Ajker Patrika

রসিকদা

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১২: ১০
রসিকদা

জন্মসূত্রে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাড়ি ছিল পূর্ব বাংলার ফরিদপুরের চান্দ্রা গ্রামে; অর্থাৎ তিনি বাঙাল। কলকাতায় তাঁর উত্থান হলেও নিজের জীবন নিয়ে কথা বলতে গেলে ফরিদপুরকে এড়াতে পারতেন না তিনি।

কে বাঙাল, আর কে বাঙাল নয়, সেটা ঠিক করার ব্যাপারে কবির বন্ধু সুরঞ্জন সরকারের একটা অদ্ভুত তত্ত্ব ছিল: ‘শেয়ালদা ইস্টিশন থেকে রেলগাড়িতে চেপে যারা দেশের বাড়িতে যায়, তারা সবাই বাঙাল।’

চান্দ্রা গ্রামের একটি বাড়ি ছাড়া অন্য বাড়ির লোকদের পদবি ছিল চক্রবর্তী, ঘোষ, বসু, শিকদার আর দাশ; অর্থাৎ সবাই ভদ্দরলোক। তাঁরা কেউ নিজের জমি চাষ করতেন না, অন্যকে দিয়ে করাতেন। তাঁদের মধ্যে রসিক প্রামাণিক শুধু সবার চুল ছাঁটতেন আর নিজের জমিতে চাষ করতেন। তাঁর বাড়িতে চুল কাটাতে গেলে কখনো কখনো তাঁর স্ত্রী হেসে বলতেন, ‘ও ভাই, এখন তো তোমাগো দাদারে এইহানে পাবা না, সে তো মাঠে গেছে।’

একবার চুল ছাঁটাতেই হবে। এমনিতে রসিকদাকে বাড়িতে না পেলে পরে আরেক দিন আসা যেত। কিন্তু সেবার অন্যের গরজটা ছিল বেশি। গ্রাম-সম্পর্কে এক দাদার বিয়ে, নীরেনকে নিতবর হয়ে যেতে হবে, তাই চুল ছাঁটানো বাধ্যতামূলক। নীরেন গেলেন রসিকদার বাড়ি। গিয়ে শুনলেন তিনি বাড়ি নেই। লাঙল ঠেলতে গেছেন। অনেক ভেবে নীরেন বললেন, ‘বউদি, ঠিক আছে, তার যন্তরগুলো দাও তো।’

যন্তর মানে দাঁতভাঙা মোটা চিরুনি, কাঁচি আর ক্ষুর।

এই সব যে বাক্সে থাকে, সেই বাক্সটা কাঁধে করে নিয়ে নীরেন হাজির হলেন রসিকদার চাষের জমিতে। আলের ওপর বাবু হয়ে বসে থাকলেন আর রসিকদা ছেঁটে দিলেন চুল।

ফেরার সময় রসিকদা বললেন, ‘ঠাউর ভাই, কাউরে য্যান কইয়ো না যে মাঠের মধ্যে আমি তোমার চুল ফালাইছি। কইলে কিন্তু রইক্ষা নাই। হক্কলে যদি এইখানে আইসা আমারে ধরে, তাইলে আর মাঠের কাম করণ যাইব না।’

 

সূত্র: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নীরবিন্দু, পৃষ্ঠা ১১-১২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত