Ajker Patrika

ডেঙ্গু হলে যেসব খাবার খেতে হবে

মো. ইকবাল হোসেন 
ডেঙ্গু হলে যেসব খাবার খেতে হবে

বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর এক মহা আতঙ্কের নাম। ভয়াবহ গতিতে ছড়াচ্ছে এই রোগ। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা নিতে দেরি করলে বিপদের আশঙ্কা থাকে।

ডেঙ্গু কীভাবে আপনার ক্ষতি করে
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এর জীবাণুগুলো রক্তনালির কৈশিক জালিকায় অবস্থান নিতে শুরু করে। কৈশিক জালিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এটিকে আরও পাতলা করে ফেলে। আবার কিছু জীবাণু মানুষের যকৃৎ ও অস্থিমজ্জায় আক্রমণ করে। ফলে শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার আয়ু গড়ে ১০ দিন। যেহেতু নতুন অণুচক্রিকা তৈরি হয় না, তাই এ সময় দ্রুতহারে অণুচক্রিকার সংখ্যা কমতে থাকে।

তার মানে ভাইরাস একই সঙ্গে যকৃৎ আক্রমণ, অস্থিমজ্জা থেকে প্লাটিলেট তৈরি বন্ধ এবং কৈশিক জালিকাকে পাতলা করে দেয়। ফলাফল হিসেবে রক্তের অণুচক্রিকা কমে গিয়ে কৈশিক জালিকা দিয়ে প্লাজমার ক্ষরণ হতে পারে। এই প্লাজমা ক্ষরণের ফলে রোগীর রক্তচাপ কমে যায়। রোগী শক সিনড্রোমে চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্লাটিলেট কণার অন্যতম কাজ হচ্ছে রক্তক্ষরণ প্রতিহত করা। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে দ্রুত জ্বর কমিয়ে যকৃৎ, অস্থিমজ্জা এবং কৈশিক জালিকাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অনেক বেশি।

ডেঙ্গু জ্বরের খাবার ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য থাকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করা, যেন শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরে বাড়ির স্বাভাবিক খাবারগুলোই একটু ভিন্নভাবে খেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর ব্যবস্থাপনায় তরল খাবারের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। কারণ, কৈশিক জালিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্ত থেকে প্লাজমা বা রক্তরস বের হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ কমে যায়, যা রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রক্তরসের এই ঘাটতি পূরণ করতে বেশি বেশি তরল খেতে হবে। সব মিলিয়ে সারা দিনে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে তিন থেকে চার লিটার বা তারও বেশি পরিমাণে তরল বা তরল-জাতীয় খাবার খেতে হবে। রোগী যদি মুখে খেতে না পারে, তাহলে স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করাতে হবে।

ডেঙ্গুতে যেহেতু অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হয়, তাই এর স্বাভাবিক কাজ ত্বরান্বিত করে এমন খাবার তালিকায় রাখতে হবে। অস্থিমজ্জার জন্য সাহায্যকারী খাদ্য উপাদান হচ্ছে প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, আয়রন, ভিটামিন ডি, জিংক, ফসফরাস ইত্যাদি। ডিম, সামুদ্রিক মাছ, ব্রোকলি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, পালংশাক, বাদাম, বিট, মটরশুঁটি, কলা, তরমুজ, পেঁপে, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি এসব খাদ্য উপাদানের ভালো উৎস। ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২ প্লাটিলেট তৈরি করতে সহায়তা করে।

চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জন্য উপাদেয় খাবার চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ। সবজি হিসেবে ব্রোকলি, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম এবং বিট যোগ করতে হবে। স্যুপ থেকে ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, প্রোটিন ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এই স্যুপ শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি, অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করবে এবং শরীরে শক্তি জোগাবে। তবে স্যুপে মসলার ব্যবহার কমাতে হবে।

টক দই
টক দই একদিকে আপনার শরীরে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করবে, অন্যদিকে এটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বাড়াবে। ফলে শরীরে পুষ্টির উপাদানের শোষণক্ষমতা বেড়ে যাবে। শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা পাবে। 

পেঁপের জুস
পেঁপের জুস ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস। এটি অণুচক্রিকা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৫০০ মিলিলিটার পেঁপের জুস খেতে হবে। 

ভাতের মাড়
ভিটামিন বি-এর উৎস হিসেবে ভাতের মাড় খুবই উপযোগী খাবার। এর সঙ্গে কিছু সেদ্ধ সবজি এবং একটু লেবুর রস যোগ করলে এর গুণাগুণ আরও বেড়ে যায়। ডেঙ্গু রোগীকে ভাতের মাড় খাওয়ালে শরীরে পুষ্টির চাহিদা মিটবে আবার তরলের ভারসাম্যও বজায় থাকবে। 

জাম্বুরার জুস
জাম্বুরা ভিটামিন সি ও পটাশিয়ামের বেশ ভালো উৎস। শরীরে প্লাজমার সঙ্গে পটাশিয়াম বের হয়ে যায়। এর ঘাটতি পূরণ করতে জাম্বুরার জুস অত্যন্ত কার্যকরী। সঙ্গে ভিটামিন এ, বি ও সি পাওয়া যায়। 

আনারের জুস
অস্থিমজ্জার কর্মক্ষমতা বাড়াতে আয়রন, ভিটামিন বি এবং ফসফরাসের প্রয়োজন হয়। সবগুলো উপাদান আছে আনারের জুসে। সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফোলেট, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে। আনারের জুস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি হিসেবে 
কাজ করে।

নরমাল স্যালাইন
প্যাকেটজাত ওরস্যালাইন সঠিক নিয়মে আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। এতে ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি তরলের ভারসাম্য রক্ষা হবে। 

কচি ডাবের পানি
কচি ডাবের পানি সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য ইলেকট্রোলাইটসের ভালো উৎস। এটিও ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে।

কোন খাবার খাওয়া যাবে না 
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর অতিরিক্ত মসলাদার খাবার ও ভাজাপোড়া খাওয়া যাবে না। এসব খাবার রোগীকে শকের দিকে নিয়ে যায়। এই খাবারগুলো হজমের জন্য অনেক পানির প্রয়োজন হয়। এ সময়ে শরীরে এমনিতেই পানির ঘাটতি থাকে। এর মধ্যে যদি খাবার হজম করতে অতিরিক্ত পানি প্রয়োজন হয়, তখন রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে, যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক। তাই এসব খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না।

মো. ইকবাল হোসেন, সিনিয়র পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত