Ajker Patrika

রাস্তার ওপর খুঁটি নাকি খুঁটির নিচে রাস্তা

সম্পাদকীয়
রাস্তার ওপর খুঁটি নাকি খুঁটির নিচে রাস্তা

ময়েন উদ্দিন রাতের অন্ধকারে এক রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ সাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগল একটা খুঁটির। তিনি রাস্তার এক পাশে সরে যাননি। ওই খুঁটিটাই বরং রাস্তার মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে, অর্থাৎ মদ্যপ অবস্থায় যাচ্ছেতাই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তিনি, এমন নয়। খুঁটিটি রাস্তার মাঝখানেই ছিল। নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।

ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নজিরপুর থেকে মহজমপুর যেতে রাস্তার মাঝখানে এই বৈদ্যুতিক খুঁটিটি রয়েছে। যানবাহন নিয়ে মানুষের চলাচলে তা বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। শুধু ময়েন উদ্দিন নন, অনেকেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় বিড়ম্বনায় পড়েন, ধাক্কা খেয়ে আহত হন। প্রায় এক বছর ধরে এ ধরনের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চলাচলকারীরা। আজকের পত্রিকায় এ রকম একটি খবর ছাপা হয়েছে।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, রাস্তা বানানোর পর কেউ এসে খুঁটি বসিয়ে গেছে, এমন নয়। খুঁটিটি আগেই সেখানে ছিল; বরং পাকা সেই রাস্তাটি পরে বানানো হয়েছে। যখন রাস্তা কাঁচা ছিল, তখন খুঁটিটি সেলিম উদ্দিন নামের এক বাসিন্দার উঠানের দিকে চেপে ছিল, সেটি রাস্তার মাঝে ছিল না। বছরখানেক আগে রাস্তা পাকা করার সময় জমি মাপতে গিয়ে খুঁটিটি রাস্তার জমির একদম মাঝ বরাবর পড়ে যায়।

এলাকাবাসী তখন ওই খুঁটি না সরিয়ে রাস্তা করতে বাধা দেয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এদিকে সেলিম উদ্দিনও পড়েছেন বিপাকে।রাস্তা দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে না পারলে তাঁর উঠান দিয়ে যায়। এতে তাঁর উঠান নষ্ট হয়ে যায়।

উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। দৈর্ঘ্য ১ কিলোমিটার। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগেই যেন খুঁটিটি রাস্তার মাঝখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়—এমন চিন্তা এলাকাবাসীর আছে বলেই রাস্তা বানানোর আগে থেকে তারা খুঁটি সরানোর দাবি করে আসছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতেও ধরনা দিয়েছে। তবু খুঁটি তার আগের জায়গাতেই আছে!

পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, স্থানান্তরের ফি পেলেই তারা খুঁটি সরিয়ে নেবে। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুনিমুল হক জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যে ফি দেওয়া হবে।

এই যে অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নমুনা, তা কিন্তু আমাদের দেশে কম নয়। যেমন সড়ক বিভাগের কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ শুরু হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক কেটে বারোটা বাজালে আবার সড়ক বিভাগের কাজ শুরু হয়। আবার কোনো ত্রুটি সংশোধন করতে বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ শুরু করে। এভাবে চলতেই থাকে সারা বছর। আর এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ যে অসাধুতা ও দুর্নীতি করে নিজের পকেট ভরে, সেই সবের খবর কিন্তু প্রায়ই শোনা যায়।

ফাগুয়াড়দিয়াড়ের ওই রাস্তা এমন দুর্নীতিবাজদের নজরে না পড়ুক। এলাকাবাসী সচেতন হলে আর আইনের লোকেরা সাহায্য করলে, এমনটা আশা করা যায়। অসাধুরা আইন মেনে চলবে, এমনটা আশা করা তো স্বপ্ন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত