Ajker Patrika

চীন-রাশিয়াকে হটিয়ে সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্ক দখলের নকশা পশ্চিমাদের

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৪৩
চীন-রাশিয়াকে হটিয়ে সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্ক দখলের নকশা পশ্চিমাদের

সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্কের সুরক্ষা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সরকার এবং অন্য সহযোগী দেশগুলো একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। এর আওতায় সাবমেরিন কেব্‌লের নিয়ন্ত্রণ থেকে চীন ও রাশিয়াকে হটিয়ে দেওয়ার নকশা করা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এই পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ‘নিউইয়র্ক জয়েন্ট স্টেটমেন্ট’ নামে যৌথ বিবৃতি প্রস্তুত করেছে, যার একটি অনুলিপি হাতে পেয়েছে পলিটিকো। ২২-২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হতে পারে। ইউরোপের দেশগুলো এই পরিকল্পনায় অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে।

কেব্‌লের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিশাল ডেটার স্রোত বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে। যথেষ্ট কঠিন ও ব্যয়বহুল হলেও কোনো ব্যক্তি বা দেশ চাইলে গোপনে এই কেব্‌লের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে ডেটা চুরি করতে পারে। এ ছাড়া কেব্‌ল কেটে ফেলা ও ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড করারও সুযোগ আছে। এমনটা হলে বৈশ্বিক তথ্যপ্রবাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে।

পশ্চিমা গবেষকদের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া এই নেটওয়ার্কে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি এক মার্কিন কর্মকর্তা দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, তাঁরা রাশিয়ার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন, যেগুলো খুবই দুশ্চিন্তাজনক।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের কাছে ডেটাসহ নেটওয়ার্ক সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখার দাবি করবে এবং যেকোনো ঘটনায় নিজেদের মধ্যে তথ্য ভাগাভাগি করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক জয়েন্ট স্টেটমেন্ট মূলত মিত্র দেশগুলোর কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্ক কিনে নেওয়ার চেষ্টা। একই সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে ৫জি অবকাঠামো থেকে চীনা কোম্পানিগুলোকে হটিয়ে দেওয়ার পশ্চিমা প্রচেষ্টার প্রকাশ। এ ছাড়া সাবমেরিন কেব্‌ল–সংশ্লিষ্ট বাজারে চীনা সরঞ্জামের আধিক্য নিয়েও পশ্চিমা উদ্বেগের ফলাফল এটি। চীনা সরবরাহকারীরা বাজারকে দমবন্ধ অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে বলে তাদের ভয়।

সাবমেরিন কেব্‌ল প্রকল্পে প্রতিযোগী অপারেটরদের তালিকা দীর্ঘ হলেও মার্কিন সরবরাহকারী সাবকম, ইউরোপের অ্যালকাটেল সাবমেরিন নেটওয়ার্কস (নকিয়ার মালিকানাধীন) এবং চীনের এইচএমএন টেক, সেই সঙ্গে ইতালির প্রিসমিয়ান এবং ফ্রান্সের নেক্সানসের মধ্যে বড় লড়াই মূলত হয়ে থাকে। এ ছাড়া জাপানের এনইসি ও চীনের জেডটিটিও এই দৌড়ে আছে।

এই বাজারে দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানিগুলোর একটি এইচএমএন টেক। ২০২০ সাল পর্যন্ত এটি হুয়াওয়ে মেরিন নেটওয়ার্ক নামে পরিচিত ছিল। হেংটং গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নেওয়ার পর এর নাম বদলে হয় এইচএমএন টেক।

চীনা নিয়ন্ত্রণের সাবমেরিন কেব্‌ল নেটওয়ার্কে থাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে পশ্চিমারা। তাঁদের ভয়, চীন যেকোনো মুহূর্তে এই নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারে অথবা সরবরাহকারীদের কেব্‌লের অপারেশন ব্যাহত করার নির্দেশ দিতে পারে। খসড়ায় বলা হয়, দেশগুলো ‘নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত কেবল উপাদান এবং পরিষেবা’—ব্যবসায় নিজেদের মধ্যে এগিয়ে নিতে প্রচারণা চালাবে।

খসড়া ঘোষণায় আরো বলা হয়, স্বাক্ষরকারী দেশগুলো সমুদ্রের তলদেশে কেব্‌ল নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদানকারী, অপারেশন পরিচালনাকারী এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছ মালিকানা, অংশীদারত্ব এবং করপোরেট গভর্নেন্স কাঠামোর জন্য উৎসাহিত করতে চায়। পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, প্রায়শই চীনা প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর কাঠামো অস্বচ্ছ হয় এবং সেগুলো সরাসরি দেশটির সরকার বা সরকার অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত