Ajker Patrika

পানিসংকট নিরসনে ৮৭৯ নলকূপ

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৪৩
পানিসংকট নিরসনে ৮৭৯ নলকূপ

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। অনিরাপদ পানি খেয়ে বিভিন্ন রোগে ভুগছে অনেক মানুষ। সংকট নিরসনে উপজেলায় ৮৭৯টি গভীর নলকূপ স্থাপনে কাজ করছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য পাইপসহ বিভিন্ন উপকরণ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এর পেছনেই গভীর নলকূপ থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য মানুষকে পাত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কুলসুম বেগম জানান, এখান থেকে দিনরাত মানুষ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে। তিনি নিজেও দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পানি সংগ্রহ করার সিরিয়াল পেতে আরও ঘণ্টাখানেক লাগবে।

পানি সংগ্রহ করতে আসা ঘনশ্যামপুর গ্রামের খলিল হোসেন বলেন, বাড়িতে অগভীর নলকূপ আছে, কিন্তু লবণ ও আয়রন অনেক বেশি। সে পানি খেলে আমাশয়, গ্যাস ও নানা রকম পেটের অসুখ হয়। তাই এই গভীর নলকূপ থেকে সাইকেলে করে পানি নিয়ে যান।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের সব জায়গাতেই সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। পানির লবণাক্ততা ও আয়রনের মাত্রা বেশি হওয়ায় ভূগর্ভস্থ অগভীর নলকূপের পানি পান করার অনুপযোগী। কিছু এলাকায় সংরক্ষিত পুকুর খনন করা হলেও স্থানীয়রা গোসল, কাপড় ধোয়াসহ নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের কারণে তা পান করার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ১১০টি করে নলকূপ বসানো হচ্ছে।

উপজেলার টাউন নোয়াপাড়া গ্রামের শওকত আলী শেখ বলেন, চার দিন ধরে তাঁদের বাড়িতে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে। ১৫ ফুটের ৫৮টি পাইপ বসানো হয়েছে। কাজ শেষ হলে আশপাশের মানুষের খাওয়ার পানির সংকট দূর হবে।

গভীর নলকূপ বসানোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার আলী হায়দার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলী হায়দার বলেন, এ এলাকার গভীর স্তরের মাটির গঠনের বৈচিত্র্য থাকায় অনেক জায়গায় একাধিকবার বোরিং করতে হয়। কোটেশন অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তাঁদের বিল নিতে হয়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আল আমীন বলেন, ‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ৪১৬টি এবং অপর একটি প্রকল্পের আওতায় ৪৬৩টি গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। নলকূপের পানির আর্সেনিক, আয়রন ও ক্লোরাইডের মাত্রা পরীক্ষায় খাওয়ার উপযোগী পানি পাওয়ার পর ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাঁদের এককভাবে গভীর নলকূপ বসানোর সামর্থ্য নেই, এমন ১০ পরিবারের জন্য একটি গভীর নলকূপ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে তাঁরা মাত্র ৭ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে নলকূপ নিতে পারবেন। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে যাচাই–বাছাই করে নলকূপ দেওয়া হয়।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নিরাপদ খাওয়ার পানির চাহিদা পূরণে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পানি ব্যবহারের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের ভীতি আছে যে ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহারে পানির স্তর নেমে যাওয়া, সাগরের নোনাপানি ভূগর্ভে ঢুকে পড়াসহ কৃষি ও পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত