Ajker Patrika

৫০০ টাকায় গরুর মাংস

সম্পাদকীয়
৫০০ টাকায় গরুর মাংস

‘দিল্লি বহুত দূর’ নাকি সন্নিকটে, সে প্রশ্নটা সরিয়ে রেখে বলতে হয়, আমরা এখন ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ মোডে চলে যেতে পারি। আর মাত্র দুই বছর পরই গরুর মাংসের দাম ৮০০ থেকে কমে ৫০০ টাকায় আসবে—এ রকম একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

এ পর্যন্ত ক্রেতারা গরুর মাংসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেই দেখেছে কেবল, কমতে দেখেনি। তাই, সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করে কোনোরকমে বেঁচে থাকার সংগ্রামটা জারি রাখতে হবে।

মানুষের আয়কে একটা বিন্দুতে স্থির রেখে দ্রব্যমূল্য ধাপে ধাপে স্ফীত হতে থাকলে মানুষ কীভাবে সংসারে টিকে থাকবে? কথাটা তো সত্য, এ দেশে কেন কখন কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, কেউ তা ব্যাখ্যা করতে পারে না। কয়েক দিন বাজার গরম রেখে পেঁয়াজ আবার ফিরে আসে আগের দামে। এই কয়েক দিনের মধ্যেই চতুর সিন্ডিকেট বানিয়ে ফেলে টাকার পাহাড়।

একই কথা রসুন, আদার বেলায়ও খাটে। ব্রয়লার মুরগি নিয়ে যে নাটক হয়ে গেল, সে কথা নিশ্চয়ই এখনো স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি। কাঁচা মরিচের দাম হাজার টাকা ছোঁয়ার পর অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন, এই সময় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ ভেবে দেখেননি, এই ‘স্বাভাবিক’ বিষয়টির সঙ্গে উৎপাদনকারী কৃষকের সম্পর্কটা কী। তিনি কি এই বাড়তি মূল্য পাচ্ছেন? প্রশ্নটির উত্তর সর্বক্ষেত্রেই নেতিবাচক। হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার এই প্রবণতা রুখতে পারা যায়নি। গরুর মাংসের দামও সেভাবেই বেড়েছে।

এসব অব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সামাজিক প্রতিরোধ একটি কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারত। সবাই যদি একযোগে বাড়তি দামে পণ্য বা খাদ্য না কিনে সিন্ডিকেটকে বয়কট করত, তাহলে একটা ফল আসতে পারত। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক, এই অব্যবস্থা রোখার মতো কোনো ঐক্য গড়ে ওঠেনি জনগণের মধ্যে। কেউ সেই আহ্বান নিয়েও এগিয়ে আসেনি এবং চোখে পড়ার মতো ঘটনা হলো, মানুষ যতই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আহাজারি করুক না কেন, বাজারে কোনো পণ্যই পড়ে থাকে না। আকাশচুম্বী দাম কমার আগেই প্যানিকে আক্রান্ত ক্রেতা চড়া দামে বেশি বেশি করে খাদ্যদ্রব্য বা পণ্য কেনা শুরু করে দেয়।

গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকায় নেমে আসবে, এমন কথা এখনো অলীক বলে মনে হচ্ছে। উৎপাদকের হাত থেকে ক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌঁছানোর পথে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরানোর যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে, সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার সম্ভাবনা এখনো কম। কারণ, এই মধ্যস্বত্বভোগীরা ক্ষমতার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে থাকা মানুষ। তাদের হটিয়ে দেওয়া কি এতই সোজা?

গরুর মাংসের দাম কমবে—এ রকম সম্ভাবনার ক্ষেত্র এখনো তৈরি না হলেও এ কথা যে বলা হয়েছে, তা নিয়েই খানিকটা শান্তি পেতে অসুবিধা কোথায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত