাড়া ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। বিমানটি গত ১ মে আমাজন জঙ্গলের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হলে শিশুদের মায়ের মৃত্যু হয়। তাদের বাবা ম্যানুয়েল রনোক এ সময় কলম্বিয়ার গুয়াভার অঞ্চলের স্যান জোস ডেল শহরে অবস্থান করছিলেন। 

রনোক দাবি করেছেন, কয়েক মাস ধরেই তিনি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় প্রাণভয়ে আত্মগোপন করে ছিলেন। কারণ একটি গেরিলা দল তাকে মেরে ফেলার জন্য খুঁজছে। ওই দলটি আমাজন জঙ্গলের ভেতরে কোকেন চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে। 

ম্যানুয়েল রনোক অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশুদের মধ্যে চার ও এক বছর বয়সী তিয়েন ও ক্রিস্টিনের বাবা। আর ৯ বছর বয়সী সোলেনি এবং ১৩ বছরের লেসলি তার সৎ সন্তান।

রনোক জানিয়েছেন, রিভ্যুলিউশনারি আর্মড ফোর্স অব কলম্বিয়া বা ফার্ক গেরিলাদের একটি ভিন্নমতাবলম্বী শাখা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সাবেক এক গেরিলা যোদ্ধার নামে ওই শাখাটির নাম ক্যারোলিনা রামিরেজ ফ্রন্ট। এই ফ্রন্টের সদস্যরা আমাজনের ভপস এবং গুয়েভার অঞ্চলের মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে। হুইটুটু আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য রনোক তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গুয়েভার এলাকায় বসবাস করতেন।

বগোটার যে সামরিক হাসপাতালে চার শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে-তার আঙিনায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ম্যানুয়েল রনোক। তিনি বলেন, ‘ক্যারোলিনা রামিরেজ ফ্রন্ট আমাকে যেখানেই পাবে মেরে ফেলবে। আমি জানি, আমাকে মারার জন্য লজ্জাহীন ওই মানুষগুলো আমার বাচ্চাদের ব্যবহার করতে চাইবে। তবে, এটা আমি কিছুতেই হতে দেব না।’

গেরিলাদের সম্পর্কে রনোক আরও বলেন, ‘তারা সব সময় আর্থিকভাবে লাভবান হতে চায়। আর যখনই আপনি তাদের কথা মতো না চলবেন, তখনই তাদের শত্রুতে পরিণত হবেন। আমাকে মেরে ফেলার জন্য তারা এখানেও চলে আসতে পারে।’

বিচ্ছিন্ন পোর্তো জাবালো অঞ্চলের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন রনোক। কিন্তু প্রাণভয়ে কয়েক মাস আগেই ওই এলাকা থেকে পালিয়ে আসেন তিনি।

এদিকে, গত ১৭ মে মুরুই আদিবাসী গোষ্ঠীর চার কিশোরকে হত্যার জের ধরে ভিন্নমতাবলম্বী ফার্ক গেরিলাদের সঙ্গে ৬ মাসের শান্তি চুক্তি বাতিল করে সরকার। ওই কিশোরদের জোর করে গেরিলা দলের সদস্য করা হয়েছিল। পরে তারা পালাতে চাইলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

এ অবস্থায় গোলযোগপূর্ণ আরাকুয়ারা অঞ্চলের একটি গ্রাম থেকে হুইটুটু আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রধান হারম্যান মেন্ডোজা হারনান্দেজসহ চার শিশুকে নিয়ে গুয়েভারের স্যান জোস ডেলে আসছিলেন রনোকের স্ত্রী ম্যাগডালেনা মুকুতুই। তাদের বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে পাইলটসহ হুইটোটো প্রধান হারনান্দেজ নিহত হন। তবে মারাত্মক আহত অবস্থায় দুর্ঘটনার পরও চার দিন বেঁচেছিলেন শিশুদের মা ম্যাগডালেনা।

রনোক জানান, স্যান জোস ডেল শহরে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল তার। পরে সেখান থেকে সবাই মিলে বোগোটায় ফেরার কথা ছিল। হুইটুটু নেতা হারনান্দেজেরও বগোটায় আসার কথা ছিল ইয়েতারা নামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের কাজে।

কিন্তু বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হলে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক সবার মৃত্যু হলে ছোট তিন ভাই-বোনকে কাসাভা ময়দা, বিষমুক্ত ফল-মূল এবং নানা ধরনের বিচি খাইয়ে উদ্ধারের আগ পর্যন্ত প্রায় ৪০ বাঁচিয়ে রেখেছিল ১৩ বছর বয়সী বড় বোন লেসলি মুকুতুই।

বর্তমানে শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কে পাবে-তা নিয়ে বিবাদ চলছে রনোক এবং শিশুদের নানা-নানির মধ্যে। নানা-নানির অভিযোগ রনোক তার স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন। এমনকি সৎ মেয়ে লেসলিকে তিনি যৌন হয়রানিরও চেষ্টা করেছিলেন। তবে এসব অভিযোগ জোরেশোরেই প্রত্যাখ্যান করেছেন রনোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেটের ক্ষুধায় খেয়েছেন ২৯ চামচ, ১৯ টুথব্রাশ

জাতিসংঘে বিশাল বহর নিয়ে গিয়ে পতিত সরকারের চর্চা করল অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি

পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি করা সেই দুই পুরুষের জামিন, কারাফটকে উত্তেজনা

উত্তর দিক থেকে সিগন্যাল নেই—শাপলা প্রতীক না পাওয়ার কারণ জানালেন হাসনাত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত