Ajker Patrika

চারঘাটের ওসি

সম্পাদকীয়
চারঘাটের ওসি

রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন মাহবুবুল আলম। পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে অবাধে মাদক কারবারের অনুমতি দেবেন—এ রকম একটি অডিও প্রকাশিত হয়েছে। যাঁর কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে, তিনি কৌশলে মোবাইলের রেকর্ডিং অপশনটি চালু রাখতে পেরেছিলেন। তাই মাহবুবুল আলমকে আপাতত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে এবং সংযুক্ত করা হয়েছে পুলিশ লাইনসে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সমাজের সর্বস্তরে ঘুষ ও দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে এ ধরনের ঘটনাই যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে যাচ্ছে। সততা দিনে দিনে দুর্লভ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে ঘুষ শব্দটির একটি মধুর সংযোগ আছে বলে অনেকে মনে করে থাকেন। এখন আমজনতা সতর্ক থাকে, যেন পুলিশের সামনে গিয়ে পড়তে না হয়।

‘বাঘে ছুলে ১৮ ঘা’ কথাটির সঙ্গে পুলিশকে জড়িয়ে যে আরও চারটি শব্দ যুক্ত করা হয়েছে প্রবাদ বাক্যে, সেটির কথা স্মরণ করুন।জনগণের সেবা করে পুলিশ সেই ‘ছত্রিশ ঘা’র অপবাদ থেকে রেহাই পেতে পারত। কিন্তু সামগ্রিক অবকাঠামোর মধ্যেই এমন কিছু রয়েছে, যা পুলিশকে নামিয়ে আনে অপরাধীর কাতারে। এই বিভাগে চাকরি পেতে হলেও নাকি ঘুষের কারবার চলে।

মোটা টাকা খরচ করে যদি চাকরি পাওয়া যায়, তাহলে সেই টাকা উশুল করার প্রবণতা যে কাজ করবে, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? যদি ঘুষ-দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট কাজগুলো নিবৃত করার কোনো প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল না থাকে, তাহলে এগুলোর প্রকোপ বাড়তেই থাকে। যে অপরাধীরা ধরা পড়ে এবং যে অপরাধীরা ধরা পড়ে না, তাদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কারও কারও আঁতাত বা শত্রুতা থাকে কি না, তা নিয়েও সমাজে বহু মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে।

সাধারণ জনগণকে অপমানিত করার নানা রকম উপাদান পুলিশের হাতে রয়েছে। যেকোনো মানুষকে মুখস্থবিদ্যার মতো তারা গ্রেপ্তার করতে পারে। নিরীহ মানুষের পকেটে মাদক ঢুকিয়ে মাদক মামলায় জড়িয়ে ঘুষ খাওয়ার ঘটনাও প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। পুলিশ এবং বিচারিক কার্যাবলির মধ্যে যে বন্ধন রয়েছে, সেটাও যে অনেক সময় জনগণবান্ধব হয় না, সে কথা ভুক্তভোগীমাত্রই জানে।

পুরো ব্যবস্থাপনার মধ্যেই রয়েছে ফাঁক। পুলিশের রয়েছে অসীম ক্ষমতা, সেই ক্ষমতা অপরাধীদের ধরার জন্য প্রয়োগ করা হলে সমাজে শান্তি আসে, কিন্তু নিরীহ জনগণকে অপদস্ত করার জন্য যখন সেই ক্ষমতার প্রয়োগ হয়, তখন তা হয়ে ওঠে ভয়াবহ।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, পুলিশের ওপর ন্যস্ত অসীম ক্ষমতার ভুল প্রয়োগ দেখা গেলে তা আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। চারঘাটের ওসিও সে রকম একটি প্রশ্নের জন্ম দিলেন।

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন ঘুষ-দুর্নীতি ঢুকে যায়, তখন সেখানে ‘মাৎস্যন্যায়’ চলতে থাকে। রাঘব বোয়ালেরা গিলে খায় সমাজের ছোট মাছগুলোকে। এ জায়গাটিকেই ভাঙতে হবে সবার আগে। নইলে ঘুষ-দুর্নীতি দুর্বার গতিতেই বাড়তে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের খোঁজ মিলছে না

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতন নির্ধারণে কমিটি

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

৫ দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থায়ন নিয়ে শঙ্কা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত