Ajker Patrika

কবিকণ্ঠের মালা

ড. আনোয়ারুল করীম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ০৯: ৪৩
কবিকণ্ঠের মালা

নজরুল তখন জেলে। ‘আর কতকাল রইবি বেটি মাটির ঢেলার মূর্তি-আড়াল? স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাড়াল’ কবিতাটির জন্য এক বছরের জেল। তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তা শুধু সত্য নয়, পরিণত হয়েছিল রীতিমতো সাহিত্যে। সেই জবানবন্দি ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে ধ্রুপদি সাহিত্যের আখ্যা পেয়েছে।

একদিন জোড়াসাঁকো থেকে রবীন্দ্রনাথের ডাক এল পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের। তড়িঘড়ি গেলেন পবিত্র। রবীন্দ্রনাথ যা বললেন, তাতে রোমাঞ্চিত হলেন পবিত্র। রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা ‘বসন্ত’ নাটকটি উৎসর্গ করেছেন নজরুলকে। সে বইটি পৌঁছে দেওয়া দরকার জেলখানায় নজরুলের হাতে। রবীন্দ্রনাথ পবিত্রকে বললেন, ‘তুমি পারবে?’

বিনা দ্বিধায় পবিত্র বললেন, ‘পারব।’

উৎসর্গ পৃষ্ঠায় লেখা ছিল, ‘শ্রীমান কবি কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু’। উৎসর্গপত্রের নিচে নিজে কালো কাঁচা কালির স্বাক্ষর দিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের আশপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা খুব একটা খুশি হননি এতে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁদের দিকে তাকাননি।

পবিত্র জানতেন, জেলখানায় নজরুলের জন্য নিয়ে যেতে হবে মিষ্টিপান, জর্দা আর ভ্যাসলিন। এসব নিয়ে আলিপুর কেন্দ্রীয় জেলখানায় গেলেন পবিত্র। লোহার বেড়ার ওপর থেকে নজরুল চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সব এনেছিস তো?’

পবিত্র হাসলেন। নজরুল এখনো জানেনই না, কী উপহার তিনি নিয়ে এসেছেন। তাই বললেন, ‘তোর জন্য কবিকণ্ঠের মালা এনেছি’ বলে রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘বসন্ত’ বইটি তিনি দিলেন নজরুলকে।

নজরুল ভাবলেন, রবীন্দ্রনাথের ‘বসন্ত’ কাব্যনাট্য নিয়ে এসেছে বলেই পবিত্র বুঝি কবিয়ানা করছে।

‘এই দ্যাখ!’ বলে উৎসর্গপত্রটি মেলে ধরলেন পবিত্র। সেখানে ছাপার অক্ষরে লেখা উৎসর্গপত্র আর কাঁচা কালিতে রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষর দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন নজরুল!

সূত্র: ড. আনোয়ারুল করীম, নজরুল: তার সমকালে, পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত