Ajker Patrika

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কোলায় কমে মাইগ্রেন—ভাইরাল টোটকাটি কি বিজ্ঞানসম্মত

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাইগ্রেনের ভোগান্তি বিশ্বজুড়ে। শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যেই ১ কোটিরও বেশি মানুষ মাইগ্রেনে ভোগেন। এই অসুখ কর্মজীবন শেষ করে দিতে পারে, ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে, এমনকি জীবনকেও ছোট করে দিতে পারে। তাই এর থেকে পরিত্রাণের জন্য যখন কোনো সহজ সমাধান সামনে আসে তখন অনেকেই সেটি চেষ্টা করে দেখেন। এই যেমন বলা হচ্ছে—কোলা-জাতীয় পানীয় আর আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলে মাইগ্রেন কমে যায়!

এ বিষয়ে রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইগ্রেন থেকে সাময়িক পরিত্রাণের জন্য কোলা আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের ধারণাটি সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়েছে টিকটকে ভাইরাল ‘দ্য ম্যাকমাইগ্রেন মিল’ নামে একটি টোটকা থেকে। যারা চেষ্টা করেছেন তাঁরা বলছেন, ফুল ফ্যাট কোলা আর সল্টি ফ্রাইজ খেলে তাঁদের মাথাব্যথা অনেকটা সহনীয় হয়ে যায়। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

অক্সফোর্ডশায়ারের নিক কুক বলেন, ‘মাইগ্রেনের ওষুধ সব সময় কাজ করে না। যখন চোখের পাশে তীব্র চাপ অনুভব করি, তখন যদি সময়মতো কোলা খাই, মাঝে মাঝে উপকার পাই।’ তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন, এই পানীয় তাঁর প্রেসক্রিপশনে থাকা ‘অ্যামিট্রিপটাইলিন’ ট্যাবলেটের বিকল্প নয়।

২৭ বছর বয়সী কেইলি ওয়েবস্টার সারা জীবন ধরে মাইগ্রেনে ভুগছেন। তাঁর মতে, চিপসের লবণ হয়তো আক্রমণ ধীর করে, কিন্তু এটা কোনো চিকিৎসা নয়। কফি, লবণ, চিনি মিলিয়েও মাইগ্রেন সারানো সম্ভব নয়। চিকিৎসায় তিনি বোটক্স ইনজেকশন নেন—মাথা, মুখ, গলায় ডজনখানেক সুচ ঢুকিয়ে—যা কিছুটা উপশম দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইগ্রেন শুধুমাত্র মাথাব্যথা নয়; এটা এক জটিল স্নায়বিক অসুখ। এটি ঘাড় ব্যথা, ঝাপসা দেখা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, এমনকি চলাচল নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাজার হাজার বছর আগেও মানুষ এই রোগে ভুগেছে, কিন্তু এর প্রকৃত কারণ এখনো অজানা।

মাইগ্রেন কেন হয়, কার হয়, কীভাবে কাজ করে—এসব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান এখনো পুরোপুরি জানে না। তবে কিছু উপসর্গ আছে, যেমন ঘুম ঘুম ভাব, আচমকা মুড বদল, লবণ-চিনির প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি আক্রমণের পূর্বাভাস হতে পারে।

মাইগ্রেন ট্রাস্ট-এর ট্রাস্টি ও জিপি ড. কে কেনিস বলেন, ‘কোলার ক্যাফেইন কিছু ক্ষেত্রে স্নায়ুগত সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়, যা মাইগ্রেনে উপকার দিতে পারে। কিছু ওষুধেও ক্যাফেইন থাকে। তবে নিয়মিত কোলা পান বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন নিজেই সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।’

তিনি আরও জানান, ফাস্ট ফুডে থাকা টাইরামিন নামক যৌগ অনেক সময় মাইগ্রেন বাড়িয়ে দেয়।

দীর্ঘদিন ধরে মাইগ্রেনে ভুগছেন অ্যালোইজ আন্ডারউড। একের পর এক টোটকা চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি। মাইগ্রেনের কারণে তাঁকে একাধিক চাকরি ছাড়তে হয়েছে। এখন ঘরে বসে ফুল শুকিয়ে ফ্রেমে বন্দী করে একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা চালান। তিনি বলেন, ‘মাইগ্রেন আমার জীবনটাকে ছোট করে ফেলেছে।’

নিউরোলজিস্ট প্রফেসর পিটার গডসবি জানিয়েছেন, নতুন ধরনের ওষুধ ‘গেপ্যান্টস’ মাইগ্রেনের আক্রমণের আগে ব্যথার সংকেত আটকে দিতে সক্ষম হতে পারে। তবে যথাসম্ভব নিয়মিত জীবন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং আগাম উপসর্গ চিনে ফেলার মতো জীবনযাপনের ধারাও গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষে সবার আগে যার কথা বলা হয়েছিল, সেই নিক কুকের কথাই ধরা যাক। তিনি বলেন, ‘আমি পার্টিতে কোলা আর চিপস খাই ঠিকই, কিন্তু রোদে সানগ্লাস পরি, নিজের খাবার ও বালিশ সঙ্গে নিয়ে যাই। কারণ ক্ষুধাও মাইগ্রেনের সূচনা হতে পারে। এটাই আমার বেঁচে থাকার পদ্ধতি।’

অর্থাৎ ভাইরাল হওয়া হ্যাকটি কিছুটা উপশম দিতে পারে বটে, তবে মাইগ্রেনের চিকিৎসায় এখনো সতর্কতা, বিজ্ঞান আর ধৈর্যই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত