Ajker Patrika

‘চাউল তুলবার আসি কাজত যাবার পাই না’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
‘চাউল তুলবার আসি কাজত যাবার পাই না’

‘ফজরের নামাজের পর আসি লাইনত দাঁড়াই। ৫-৬ ঘণ্টা পর চাউল পাই। যেদিন চাউল তুলবার আসি, সেদিন কাজত যাবার পাই না। কামাই না করলে চাউল কিনি কী দিয়া। দুদিন কামাই করি একদিন আসি লাইনত দাঁড়ায়া চাউল কিনি।’ সরকারের খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমে চাল নিতে এসে কথাগুলো বলেন দিনমজুর আলম (৫২)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের খেজুরের তল এলাকায় ওএমএস ডিলারের দোকানে কথা হয় আলমের সঙ্গে।

আলমের বাড়ি সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের জোতগোবরধন গ্রামে। তিনিসহ কয়েক শ নারী-পুরুষ ভোরবেলা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সরকারের স্বল্পমূল্যে চাল কেনার জন্য।

তাঁদের ভাষ্য, বাজারে উচ্চমূল্যে তাঁরা চাল কিনতে পারছেন না। তাই লাইনে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে চাল কেনার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাঁদের কারও দৈনিক উপার্জন আবার কারও সাংসারিক কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।

লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা নিয়ে বেলগাছা ইউনিয়ন থেকে আসা গৃহবধূ জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘ফজরের সময় আসি লাইন ধরি। এমনও দিন যায় দুপরের আজান দিলে বাড়ি যাই। অভাবের সংসার, চাউল কিনতে দিন যায়। সংসারের কাজও করবার পাই না। বাজারত ৬০ টাকা চাউল। কিনবার পাই না তাই লাইনত আসি দাঁড়াই।’

এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কেনার চেয়ে রেশন কার্ড দিয়ে চাল নেওয়া সুবিধাজনক বলে জানান পৌর এলাকার নাজিরা সরকারপাড়ার গৃহবধূ শাহিদা। তিনি বলেন, ‘এমন করি লাইনত দাঁড়া লাগে! রেশন কার্ড করি দিলে আমাদের সুবিধা হইলো হয়। এত ভোরবেলা আসা লাগল না হয়।’

একই গ্রামের আরেক গৃহবধূ আফরোজা বলেন, ‘কার্ড দিয়া যখন চাউল দিছে তখন সুবিধা ছিল। যখন তখন আসি চাউল নিবার পাইছি। এলা লাইনত দাঁড়াইলে সংসারের কাজও করবার পাই না।

মানুষটা (স্বামী) না খায়া কাজত যায়। বাচ্চা স্কুল যাওয়ার সময় কী খাইল তাও দেখপার পাই না।’

চাল নিতে বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের চাপের কথা জানান ডিলার আতাউর রহমান প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘আমাদের বরাদ্দ ১ টন চাল ও ১ টন আটা যা পৃথকভাবে জনপ্রতি ৫ কেজি করে ৪০০ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষ লাইনে দাঁড়ান। অনেকে এলাকার বাইরে থেকেও আসেন। বেশির ভাগ মানুষ চাল-আটা না পেয়ে ফিরে যান।

আমরা তো বরাদ্দের বেশি দিতে পারি না।’

খাদ্য বিভাগ জানায়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় ওএমএস কার্যক্রম চলছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন সদর উপজেলায় ৯ টনসহ জেলায় মোট ২৮ টন চাল ন্যায্যমূল্যে (৩০ টাকা কেজি) বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আটা বিক্রি হয় শুধু সদর উপজেলায়। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৮ জন সুবিধাভোগীকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা হারে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু বকর বলেন, ‘প্রতিটি পয়েন্টে মানুষের চাপ রয়েছে। এখন হয়তো বরাদ্দ বাড়ালে ভালো হতো। কিন্তু এ পর্যায়ে আমাদের কিছু করার নাই। 

এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত