Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /পাকিস্তানের কোনো ঘাঁটি ধ্বংস করেনি ভারত, ভিডিওটি ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ কর্মসূচির

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ১৩
জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম পর্যটন এলাকায় ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এই হামলায় জড়িত সন্দেহে তিন ব্যক্তির স্কেচ ও নাম প্রকাশ করেছে ভারতীয় পুলিশ। তাদের দাবি, এই তিনজনের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং সবাই পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে জড়িত।

সেদিনই পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টর দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করায় বিএসএফের এক সদস্যকে আটক করে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষীরা। হামলার জের ধরে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের পর উত্তেজনা বাড়ছে। জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর টানা ষষ্ঠ দিন দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

এরই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। ৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে রাতের বেলা অসংখ্য মানুষের সমাগম দেখা যাচ্ছে। জনসমাগমস্থলের কাছেই ধোঁয়াচ্ছন্ন এলাকা দেখা যাচ্ছে। গাঢ় হলুদ রং দেখে মনে হচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলীর নিচে আগুন জ্বলছে। অনেককে ফোনের ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করতে দেখা যায়।

একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। পোস্টগুলোর ক্যাপশনে লেখা, নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তান ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে একাধিক সেনাপোস্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না।

তবে ব্লিটজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ২৭ এপ্রিল বেলা ১টা ১৬ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী টেররিস্ট রিপাবলিক অব পাকিস্তানের প্রতি কোনো দয়া দেখাবে না। নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) গত রাতে পাকিস্তানের একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত)

আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৩ লাখ ৭১ হাজার বার দেখা হয়েছে, রিঅ্যাকশন পড়েছে ৬ হাজার ৭০০। এ ছাড়া এতে ২৫৮টি কমেন্ট পড়েছে এবং রিপোস্ট (শেয়ার) হয়েছে ১ হাজার।

Puja Roy, সন্দীপ ভৌমিকChayan Roy নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পাকিস্তানে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)–এর এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০২৩ সালের ১১ মে প্রকাশিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্য, জনসমাগম, লোকজনের পোশাক, ধোঁয়া, গাঢ় হলুদের আলোর ও পরিপার্শ্বের সাদৃশ্য রয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে পিটিআই- এর এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে পিটিআই- এর এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘কাশ্মীর হাইওয়েতে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পিটিআইয়ের নেতা–কর্মীদের ওপর গুলি চলানো হয়। জনগণকে রাস্তায় নেমে এসে পাকিস্তানকে রক্ষা করার সময় এখন।’ (ইংরেজি থেকে অনূদিত)

ভিডিও প্রকাশের তারিখ ও সংশ্লিষ্ট কি–ওয়ার্ড গুগলে সার্চ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার কারণে দলটির সমর্থকেরা দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পিটিআই সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার জাতীয় দৈনিক দ্য ডন–এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, পেহেলগামের হামলার পর চলমান উত্তেজনার মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে ২০২৩ সালের ১১ মে পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দলীয় সমর্থকদের বিক্ষোভের ভিডিওকে সীমান্তের সংঘাত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত