Ajker Patrika

আপনার শরীর ভিটামিন ডি পাচ্ছে তো?

মো. ইকবাল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুষম খাবারের প্রধান ছয়টি উপাদানের অন্যতম হলো ভিটামিন। যেমন ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই, কে। তবে ভিটামিন শরীরের জন্য এমন একটি উপাদান, যা পরিমাণে কম লাগে; কিন্তু এর কাজ অনেক বেশি। এই ভিটামিনের অভাব হলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা দেয়। শরীরে প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব ভিটামিন ভিন্ন ভিন্ন খাবার থেকে পাওয়া যায়। তবে ‘ভিটামিন ডি’-এর গুরুত্ব ভিন্ন। খাবার থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সবটুকু ভিটামিন ডি মেলে না। এর বড় একটি অংশ আসে সূর্যের আলো থেকে। অসংখ্য শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য ভিটামিন ডি অপরিহার্য; যেমন হাড়ের শক্তি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়া এবং এমনকি মেজাজের স্থিতিশীলতা।

কী পরিমাণ থাকা উচিত

শরীরে ভিটামিন ডি-এর স্বাভাবিক মাত্রা হিসাবে ৫০ থেকে ৮০ এনজি/এমএল (ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার) নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। শরীরে এর মাত্রা ২০ এনজি/এমএলের নিচে থাকলে তা ঘাটতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে হাড়ের দুর্বলতাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন ডির মাত্রা হলো ২০ থেকে ৫০ এনজি/এমএল; যা হাড়, দাঁতসহ স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত। ১০০ এনজি/এমএলের বেশি হলে ভিটামিন ডি টক্সিসিটি তৈরি হতে পারে; যা কিডনি জটিলতাসহ অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে।

ভিটামিন ডি-এর অভাবে; বিশেষ করে শিশুদের রিকেটস, বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া (হাড় নরম হওয়া), অস্টিওপোরোসিস এবং হাড় ক্ষয় ও হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া পেশির দুর্বলতা, পেশিব্যথা, ক্লান্তি, চুল পড়ে যাওয়া এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের শরীরে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। তবে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ১০০০-১২০০ আইইউ পর্যন্ত ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-এর মাত্র ২০-৩০ শতাংশ খাবারের মাধ্যমে পূরণ হয়। বাকি ৭০-৮০ শতাংশ, সূর্যের ইউভিবি রশ্মি কাজে লাগিয়ে শরীর তৈরি করে নেয়।

এই অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের এপিডার্মিসের নিচে থাকা ৭-ডিহাইড্রোকোলেস্টেরলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে এবং এটিকে ভিটামিন ডি৩-এ রূপান্তর করে।

ভিটামিন ডি থাকে কোন খাদ্যে

কিছু খাদ্য; যেমন তৈলাক্ত মাছ, স্যামন, ম্যাকেরেল, টুনা এবং সার্ডিন মাছে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কড মাছের তেল ও মলা মাছও ভিটামিন ডি-এর চমৎকার উৎস। ডিমের কুসুম, দুধ, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, ব্রকলি, মাশরুম, সয়ামিট, সয়া টফু ইত্যাদিও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার নিয়মিত খেলে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা কিছুটা পূরণ হয়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শরীরে ভিটামিন ডি-এর শোষণ বাড়ায়।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শহরে বসবাস করে এমন নারী ও শিশুদের প্রায় ৯৫ শতাংশের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব আছে। কারণ, তারা নিয়মিত শরীরে রোদ লাগায় না অথবা ফ্ল্যাট বাসায় পর্যাপ্ত রোদ আসে না। আবার বাইরে গেলেও রোদ প্রতিহত করার জন্য ছাতা বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করে। ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণ করতে সপ্তাহে পাঁচ দিন ১৫-২০ মিনিট করে শরীরে রোদ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে শরীরের ফরসা

বা কালো বর্ণের কারণে এই সময় কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।

শরীরে রোদ লাগানোর ব্যাপারে আমরা কেন বেশ বিভ্রান্তিতে থাকি। হয়তো আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। একজনের তথ্যের সঙ্গে অন্যজনের তথ্যের গরমিল থাকছে। দশজনের মতামত দশ রকমের হচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

প্রাকৃতিক উপায়ে ভিটামিন ডি

আমাদের দেশের বেশির ভাগ জনস্বাস্থ্যবিদের পরামর্শ অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এই সময় নিয়ে গবেষণা কিন্তু আমাদের দেশের কোনো বিজ্ঞানীর নয়। ভিটামিন ডি আবিষ্কারক এবং তথ্য প্রদানকারী সব বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা অন্য কোনো ইউরোপীয় অঞ্চলের। ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা মতে, সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট সারা গায়ে রোদ লাগিয়ে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব। তবে শরীর ঢেকে রাখলে কিংবা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হলে এই ভিটামিন ডি উৎপাদন কম হবে।’

আমরা জানি, ওপরে বর্ণিত দেশগুলোতে সব সময় শীতকাল বিরাজমান। তাই এ ধরনের ফর্মুলা শীতপ্রধান দেশের জন্য প্রযোজ্য হলেও আমাদের দেশের জন্য তা নয়। বাংলাদেশ হলো ষড়ঋতুর দেশ। এখানে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে রোদের তীব্রতাও আলাদা থাকে। সে কারণে আমাদের দেশে ঋতু অনুযায়ী শরীরে রোদ লাগানোর সময়ও আলাদা হবে।

আসছে শীত

শীতকালে আপনি অবশ্যই বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে রোদ লাগাবেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে যদি বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে রোদ লাগান, তাহলে স্কিন বার্ন হয়ে যাবে। কারণ, এই সময়ে রোদের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে।

সে জন্য আমাদের দেশে রোদের তীব্রতা অনুযায়ী শরীরে রোদ লাগাতে হবে। তবে সহনীয় তাপের রোদ লাগাবেন। যে রোদে আপনার খুব বেশি অস্বস্তি হবে না, আবার আরামও লাগবে না। যেমন গরমের সময়ে তা সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে হতে পারে, আবার শীতের সময় দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে।

অনেকে মনে করেন, পোশাক পরে শরীরে রোদ লাগালে হয়তো কাজ হবে না। তবে আপনি পোশাক পরেও রোদ লাগাতে পারেন, তবে কালো রঙের পোশাক পরে শরীরে রোদ লাগাবেন না। যদি সুযোগ থাকে, তাহলে হাত, পা এবং মুখের যতটুকু উন্মুক্ত রাখা যায়, ততটুকু মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

লেখক: সিনিয়র পুষ্টিবিদ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদক পাচার: ইয়াবার আঁতাতে জড়িত সবাই

যৌনকর্মীকে হোটেলে ডেকে ছিনতাই, সিঙ্গাপুরে দুই ভারতীয়কে কারাদণ্ড ও বেত্রাঘাত

জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর মোড়: বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ব্যান্ড সদস্যের

২০ দফায় শর্ত সাপেক্ষে সম্মতি দিল হামাস, ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গুলতেকিন খানের পোস্ট, কেন এতো আলোচনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত