Ajker Patrika

গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ল কেনিয়ায় শিশুদের দিয়ে যৌন-বাণিজ্য

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৫৯
গোপন ক্যামেরায় তুল আনা হয়েছে শিশুদের দিয়ে যৌন ব্যবসার চিত্র। ছবি: বিবিসি
গোপন ক্যামেরায় তুল আনা হয়েছে শিশুদের দিয়ে যৌন ব্যবসার চিত্র। ছবি: বিবিসি

কেনিয়ার মাই-মাহিউ শহরে ১৩ বছর বয়সী শিশুরাও যৌন-বাণিজ্যের শিকার—বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের গোপন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই এক নির্মম বাস্তবতা। শহরটির অবস্থান একটি ব্যস্ত ট্রানজিট পয়েন্টে। এর ফলে এখানে প্রতিদিন প্রচুর ট্রাক আসা-যাওয়া করে। পণ্য ও যাত্রী নিয়ে যাওয়া হয় উগান্ডা, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গোর দিকে। যাতায়াতনির্ভর এই অর্থনীতির ছায়ায় শহরটিতে বিকশিত হয়েছে যৌন ব্যবসা এবং তা ধীরে ধীরে গ্রাস করছে শিশুদের জীবনও।

দুজন গোপন অনুসন্ধানকারী ছদ্মবেশে যৌন ব্যবসার এই চক্রে ঢুকে পড়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের যৌনকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং ‘ম্যাডাম’ বা ‘সরদারনি’ হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এভাবেই তাঁরা চক্রের ভেতরের বিভিন্ন ঘটনা গোপনে ভিডিও করতে শুরু করেন। এসব ভিডিওতে ধরা পড়ে ন্যামবুরা ও চেপতু নামের দুই নারীর কর্মকাণ্ড। তাঁরা কীভাবে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের এই ব্যবসায় যুক্ত করেছেন, সেসব তথ্যও বের হয়ে আসে।

ন্যামবুরা স্বীকার করেন, তাঁর অধীনে ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে ছয় মাস ধরে কাজ করছে। তিনি বলেন, তারা এখনো বাচ্চা, তাই মিষ্টি দিলে সহজেই রাজি করানো যায়। তিনি আরও বলেন, ‘দিনে নয়, রাতে গোপনে বাইরে বের করি। কারণ, অপ্রাপ্তবয়স্ক নিয়ে কাজ বিপজ্জনক।’

ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই ‘ম্যাডাম’ বা ‘সর্দারনি’। ছবি: বিবিসি
ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই ‘ম্যাডাম’ বা ‘সর্দারনি’। ছবি: বিবিসি

অন্যদিকে চেপতু জানান, অল্পবয়সী মেয়ে বিক্রি করে তিনি অনেক আয় করেন এবং এই মেয়েগুলোর জন্য কিছু নিয়মিত খদ্দের তৈরি হয়। এক ক্লাবে তিনি চারজন মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেন, যাদের মধ্যে একজন ১৩ এবং অন্যরা ১৫ বছরের। তাদের একজন জানায়, দিনে গড়ে পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে তাকে যৌন সম্পর্ক করতে হয়। আর কনডম ছাড়া যৌনতায় রাজি না হলে তাকে বের করে দেওয়া হয়। মেয়েটি বলে, ‘আমি এতিম। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

বিবিসি গত মার্চ মাসে এসব প্রমাণ কেনিয়া পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু পুলিশ জানায়, ভিডিওতে থাকা নারী ও মেয়েদের তাঁরা খুঁজে পায়নি। এই অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি। কেনিয়ায় শিশু যৌন নির্যাতনের মামলায় সাধারণত সাক্ষ্যের অভাবে বিচার বেশি দূর এগোয় না।

২০১২ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কেনিয়ায় প্রায় ৩০ হাজার শিশু যৌন-বাণিজ্যে জড়িত। ২০২২ সালে এক এনজিও গবেষণায় কেনিয়ার কিলিফি ও কোয়ালে অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে যৌনকর্মে বাধ্য করার তথ্য উঠে আসে।

এমনই এক অন্ধকার গলি থেকে কিছু মেয়েকে উদ্ধার করে এনেছেন ‘বেবি গার্ল’ নামে পরিচিত এক সাবেক যৌনকর্মী। ৪০ বছর এই পেশায় থাকার পর ৬১ বছর বয়সী এই নারী এখন মাই-মাহিউ শহরে একটি আশ্রয়কেন্দ্র চালান। এখানে থাকা চার কিশোরী তাদের জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, কীভাবে তারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল এবং কীভাবে নতুন জীবনের জন্য চেষ্টা করছে। ‘বেবি গার্ল’ তাদের বিউটি পারলারের কাজ ও ফটোগ্রাফি শেখাচ্ছেন।

বেবি গার্লের এই কার্যক্রম চলে আসছিল মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএস এইডের অর্থে। তবে সম্প্রতি এই তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর প্রকল্পও সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, এই মেয়েরা এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেনি। কাজ বন্ধ হলে তারা কোথায় যাবে?

তারপরও তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা লিলিয়ান নামে এক কিশোরী নতুন জীবন শুরু করতে আশাবাদী। সে এখন ফটোগ্রাফি শিখছে। লিলিয়ান বলে, ‘আমি এখন ভয় পাই না। কারণ, বেবি গার্ল আমাদের পাশে আছেন। তিনি আমাদের অতীতকে কবর দিতে সাহায্য করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

মেয়াদোত্তীর্ণ ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে সার্ভার, ঝুলে আছে ৭ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত