Ajker Patrika

আত্মভোলা অধ্যাপক

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২২, ১০: ১৫
আত্মভোলা অধ্যাপক

অন্য অনেক বিজ্ঞানীর মতোই সত্যেন বোস ছিলেন আত্মভোলা এক মানুষ। চেহারার মধ্যে ছিল উড়ু-উড়ু রোমান্টিকতা। তিনি তখন বসতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে পশ্চিম দিকের একটা ঘরে। দিন-দুনিয়া বলে কিছু যে আছে, সেটা বেশির ভাগ সময়ই তাঁর মনে থাকত না। থেকেছেন অঙ্কের নেশায়, আবিষ্কারের নেশায়।

ছাত্রদের মধ্যে কে হিন্দু, কে মুসলমান, সেসব নিয়ে ভাবেননি। কেউ ভালো কিছু করলেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। একবার কাজী মোতাহার হোসেন বাংলায় কিছু লিখেছিলেন, সেটা পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন সত্যেন বোস। সবাইকে ডেকে ডেকে বলছিলেন, ‘দেখো দেখো, আমার ছেলে এ রকম বাংলায় লিখেছে, তোমরা কেউ কি এ রকম বাংলা লিখতে পারো?’

একবার মেয়েকে নিয়ে গেছেন মুকুল সিনেমায় ছবি দেখতে। সবাই যে রকম যায়, টিকিট কাটে, সেভাবেই গেছেন, কিন্তু সবার বেলায় যা ঘটে, তাঁর বেলায় তা ঘটবে কেন? টিকিট করতে হলে টাকা লাগে আর টাকা থাকে মানিব্যাগে। একটু পরেই তিনি আবিষ্কার করলেন, সঙ্গে মানিব্যাগ নেই। মেয়েকে নিয়ে এসেছেন, সিনেমা না দেখিয়ে ফেরেন কী করে! মেয়েকে বললেন, ‘মা, তুই এখানে বস। আমি বাড়ি থেকে মানিব্যাগটা নিয়ে আসি।’

ঘোড়ার গাড়িতে করে তিনি বাড়ি ফিরলেন। টেবিলেই ছিল মানিব্যাগ। সেটি হাতে নিতে গিয়ে দেখলেন, পাশেই একটি আনসলভড অঙ্ক। মুহূর্তে ভুলে গেলেন পূর্বাপর। বসে পড়লেন সমাধান করতে। অনেকক্ষণ পর গাড়োয়ান সাহস করে এসে বলল, ‘হুজুর, আপনি যাবেন না? আপনার মেয়েকে আপনি সিনেমা হলে বসিয়ে রেখে এসেছেন।’

হুঁশ হলো সত্যেন বোসের। ‘ও, তাই তো! মেয়েকে সিনেমা হলে রেখে এসেছি, চলো চলো।’

কর্মীরা অবশ্য সত্যেন বোসের মেয়েকে চিনতে পেরে সিনেমা হলের সিটে বসিয়ে দিয়েছিল। সত্যেন বোস যাওয়ার পর তারা বলল, ‘সিনেমা তো এখনই শেষ হয়ে যাবে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন, ও বেরিয়ে আসবে।’

সূত্র: সরদার ফজলুল করিম, আমি সরদার বলছি, পৃষ্ঠা ৩০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত