Ajker Patrika

চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা দিন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬: ৩৮
চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা দিন

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেদের কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে কতটুকু আস্থা অর্জন করেছে, সে প্রশ্ন বিভিন্ন সময় সংগত কারণেই উঠেছে। দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব পালন করা যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেদের কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে কতটুকু আস্থা অর্জন করেছে, সে প্রশ্ন বিভিন্ন সময় সংগত কারণেই উঠেছে। দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব পালন করা যেসংস্থার সাংবিধানিক কর্তব্য, সে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পর সেই কর্তব্য পালনে কতটা নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে, সে প্রশ্নও আছে। দুদকের কারণে দেশে দুর্নীতি কমেছে কিংবা দুদক দুর্নীতিবাজদের কাছে কতটা আতঙ্কের কারণ হয়েছে, তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন বলে মনে হয় না। তবে দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দীন রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির তদন্তে নেমে ফেঁসে গেছেন। তাঁকে দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, আবার জীবননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শরিফ উদ্দীন চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের ২০টি এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন। এতে তিনি অনেকের ‘চক্ষুশূল’ হয়ে উঠেছিলেন।

শরিফ উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পেট্রোবাংলার একটি প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পেট্রোবাংলার এক পরিচালকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়ার কারণে গত ৩০ জানুয়ারি ওই পরিচালক তাঁর বাসায় গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়ার পর তিনি ঘটনাটি অধিদপ্তরকে অবহিত করেন। ১৬ দিনের মাথায় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও আগে তাঁকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়নি। এখন তিনি অজ্ঞাত স্থানে অবস্থানের কথা জানিয়ে যেকোনো সময় গুম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

শরিফ উদ্দীনকে অপসারণের পরপর ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মাঝে। শরিফ উদ্দীনকে অপসারণের প্রতিবাদে ঢাকার প্রধান কার্যালয়সহ দেশের ২১টি জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

চাকরিবিধি মেনেই উপসহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দীনকে অপসারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে।

কিন্তু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে কীভাবে দুদকের ‘ভাবমূর্তি রক্ষা’ হবে, সে ব্যাখ্যা সচিব দেননি। শরিফ উদ্দীনকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় সংস্থার অভ্যন্তরে এবং বাইরে বেশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনা সৎ ও সাহসী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে নিরুৎসাহিত করবে। দুদক কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির বিষয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর না করলে সংস্থার ভেতরে অসন্তোষ বাড়তে পারে।

সাত বছরের চাকরিজীবনে শরিফ উদ্দীন আগাগোড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে এখন তিনি চাকরি হারালেন। চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে এটা একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত