Ajker Patrika

সুকুমারের তুলনা সুকুমারই

সুকুমার রায়
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ০৯: ০৯
সুকুমারের তুলনা সুকুমারই

একটা নিমন্ত্রণ পেলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। কলকাতার এলগিন রোডের কয়েকজন তরুণ ‘হরবোলা’ নাম দিয়ে একটা দল গড়েছে। তারা লিখেছে, ‘হাসতে ভুলে গেছি বলে দুর্নাম আছে আমাদের (বাঙালির)। সুকুমার রায়কে কেন্দ্র করে সেই দুর্নাম কিছুটা যদি আমরা দূর করতে পারি, তাহলেই এই উদ্যোগ সার্থক হবে।’

তাদের প্রথম পালায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তাদের এই থিয়েটার হচ্ছে, তাদের ভাষায় ‘সকের থিয়েডার’, মানে ‘শখের থিয়েটার’।

সুকুমার রায় মানেই হাসির ফোয়ারা। নাট্যমূলে হাস্যরসে টইটম্বুর, সেখানে অভিনয় হবে কী করে? প্রতি শব্দে রস। খানে ‘তিয়েটারি’ করতে গেলেই তো সব কেচে যাবে। অর্থাৎ, সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায়, ‘করুণকে করুণতর, বীরকে বীরতর, হাস্যরসঘনকে ঘনতর)’ করে ফেললে সেটা চপলতায় পরিণত হয়। ‘সুকুমার রায়ের রচনা হাস্যরসে এতই কানায় কানায় ভরা যে, তাতে কোনো কিছু যোগ দিতে গেলেই সর্বনাশ।

মুজতবা আলী বিশ্বসাহিত্যে সুকুমার রায়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো কোনো লোক খুঁজে পেলেন না। এ রকম হাস্যরসিক বাংলা সাহিত্যে তো একটিও নেই; ফরাসি, ইংরেজ, জার্মান সাহিত্যেও নেই। শুধু জার্মান সাহিত্যের ভিলহেলম বুশ সুকুমারের স্ব-শ্রেণি না হলেও ঠিক সুকুমারের মতো অল্প কয়েকটি আঁচড় কেটে খাসা ছবি তৈরি করতে পারেন।

তাঁদের মধ্যে পার্থক্য আছে এক জায়গায়: ভিলহেলম বুশ ঘটনাবহুল গল্প বলেন ছড়ায় ছড়ায়, সেটা লেখা অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু সুকুমার? সুকুমারের ‘আবোল-তাবোল’-এ কোনো গল্প নেই। ছড়াগুলো নিজেরাই স্রেফ হাস্যরস, তাতে অ্যাকশন নেই, গল্প নেই, হাসি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো কিছুর স্থান নেই।

ফরাসিরা নাকি এটিকেটের কারণে হাসে না। একদিন প্যারিস শহরে এক ফরাসি ক্যাফেতে সুকুমারের ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ অনুবাদ করে শোনালেন মুজতবা আলী। ফরাসিরা এমন হো হো করে হেসেছিল যে তাদের হাসি থামানোর জন্য বারবার অনুরোধ করতে হয়েছিল। সুকুমারের তুলনা সুকুমারই।

সূত্র: রচনাবলি, ২য় খণ্ড, সৈয়দ মুজতবা আলী, পৃষ্ঠা ১৮৭-১৮৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত