Ajker Patrika

বৃষ্টি বাতাসে নাকাল মানুষ

রংপুর ও তারাগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৫০
বৃষ্টি বাতাসে নাকাল মানুষ

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর দমকা বাতাসে দুর্ভোগে পড়েছেন রংপুরের মানুষ। ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না তাঁরা। জনসাধারণে চলাচল কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।

বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের বেগ বেশি থাকায় বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে। ঠান্ডা বেশি হওয়ার কারণে লোকজন কাজে যেতে পারেননি।

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ডে লোকসমাগম নেই। নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতে তেমন ভিড় ছিল না। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হননি। সকাল ১১টায় গুঁড়ি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ছাতা মাথা দিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছেন রোকছানা-শাহিনুর দম্পতি। শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভোর থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। খুব ঠান্ডাও আজ। বাতাসে বাইরে টেকা যাচ্ছে না। স্ত্রী খুব অসুস্থ, তাই ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছি।’

ছুটির দিনগুলোতে রংপুর মেডিকেল মোড়ে রিকশা-অটোরিকশার ভিড়ে পা ফেলানো দায় হয়ে যায়। কিন্তু গতকালে দৃশ্য ছিল ভিন্ন। যাত্রী নেই, রিকশা-অটোরিকশারও ভিড় নেই। সেখানে কথা হয় রিকশা চালক আবু হেনার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে গ্যারেজে ছিলাম। শুক্রবার এমনিতে শহরে ভিড় থাকে। কিন্তু আইজ ৫টা পর্যন্ত চারটি ভাড়াও পায়নি। শীত আর বৃষ্টির কারণে লোকজন কম।’

শুধু মেডিকেল মোড়ই নয়, নগরীর বিভিন্ন মোড় ও উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে। কাজের সন্তানে নগরীতে আসা গঙ্গাচড়া সদরের দিনমজুর পরিমল রায় ঠান্ডায় কুঁকড়ে বাড়ি ফিরেন বিকেল তিনটায়। নগরীর শিমুলবাগে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। পরিমল রায় জানান, বৃষ্টি থেকে যাবে ভেবে পলিথিন শরীরে পেঁচিয়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি না কমায় তিনি একটি চায়ের দোকানে বসে থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সঙ্গে আনা ২০ টাকা চা পান করে শেষ করেছেন। চাল ডাল কি দিয়ে নিয়ে ঘরের ফিরবেন সেই চিন্তায় কাতর তিনি।

তারাগঞ্জের ইকরচালী বাজারে কথা হয় মেনানগর গ্রামের দিনমজুর কালা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই ঠান্ডা বাতাস এত বেশি যে দুই দিন থাকি ঘরের বাইরোত যাবার পাই না। একদিন কাম না করলে ঘরোত খাবার থাকে না। রাইতোত কাম ঠিক করছুনু। সকাল থাকি দ্যাওয়ার পানি আর ঠান্ডা বাতাসের জন্যে যাবার পাও নাই। বউ কওছে ঘরোত চাল, তেল নাই। তাক বাকি নিবার জন্য কাপতে কাপতে হাটোত আনু।’

মাঘের শীত আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শুধু মানুষই নয় গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি।

নারায়ণজন গ্রামের দিনমজুর নাজিম মিয়া বলেন, ‘ভাই এবার মাঘ মাসি শীতোত খুব কষ্ট পাওছি। ভাঙা বাড়ি ঘরোত হুহু করি বাতাস সোন্দায়। হামরা ছেঁড়া কাঁথা, কম্বল গাওত দিয়া কোনোরকমে জান বাঁচাই। কিন্তু গরুগুলার খুব দুরবস্থা হইছে। ঠিকমতো খাওন দিবার পাওছিনা, শীত থাকি রক্ষাও হওচে না।’

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘শুক্রবার রংপুরে ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের বেগ বেশি ছিল। সকাল পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’ আজ শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫): ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত