Ajker Patrika

সরকারি স্থাপনা ভেঙে দোকান নির্মাণ

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৪: ১৮
সরকারি স্থাপনা ভেঙে দোকান নির্মাণ

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা হাট-বাজারের সরকারি স্থাপনা ভেঙে এবং শেড দখল করে দোকানঘর তৈরি করে বরাদ্দ এবং খাজনার ৪-৫ গুণ অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ইজারাদার আপেল সরকারের বিরুদ্ধে। এদিকে হাটবাজারে সরকারিভাবে টোল আদায়ের কোনো তালিকা টানানো নেই।

এ নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাটের একটি শেডের অবকাঠামো পরিবর্তন করে মার্কেট নির্মাণের প্রস্তুতির সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম সম্পা তা বন্ধ করে দেন। তবে থেমে নেই এসব কার্যক্রম।

জানা গেছে, উপজেলার মোকামতলা হাট বসে সপ্তাহে দুই দিন। কিন্তু দোকানগুলো স্থায়ী হওয়ায় প্রতিদিনই হাটের মতোই কেনাবেচা হয়। গত দুই বছর এই হাটের ইজারাদার আপেল সরকার। তিনি মোকামতলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

মোকামতলা হাট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আপেল সরকার ইজারা নেওয়ার পর এ হাটে মার্কেটের আদলে দোকান নির্মাণ করেন আপেল সরকার। এরপর সিকিউরিটির নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বরাদ্দের শ্রেণিভেদে দোকানপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করেছেন। এ ছাড়া হাটের ভেতর কৃষকদের জন্য নির্মিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের একটি গুদামের পাকা অফিসকক্ষ ও সরকারিভাবে নির্মিত গরু-ছাগল জবাইখানা ও একটি পাবলিক টয়লেট ভেঙেও দোকানঘর নির্মাণ করেছেন তিনি।

ওই হাটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইজারাদারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন।

হাটে নতুন দোকান করা এক যুবক বলেন, ‘আমার ছোট্ট এই দোকানটির জন্য দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন ইজারাদার আপেল সরকার।’

গত সোমবার মোকামতলার চকরামচন্দ্রপুর গ্রামের মিষ্টির দোকানি কাজল। তিনি বলেন, টাকা দিতে না পারায় তাঁকে দোকান দেওয়া হয়নি। তিনি এখন অন্যের দোকানে কাজ করেন।

হাটের পুরোনো ব্যবসায়ী শংকরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক এখন ব্যবসা হারিয়ে অসুস্থ হয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ বছর ওই হাটে ফলের দোকান করলেও ইজারাদারকে টাকা দিতে না পারায় দোকানের জায়গা এখন অন্যজনের কাছে।’

দেউলী ইউপির লক্ষ্মীকোলা গ্রামের দরজি ও কাপড় ব্যবসায়ী আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘২৭ বছর হাটে দোকান নিয়ে থাকলেও ইজারাদারকে এক লাখ টাকা দিতে না পারায় আমাকে দোকান থেকে বের করে দিয়েছেন।’

খাজনার বিষয়ে এক মাংস ব্যবসায়ী জানান, ইজারাদারকে তাঁর মাংসের দোকানের খাজনা দিয়েছেন ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে খাজনার কোনো তালিকা না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা ৪ থেকে ৫ গুণ অতিরিক্ত খাজনা দিয়ে ব্যবসা করছেন।

মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আহসান হাবীব সবুজ বলেন, ‘সরকারি স্থাপনা ভাঙা ও দোকানঘর নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়ার কথা শুনেছি। ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ-দুর্দশা, দখলদারিত্ব ও নানা অনিয়মের বিষয়ে জানি। এ ব্যাপারে আগামী উপজেলা মাসিক সভায় আলোচনা করব।’

জানতে চাইলে হাট ইজারাদার ও মাহমুদুল হাসান আপেল বলেন, ‘যে অভিযোগগুলোর কথা বললেন সেগুলোর কোনো প্রমাণ পেলে তারপরে লিখুন। যেগুলো অবৈধ ছিল কিছুদিন আগে ইউএনও ম্যাডাম নিজে উচ্ছেদ করে দিয়ে গেছেন।’

ইউএনও উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, নিজের ইচ্ছেমতো দোকান নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নাই। হাটের অনিয়মের বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) জিয়াউল হক জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত