Ajker Patrika

প্রাথমিক গণিত ও পোশাক চুরি

সম্পাদকীয়
প্রাথমিক গণিত ও পোশাক চুরি

গর্ব করেই বলা যায়, বাঙালির মতো প্রতিভাধর জাতি খুব কম আছে। ব্রিটিশ আমলে যখন কলকাতা ছিল ভারতবর্ষের রাজধানী, তখন বাঙালিদের নিয়ে সমীহ জাগানো অনেক মন্তব্য শোনা গেছে। আজ বাংলা যা ভাবে, গোটা ভারতবর্ষ তা ভাববে কাল—বাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জনের প্রতি এত বড় স্বীকৃতি ছিল! কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী চলে যাওয়ার পর থেকেই বাংলার সেই সম্মান ধীরে ধীরে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু অন্যভাবে নিজেদের বুদ্ধির খেলা বাঙালি চালিয়েই যাচ্ছে।

দুর্বুদ্ধিতে বাঙালির অর্জন কম নয়। এ ক্ষেত্রে বহু ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে আনা যায়। কিন্তু আজ আমরা শুধু আজকের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হওয়া ‘বন্দরে নেওয়ার পথে পথে চুরি হচ্ছে রপ্তানির পোশাক’ খবরটির প্রতিই দৃষ্টি রাখব। এ সংবাদটি পড়ার পর মনে হয়েছে, বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করার এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাঙালি ছাড়া আর কারও আছে কি?

খবরটি চমকপ্রদ। বিদেশে রপ্তানি করার জন্য মাল ওঠানো হয়েছে ট্রাকে। সেই মাল যাবে বন্দরে। সেখানে খালাস করার পর তা উঠবে জাহাজে। পৌঁছে যাবে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে। মাল বুঝে নেবেন তাঁরা, যাঁরা অর্ডার দিয়েছিলেন। যা যা বলা হলো, তার সবই হয়েছে। তবে একটা ‘কিন্তু’ আছে মাঝখানে। ট্রাকে মাল উঠিয়ে ট্রাকচালক সরাসরি বন্দরে যাননি। চট্টগ্রামের কোনো এক জায়গায় ট্রাকটি থামিয়ে শাগরেদদের নিয়ে ট্রাক থেকে কিছু পোশাক নামিয়ে নিয়েছেন। এবার সহজ একটা অঙ্কের সঙ্গে পরিচিত হব আমরা। এই অঙ্ক করতে হলে প্রাথমিক গণিত জানাই যথেষ্ট।

যখন ট্রাকটি নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড থেকে ১১ হাজার ৯৮০টি তৈরি পোশাক নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল, তখন ট্রাকচালকের হাতে কি কোনো চুরির টাকা ছিল? উত্তর: না। চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে তাঁরা এক জায়গায় কাভার্ড ভ্যানটি থামিয়ে ৪ হাজার ১০০টি পোশাক নামিয়ে রাখেন। এই সংখ্যক পণ্যের বাজারমূল্য ১ কোটি ২২ লাখ টাকার মতো। কিন্তু এই পণ্য তাঁরা বিক্রি করেন ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। বিনা পয়সায় তাঁরা এই টাকার মালিক হয়ে গেলেন। এরপর হাত ঘুরতে ঘুরতে তার দাম বাড়তে লাগল। ৪ লাখের পর ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা হলো দাম! আরও ওপরে যেত হয়তো, কিন্তু পুলিশের কারণে তা আর ওপরের দিকে উঠতে পারেনি। 
এবার অঙ্কটা মেলান আপনারা। অঙ্ক মেলানোর সময় দক্ষতা, সততা, নৈতিকতাকেও যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের সঙ্গে মেলাবেন। তাহলেই দেখবেন, বাঙালি জাতিকে নিয়ে হেলাফেলার কিছু নেই। শূন্য থেকেই টাকা কামাতে পারে তারা!

শাস্তির কথা বলব এখানে? মোটেই না। ওটা যাদের বিভাগ, এই প্রশ্নের মীমাংসা তারাই করুক। বিদেশিদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তির কথাও অন্যরা ভাবুক। আমরা বরং ভাবি, পোশাক রপ্তানির বদলে এই অসৎ লোকদের কোথাও রপ্তানি করা হলে আমাদের সমাজটা একটু হলেও সৎ, নিষ্ঠাবান হয়ে উঠত কি? কিন্তু এই জঞ্জাল নিতই বা কে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত