Ajker Patrika

খেলনার পিস্তল কিনে আসামি

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
খেলনার পিস্তল কিনে আসামি

‘নিজ গ্রামের বাড়িতে পশু-পাখি তাড়ানোর জন্য শখের বশে ইতালি থেকে ই–কমার্স সাইট অ্যামাজনের মাধ্যমে কয়েকটি খেলনা পিস্তল কিনেছিলাম। এসব কেনার রসিদ ও ক্যাটালগ প্যাকেটের সঙ্গেই ছিল। পোস্ট অফিসের চালানপত্রেও মালামালগুলো গৃহস্থালি ও খেলনার ঘোষণা ছিল অথচ কুরিয়ারে দেশে আসার পর খেলনা পিস্তলগুলো অরিজিনাল (আসল) আগ্নেয়াস্ত্র বলে ঘোষণা করে কাস্টমস ও পুলিশ আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে। আমাকে অপরাধী বানানো হয়েছে।’

আজকের পত্রিকার কাছে কথাগুলো বলছিলেন রাজীব বড়ুয়া; যিনি গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ইতালি থেকে  আসা চারটি ‘পিস্তল’ জব্দের ঘটনার মামলার প্রধান পলাতক আসামি। একটি মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাজীব এমন দাবি করেন। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন।

এদিকে পিস্তল ও গুলিগুলো খেলনার বলে দুবার ব্যালিস্টিক পরীক্ষায় প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবু মামলা থেকে মুক্তি মেলেনি রাজীব ও তাঁর এক বাল্যবন্ধুর।

রাজীব বলেন, ‘মালামালগুলো যেদিন কাস্টমসে আটক করা হয়। তার আগেই আমি ইতালি থেকে দেশে আসি। আমার ছোটবেলার বন্ধুর ঠিকানায় ইতালি থাকাকালে পার্সেলগুলো পাঠিয়েছিলাম। তাঁর কাছ থেকে পরে পার্সেলটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু অরিজিনাল অস্ত্র আনার অভিযোগে আমাকে ফাঁসানো হয়।’

মামলার আসামি রাজীব আরও বলেন, ‘আমি বৈধভাবে মালামালগুলো এনেছিলাম। সব কাগজপত্র আমি জমা দিয়েছিলাম। এরপরও আমার অপরাধ কী, তা বুঝতে পারছি না।’

গত ২০ ফেব্রুয়ারি কুরিয়ারে বিদেশি ‘পিস্তল’ আনার ঘটনায় পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বন্দর থানায় মামলা করেন। কাস্টমস আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও অস্ত্র আইনে এই মামলা করা হয়। মামলায় আসামি করা হয় পার্সেলের প্রেরক ও প্রাপক দুজনকেই।

ওই পার্সেলের প্রেরক ছিলেন ইতালি টিবুরিনা রোমার প্রবাসী রাজীব বড়ুয়া ওরফে মুন্না। প্রাপক ছিলেন চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১-এর অফিস সহায়ক আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির বাসিন্দা মজুমদার কামরুল হাসান। ঘটনার পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মজুমদার কামরুল হাসান আর শুরু থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজীব বড়ুয়া।

মামলাটি তদন্ত করছেন বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল সরোয়ার। গত ১৩ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পিস্তলগুলো আসল আগ্নেয়াস্ত্র নয় বলে ব্যালিস্টিক প্রতিবেদন দেয়। এ ছাড়া কার্তুজগুলো নিক্ষেপযোগ্য নয় (প্রজেক্টাইলবিহীন) বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে চারটি পিস্তল, চারটি কার্তুজ, চারটি প্লাস্টিক বল ও সিসার পিলেট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

কিন্তু ওই প্রতিবেদন মনঃপূত না হওয়ায় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন। গত ২২ এপ্রিল করা এই আবেদনের বিষয়ে সিআইডির প্রতিবেদন সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছায়। সেখানেও পিস্তলগুলো নকল প্রমাণিত হয়।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফয়সাল সরোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিআইডির পুনরায় ব্যালিস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদনটি আমি আদালতে দাখিল করেছি। সিআইডি আগে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, পুনঃ প্রতিবেদনে একই বিষয় উল্লেখ রয়েছে। তবে এবারের প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পিস্তলগুলো আগ্নেয়াস্ত্র নয়; কিন্তু এখানে কাস্টমসের কিছু বিষয় আছে। মামলাটির আরও তদন্ত হচ্ছে আর তদন্তাধীন অবস্থায় কিছু বলা যাচ্ছে না।

মামলার আসামি রাজীব বলেন, ‘সিআইডি প্রতিবেদনে খেলনা পিস্তল বলে উল্লেখ করেছে। এরপর মামলাটি তদন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হচ্ছে; কিন্তু আমরা তো আর পারছি না। এভাবে কতদিন পালিয়ে থাকব। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। আমার ভাই ক্যানসারে আক্রান্ত। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা। উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারে অভাব, টানাটানি চলছে। পাসপোর্ট জব্দ করে রাখায় আমি ইতালি ফিরে যেতে পারছি না। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদনও দ্রুত দাখিল করা হচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না মামলাটি নিষ্পত্তি হচ্ছে, আমি ইতালি ফিরে যেতে পারছি না।’

রাজীব আরও বলেন, ‘আমার ইতালির নাগরিকত্ব আছে। আমি কেনইবা বাংলাদেশে অস্ত্র এনে ব্যবসা করব। এটা হাস্যকর ব্যাপার। মূলত তাঁরা নাম কুড়াতেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত