Ajker Patrika

২০ ভাগ কাজেই সময় শেষ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫২
২০ ভাগ কাজেই সময় শেষ

ঠিকাদারের গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে ভবন নির্মিত না হওয়ায় দুর্ভোগের শিকার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১০ শিক্ষার্থী। ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ ভবন নির্মাণের ৮০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। কত দিনে ভবনটি নির্মিত হবে, তা কেউ জানাতে পারেননি।

জানা গেছে, জাতীয়করণ করার পরে ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য বিদ্যমান ভবনটি অপসারণ করে শুরু হয় নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। নির্মাণকালীন বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয় অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ। তবে বর্ষায় ও শীতের দিনে চরম সংকটে ক্লাস করছে বিদ্যালয়টির শিশু শিক্ষার্থীরা।

বর্ষার সময় টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ ও শীতের সময় মেঝেতে ঠান্ডা লাগায় নিয়মিত ক্লাস করতে অসুবিধায় পড়ে যায় তারা।

নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করার কথা শিক্ষার্থীদের। তবে ভবন না থাকায় টিনের তৈরি অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষে দুই শিফটে গাদাগাদি করে পাঠদান করা হচ্ছে ১১০ শিক্ষার্থীকে। এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। তবে তাতে সুফল পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয়ে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরির দায়িত্ব পায় শ্যামনগরের শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেন। নির্মাণাধীন ভবনের কাজ চলতি বছরের ৩ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেনের গাফিলতির কারণে এখন পর্যন্ত ভবন নির্মাণের ২০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টির ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় ভবন নির্মাণের সামগ্রী যেখানে সেখানে পড়ে আছে।

বিদ্যালয় ভবনের খুঁটি নির্মাণের ব্যবহার করা রডসহ পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রী বৃষ্টিতে ভিজে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ যাতায়াতের রাস্তায় রাখা নির্মাণসামগ্রীর কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় পথচারীরা।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, ‘চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর মাত্র ৪ থেকে ৫ ভাগ কাজ করা হয়েছে। একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ছে। তাঁরা আমাদের কথায় ভ্রুক্ষেপ করছেন না।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সাইটে কাজ করি। সেখানের বিল আটকে আছে। এ কারণে ওই বিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ শেষ করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’

আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা একাধিকবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে তলব করেছি। তবে তিনি টালবাহানা করছেন। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদার যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করে এবং পরিত্যক্ত মালামাল সরিয়ে নেয় সে জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বিদ্যালয়টির বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে অবহিত করেছেন। নির্মাণ কাজ শেষ করতে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ গাফিলতি করে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত