Ajker Patrika

ডুবোচরে দুর্ঘটনার শঙ্কা

রুদ্র রুহান, বরগুনা
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ১৯
ডুবোচরে দুর্ঘটনার শঙ্কা

উপকূলীয় জেলা বরগুনার বাসিন্দাদের রাজধানীসহ উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌপথ। বরগুনার বিষখালী ও পায়রা নদীর তিনটি নৌ-রুট ব্যবহার করে প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজার হাজার যাত্রী।

কিন্তু নদীতে নাব্য সংকটের কারণে সৃষ্টি হওয়া ডুবোচরে প্রতিনিয়ত আটকা পড়ছে নৌযান। এ ছাড়া এই নৌরুটে নেই পর্যাপ্ত সংকেত বাতি। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, নদীতে জেগে ওঠা ডুবোচর খনন করতে হবে ও প্রয়োজনীয় সংকেত বাতি স্থাপন করতে হবে।

নৌপথে যাতায়াতকারী ও নৌযান চালকেরা জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিআইডব্লিউ কর্তৃপক্ষ বিষখালী ও পায়রা নদের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজিং করে। এ সময় তারা নৌযান চালক বা স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো প্রকার সমন্বয় না করে নিজেদের মতো করে কাজ শেষ করে চলে যায়। কয়েক দিন নৌযান চলাচলে সমস্যা না হলেও মাত্র এক মাসের মাথায় আবারও নদীতে দেখা দেয় নাব্য সংকট, সৃষ্টি হয় ডুবোচরের। আর এ ডুবোচরের কারণে বেশি বিপদে পড়তে হচ্ছে বরগুনা–ঢাকা, আমতলী–ঢাকা রুটে চলাচলকারী লঞ্চ যাত্রীদের।

বরগুনা–ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চলাচল করে। এ ছাড়া ঝালকাঠি থেকে আরও চারটি লঞ্চ যাতায়াত করে। তিনতলা বিশিষ্ট বড় লঞ্চগুলো নদীতে নাব্য সংকটের কারণে প্রায়ই আটকা পড়ে। এ ছাড়া পণ্যবাহী নৌযানগুলো চরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে।

জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর বিষখালী নদীর ডুবোচরে ৪০০ যাত্রীসহ আটকা পড়ে ঢাকা–বরগুনা রুটের লঞ্চ এমভি পূবালী–১। উদ্ধারকারী লঞ্চ গিয়ে যাত্রীদের সেসময় তীরে নিয়ে আসে। পাঁচ দিন পর বিশালাকৃতির এ তিনতলা লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়।

গত ১৩ আগস্ট ভোরে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়ন চরপালট গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন বিষখালী নদীতে ডুবোচরে আটকা পড়ে লঞ্চ অভিযান–১০। এতে লঞ্চে থাকা ৪৩৪ জন যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। ১৪ আগস্ট রাতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি এলে লঞ্চটি নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। নয় দিন পর উদ্ধারকারী জাহাজ লঞ্চটিকে উদ্ধার করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বুড়িশ্বর নদ বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ততা নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদটি পটুয়াখালীর লোহালিয়া ও লেবুখালী নদী হয়ে বরিশালের কীর্তনখোলায় মিশেছে। বিষখালী নদী বরগুনা সদরের পশ্চিম প্রান্ত ও পাথরঘাটা উপজেলার পূর্ব প্রান্তের মাঝখান দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার প্রশস্ততা নিয়ে প্রবাহিত। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী হয়ে পিরোজপুরের বেকুটিয়া ও কচা নদীর সঙ্গে মিশেছে এটি।

চালকদের তথ্যানুযায়ী, বরগুনার পায়রা নদীর ২৫টি ও বিষখালী নদীর ৩০টি পয়েন্টে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। বরগুনা–ঢাকা নৌরুটে বরগুনার খাকদোন নদীর মোহনা থেকে বরিশাল পর্যন্ত বিষখালী নদীতে বাইনচটকি, বামনার রূহিতা ও বেতাগী অংশেও সৃষ্টি হয়েছে অনেক ডুবোচর। এসব চরের আয়তন ৫ থেকে ১০ বর্গকিলোমিটার। পায়রা (বুড়িশ্বর) নদে বরগুনার আমতলী ফেরিঘাট এলাকায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। চর ক্রমে বিস্তৃত হয়ে পশরবুনিয়া, গুলিশাখালী, জাঙ্গালিয়া, বিঘাই ছাড়িয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, পায়রাকুঞ্জ, রাজগঞ্জ ও লেবুখালীতে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে লঞ্চ মালিকেরা জানিয়েছেন, নৌরুটের স্থানগুলো পরিদর্শন করে বয়া ও বিকন বাতি পর্যাপ্ত না থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

পূবালী লঞ্চের চালক সেন্টু হাওলাদার জানান, এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে সংকেত বাতির ব্যবস্থা করেনি। পর্যাপ্ত বয়া, বিকন বাতি ও মার্কার সংকট রয়েছে নৌপথে। পাশাপাশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবোচর নির্ণয় করতে সমস্যা হয়।

পূবালী লঞ্চের মাস্টার জহিরুল ইসলাম জানান, বরিশাল থেকে বরগুনা পর্যন্ত ঝালকাঠির গাবখান মোহনা ছাড়া আর কোথাও নৌ–সংকেত নেই। বিশেষ করে বিষখালী নদীর ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়ন এলাকা খুবই ভয়াবহ। এখানে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। কোনোরকম মোড় ঘুরতে গেলেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

শাহরুখ লঞ্চের চালক নাসির শেখ বলেন, ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে বরগুনা যাওয়ার পথে বিআইডব্লিউটিএর কোনো বয়াবাতি বা মার্কিং (নাব্য সংকেত) না থাকায় অতি সতর্কতার সঙ্গে সামনে এগোতে হচ্ছিল। ওই রাতে প্রচুর বৃষ্টি ছিল, জোয়ারের পানিও ছিল বেশি। এ কারণে চরটির নিশানা বোঝা যাচ্ছিল না। মোড় ঘোরার সময় লঞ্চটি চরের ওপরে উঠে যায়।

পূবালী লঞ্চের মালিক ইমরান খান রাসেল বলেন, ‘চর থেকে লঞ্চ নামানো খুবই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। দুর্ঘটনার পরপরই আমরা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এখানে দ্রুত নাব্য সংকেত স্থাপনের দাবি জানিয়েছি।’

বরগুনা জেলা নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি সোহেল হাফিজ বলেন, ‘চরের কারণে অনেক জায়গার নৌচলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত পরিকল্পিতভাবে এসব নৌরুটের নদীর নাব্য সংকট দূর করায় খনন কাজ করা।’

বরগুনা বিআইডব্লিউটিএর পোর্ট কর্মকর্তা মামুন অর-রশিদ বলেন, ‘ডুবোচরের কারণে পায়রা (বুড়িশ্বর) ও বিষখালী নদীর স্বাভাবিক গতিপথ হ্রাস পেয়েছে। ড্রেজিং করে পায়রা নদীর নাব্যতা দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্র্রেজিং) মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘নৌযান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রতিবছরই খনন কাজ করে থাকি। বিষখালী ও পায়রা নদে গত অর্থবছরের খনন কাজ হয়েছে। দ্রুত নদী খনন করে নির্বিঘ্ন নৌরুট তৈরি করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত