Ajker Patrika

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

আইসিইউতেও নেই ডায়ালাইসিস সুবিধা

  • অস্ত্রোপচারের পর অনেকে কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হন।
  • প্রতি শয্যায় লাইফ সাপোর্ট মেশিন নেই।
  • পুরো হাসপাতালে নেফ্রোলজিস্ট একজন।
  • সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থাও নাজুক।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর কিছুসংখ্যক রোগীর কিডনির ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত হৃদ্‌রোগ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) ডায়ালাইসিস সুবিধা নেই। সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থায় রয়েছে ঘাটতি। আইসিইউতে পর্যাপ্তসংখ্যক লাইফ সাপোর্ট মেশিন ও নার্স নেই। এসব সীমাবদ্ধতা সংগত কারণেই রোগের জটিলতা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনির স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী অস্ত্রোপচারের পর কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত হন। বিশেষ করে হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সময় ‘হার্ট-লাং মেশিন’ ব্যবহারের কারণে আকস্মিকভাবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার (একিউট কিডনি ইনজুরি—একেআই) ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ সমস্যা হলে হৃদ্‌রোগীর ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। হৃদ্‌রোগের যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের পরই রোগীদের সেটি প্রয়োজন হতে পারে।

স্ট্রোক, মস্তিষ্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ গবেষণা সংস্থা ফ্লোরি ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের তথ্য অনুযায়ী, হার্ট-লাং মেশিন ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করা রোগীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ একেআইয়ে ভোগেন। এসব রোগীর ৬ শতাংশের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারিতে একেআই একটি পরিচিত সমস্যা, যা রোগীর জীবনে স্বল্প ও দীর্ঘ—উভয় মেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন কলেজের তথ্য অনুযায়ী, একটি আদর্শ কার্ডিয়াক আইসিইউতে যেসব ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম অপরিহার্য, ডায়ালাইসিস সুবিধা তার অন্যতম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনআইসিভিডিতে রোগীদের ডায়ালাইসিস করার কোনো সুবিধা নেই। অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের যে আইসিইউতে রাখা হয়, বর্তমানে সেখানে ৩০টি শয্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫টি শিশুরোগীদের জন্য। প্রতিটি শয্যার জন্য একটি লাইফ সাপোর্ট মেশিন থাকার কথা। তবে এই আইসিইউতে মেশিন রয়েছে ১১টি।

নার্স রয়েছেন ৩৭ জন। অথচ চিকিৎসকদের মতে, প্রত্যেক রোগীর জন্য একজন হিসাবে তিন শিফটে ৯০ জন নার্স থাকা উচিত।

হৃদ্‌রোগের সরকারি সর্বোচ্চ এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইসিইউতে সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নাজুক। নার্সের সংখ্যায় ঘাটতি থাকায় রোগীর সেবার জন্য কখনো কখনো পরিবারের সদস্যদের আইসিইউতে প্রবেশ করতে হয়। কোনো কোনো রোগীর স্বজনেরা বাইরে থেকে খাবারও সরবরাহ করেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। আইসিইউর ব্যবস্থাপনায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন থাকলেও তা এখানে নেই।

হাসপাতালের পোস্টকার্ডিয়াক সার্জারি আইসিইউ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক এ এম জিয়াউল হক মাসুম আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘একটি আদর্শ কার্ডিয়াক আইসিইউ তৈরির চেষ্টা করছি। শুরু থেকে বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইসিইউতে সংক্রমণ প্রতিরোধ, পরিবেশগত দিক ও দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি তিন মাসে ফ্লোর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কালচার (জীবাণু শনাক্তকরণ) করা হয়। যন্ত্রাংশ নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় জীবাণুমুক্ত পরিষেবা বিভাগ (সিএসএসডি) থেকে পরিশুদ্ধ করা হয়। তবে রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়ার সুবিধা এখানে নেই। আইসিইউতে দক্ষ লোকবলসহ কয়েকটি ডায়ালাইসিস মেশিন প্রয়োজন।’

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিডনি জটিলতা রয়েছে এমন হৃদ্‌রোগীদের অস্ত্রোপচারের পর কারও কারও ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হতে পারে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন চেয়েছি। একই সঙ্গে ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান এবং নার্সও প্রয়োজন হবে। আশা করি শিগগির তা পাব।’

হৃদ্‌রোগীদের কিডনি ছাড়াও স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, সেখানে মাত্র একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ থাকলেও কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড থোরাসিক অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক এ টি এম খলিলুর রহমানও ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা থাকার ওপর জোর দেন। এ নিয়ে আজকের পত্রিকার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক হৃদ্‌রোগীর কিডনির জটিলতা থাকে। কেউ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। আবার কেউ বাইপাস সার্জারির বহু বছর আগে থেকে এমন ওষুধ সেবন করেন, যা কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। কারও কিডনি আকস্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক ডায়ালাইসিস অপরিহার্য। কয়েকটি ডায়ালাইসিস মেশিন এবং প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকলে এই ধরনের জটিল রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।’

এ ছাড়া সাধারণ আইসিইউ এবং কার্ডিয়াক আইসিইউর পার্থক্য উল্লেখ করে অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, কার্ডিয়াক আইসিইউ পরিচালনায় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শয্যার তুলনায় পাঁচ গুণ নার্স থাকা উচিত। একটি শয্যার জন্য প্রতিদিন তিন শিফটে একজন করে নার্স প্রয়োজন। যে নার্স রাতের শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁকে পরদিন ডিউটি দেওয়া যায় না। তা ছাড়া অনেক কারণে নার্সদের ছুটি প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত জনবল না থাকলে রোগীর সেবা বিঘ্নিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত