Ajker Patrika

সব হারিয়ে দিশেহারা শৈলকুপার রাবেয়া

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৪৫
সব হারিয়ে দিশেহারা শৈলকুপার রাবেয়া

‘আমার স্বামী-সন্তান মারা গেছে, আমি অসহায়। আমার ঘর ভেঙে সব লুট করে নিয়ে গেছে। একটা সেলাই মেশিন দিয়ে সংসার চলত, সেটিও নিয়ে গেছে। এখন আমি কীভাবে রোজগার করে খাব? কী দিয়ে ঘর মেরামত করব জানি না। ঘরে কিছু টাকা ছিল, তাও রেখে যায়নি’—সব হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কৃষ্ণনগর মধ্যপাড়া গ্রামের বিধবা রাবেয়া খাতুন।

সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের দ্বন্দ্বের জেরে গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মধ্যপাড়া গ্রামের অন্তত ৩০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি ঘরের মধ্যে একটি রাবেয়ার।

গত শনিবার নিজের ভাঙা ঘর দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাবেয়া বলেন, তাঁর কোনো চাষের জমি নেই। সম্বল বলতে ছিল স্বামীর রেখে যাওয়া ছয় শতক জমির ওপর টিনশেডের দুই কক্ষের একটি ঘর। স্বামী ও বড় ছেলেকে হারিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা কন্যাকে নিয়ে ওই ঘরে বাস করতেন রাবেয়া।

রাবেয়ার মেয়ে সুমি খাতুন বলেন, ‘আমাদের পরিবারে রাজনীতি, মিছিল, মিটিং করার মতো কেউ নেই। এ নির্বাচনের মারামারিতে আমাদের বাড়ি কেন ভাঙচুর করা হলো? এখন আমাদের কী হবে?’

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কৃষ্ণনগর গ্রামের শিরিন সুলতানাও। সেদিন রাতে তাঁর বাড়িতেও হামলা ও লুটপাট হয়েছে। তিনি জানান, রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাড়ির দুই পাশ থেকে লোক এসে ঘরে ঢুকে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় ওরা বলতে থাকে ‘পেট্রল ঢেলে সব জ্বালিয়ে দে’। হামলাকারীরা কারা সে ব্যাপারে কিছু জানেন না কেউ। তবে এ ঘটনার পর পুলিশি ঝামেলার ভয়ে কৃষ্ণনগরের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুরুষ সদস্যরাও গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মামুন ও বিদ্রোহী প্রার্থী জুলফিকার আলী কায়সার টিপুর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত সাতটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এর জের ধরে টিপুর সমর্থকেরা কৃষ্ণনগরে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ৩০টি বাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে টিপুর মোবাইল ফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মামুন এ ঘটনার জন্য টিপুকে অভিযুক্ত করে বলেন, এমন অবস্থায় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দাবি করছি।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনো এ ঘটনায় মামলা হয়নি। তবে জড়িত সন্দেহে ৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে খুলনা ও আশপাশের এলাকা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ শৈলকুপায় আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত