Ajker Patrika

বাংলাদেশে একবছরে ৪ হাজারেরও বেশি রুপ বদলেছে করোনা ভাইরাস  

প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২১, ১৪: ০০
বাংলাদেশে একবছরে ৪ হাজারেরও বেশি রুপ বদলেছে করোনা ভাইরাস  

২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশিবার রূপ বদল করেছে করোনা ভাইরাস। যার ৩৪টি একেবারেই নতুন রূপ বলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষকরা নতুন এসব রূপের নাম দিয়েছেন ‘বাংলা মিউটেশন’।

নতুন রূপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সার্স কভ-২ নামে জিনোমে পাওয়া গেছে ৪ হাজার ৬০৪ রকমের ভিন্নতা। পৃথিবীর অন্য কোথাও এতো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় জিনোম সিকুয়েন্স পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এখানে একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ইউরোপ অঞ্চলের জিনোম সিকুয়েন্সের ভাইরাস।

ডিসেম্বরের শুরুর দিক পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ডাটাবেস ‘গ্লোবাল ইনফ্লয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’-এ জমাকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পুর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে করা এই গবেষণায় বাংলাদেশি সার্স কভ-২ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সার্স কভ-২ এর জিনোম সিকুয়েন্সের।

গবেষক দলের প্রধান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আদনান মান্নানের মতে, ‘এই মিউটেশন বা জিনগত ভিন্নতার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা খতিয়ে দেখা খুব গুরত্বপূর্ণ। কোনো বিশেষ উপসর্গের পেছনে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র মিউটেশনগুলো দায়ী কি না কিংবা কোন মিউটেশন থাকলে রোগীরা উপসর্গবিহীন হয় সেটাও দেখা প্রয়োজন। কারণ সাম্প্রতিক দেশে আনুপাতিক হারে উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গবেষক দলের অন্যতম প্রধান ইউএসটিসির শিক্ষক রাসেল দাশ বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক হলো বাংলাদেশের ইউনিক মিউটেশনগুলো অঞ্চলভিত্তিক। যেমন কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু জেলা বা অঞ্চলেই দেখা গেছে। ঢাকায় তিনটি সুনির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন দেখা গেছে। যেটা আর কোথাও দেখা যায়নি।

একইভাবে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, যশোর, মৌলভীবাজার ও ময়মনসিংহে নিজস্ব জেনেটিক ভিন্নতা ছিল। এক্ষেত্রে সেসব জেলার ভৌগলিক অবস্থান, জীবনযাপন এবং পরিবেশগত নিয়ামকগুলো হয়তো ভাইরাসকে বদলে দিতে ভূমিকা রেখেছে।

গবেষণা সমন্বয়কারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুব হাসানের মতে, এতো ইউনিক মিউটেশন থাকলে  দেশে নতুন কোনো ভেরিয়েন্ট বা প্রকরণ উদ্ভব হওয়ার খুব বড় একটা সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে এসব মিউটেশন বহন করা ভাইরাসগুলো গবেষণাগারে দ্রুত নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ।

গবেষকদলের মতে, বাংলাদেশের নতুন জিনগত মিউটেশনগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ও প্রয়োগকৃত ভ্যাকসিন কতোটা কার্যকর সেটাও গবেষণা করে দেখা জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য ভ্যাকসিনের নকশাতে কোনোরকম পরিবর্তন আনা দরকার কি না তা খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। এছাড়াও এলাকাভিত্তিক জিনোম সিকোয়েন্স করাও জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।

গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহবুব হাসান ও আদনান মান্নান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) শিক্ষক রাসেল দাশ। এছাড়াও তত্ত্বাবধানে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম মাহবুবুর রশিদ ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জুনায়েদ সিদ্দিকি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে ছিলেন- মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হামিদ হোসাইন, নাজমুল হাসান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন, রাশেদুজ্জামান ও মেহেদী হাসান।  

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিক্ষোভ থেকে সহিংসতায় উত্তাল ভাঙ্গা, মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতনকাঠামো ৬ মাসের আগেই চূড়ান্ত করার আশ্বাস

১২ জেলায় বন্যার শঙ্কা, বৃষ্টি থাকবে কত দিন—জানাল আবহাওয়া অফিস

পদ্মা সেতু এলাকায় বসছে সোলার প্যানেল, ২৩ কোটি টাকার কাজ পেল ওমেরা

পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের সময় বাজল উৎসবের গান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত