Ajker Patrika

গোড়ায় গলদ

সম্পাদকীয়
গোড়ায় গলদ

শুক্রবারের আজকের পত্রিকায় প্রথম পাতায় ‘সচিবালয়ে এক ভবনেই ২৪০০ টন এসি’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি যেকোনো পাঠকের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের কাণ্ডজ্ঞানের অভাবের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসবে। খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ-সংকটে মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা, যখন বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, তখন বাংলাদেশ সচিবালয়ের নতুন একটি ভবনে বসানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। ২০ তলা এই ভবনে বসবে ২ হাজার ৪০০ টন এসি। এতে খরচ পড়বে ৫২ কোটি টাকা। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক এই চিলার এয়ারকুলার চালাতে দেড় থেকে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। আর এটি পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা।

প্রকাশিত খবর থেকে আরও জানা যাচ্ছে, কেবল সচিবালয়ের দুটি ভবন নয়, রাজধানীতে সরকারের এমন ১৩টি স্থাপনা রয়েছে, যেখানে সেন্ট্রাল এসি বা কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হয়েছে।

এত ব্যয়বহুল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা কি আমাদের দেশের জন্য খুব জরুরি ছিল? এর চেয়ে কম ব্যয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা হলে কি কর্মকর্তারা কাজ করতে খুব অসুবিধায় পড়তেন?

এটা যে খুব জরুরি ছিল না, তা  নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিবের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। ইকবাল হাবিব বলেছেন, ‘সচিবালয়ের চারপাশ অনেকটা প্রকৃতিবান্ধব। এখানে সেভিং ডিভাইস, লোভার সিস্টেম, ক্রস ভেন্টিলেশন—এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে পাঁচতলার ওপরে ভবন হলেই তাপ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন বিদেশি স্থাপনা অনুকরণ করে ক্রস ভেন্টিলেশন বন্ধ করা হচ্ছে। করিডর, লিফটসহ সব উন্মুক্ত স্থান এসির আওতায় আনা হচ্ছে। অথচ একটু চিন্তাভাবনা করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেই মিটিং রুম ছাড়া আর কোথাও এমন এসির প্রয়োজন হবে না। এখন সেন্ট্রাল এসির নামে যেভাবে কাচ দিয়ে ভবন ঢেকে ফেলা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বিলাসিতা ও অন্যায়। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।’

কিন্তু এই বিলাসিতা ও অন্যায় বন্ধ করবে কে? যাঁরা নীতিনির্ধারক, তাঁরাই তো বিলাসিতা, অন্যায় ও অপচয়ে অভ্যস্ত। সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধা নয়, তাঁরা নিজেদের সুখ ও আরাম নিশ্চিত করার জন্য সারাক্ষণ সচেষ্ট। ভালো থাকলে বা আরামে থাকলে সবাই থাকব, আবার কষ্টের অবস্থা হলে সবাই মিলে সেটা ভাগাভাগি করে নেব, এই নীতিবোধ যদি না থাকে, তাহলে সমাজে বৈষম্য ও অনাচার বাড়তেই থাকবে।

দেশে বিদ্যুৎ-সংকট তীব্র হওয়ার পর সারা দেশে লোডশেডিং বেড়েছে। ঢাকার বাইরে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায়ও সরকারি সংস্থাগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে দিন দিন বিলাসিতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সচিবালয়ে বড় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ কক্ষে না থাকলেও এসি ও ফ্যান চালু থাকার খবর গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে।মানুষের রোষানলে পড়ার আগে গলদগুলো দূর করার কথা ভাবা হবে কি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

সরকারের কমিটি পছন্দ হয়নি, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ‎প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত