Ajker Patrika

ফেলুদা

সম্পাদকীয়
ফেলুদা

সত্যজিতের ফেলুদা মানেই তো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সন্দীপ রায় যখন ফেলুদা করবেন বলে মনস্থ করলেন, তখন সৌমিত্রের কাছে গিয়েছিলেন। একগাল হেসে সৌমিত্র বলেছিলেন, ‘এখন আমাকে নিয়ে ছবি করলে ফেলুজেঠু নামে সিনেমা করতে হবে।’

সব্যসাচী মাঝে মাঝেই সন্দীপকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘ফেলুদার ছবি কবে হচ্ছে?’

প্রতিবারই সন্দীপ উত্তর দিয়েছেন, ‘সময় হলে জানাব।’ 
‘বাক্সরহস্য’ ছবিটি করার জন্য এগিয়ে এলেন ছায়াবাণীর রামলাল নন্দী। ছবিটি সব্যসাচী করবেন কি না, জানতে চাইলেন সন্দীপ। সব্যসাচী বললেন, ‘করব না মানে?’

সব্যসাচী তখন চশমা পরেন। উঁচু পাওয়ারের চশমা। ফেলুদা কি তাহলে চশমা পরা ফেলুদা হবে এই সিনেমায়? প্রশ্নটা ভাবিয়ে তুলল সন্দীপকে। কিন্তু এত দিন ধরে যেই ফেলুদাকে কল্পনা করে এসেছে মানুষ, তাকে এভাবে পরিবর্তন করা যায় না। তাই সব্যসাচীকে চশমা খোলাতে হলো। যাঁরা উঁচু পাওয়ারের চশমা পরেন, তাঁদের চোখ একটু নিষ্প্রভ হয়ে যায়। সব্যসাচীরও তা-ই হয়েছিল। টিভির ছোট পর্দায়ও সেটা বোঝা গেছে। ফলে পরে চোখ দুটি একটু ‘হাইলাইট’ করে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল। টিভিতে তো রক্ষা হলো, কিন্তু বড় পর্দায় এই চোখ নিয়ে ভুগতে হবে।

‘বাক্সরহস্য’ আর ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’র চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে সন্দীপের মনে হলো, গল্পের ক্লাইমেক্সে ফেলুদার কন্ট্রিবিউশনটা কম হয়ে যাচ্ছে। আসলে সত্যজিৎ তাঁর ফেলুদাকে যতটা তৈরি করেছিলেন ‘সেরিব্র্যাল’ হিসেবে, ‘টাফ’ হিসেবে ততটা নয়।

বাক্সরহস্যের সব্যসাচীকে ফেলুদার সাজে দেখে সন্দীপ বুঝলেন, টাফ ফেলুদা পেয়ে গেছেন। সব্যসাচী ছোটবেলা থেকে দিল্লিতে মানুষ। বাঙালির মজ্জাগত নরমশরম ভাবটা কম। মার্শাল আর্টের ট্রেনিং আছে।  

সব্যসাচী ফেলুদার অভিনয় করার জন্য নিজেকে কতটা তৈরি করেছিলেন, তার একটা উদাহরণ দিই। সত্যজিৎ গল্পে লিখেছিলেন, ফেলু বেশ অনেকটা সময় চোখের পাতা না ফেলে থাকতে পারে। বাক্সরহস্যের শুটিং চলাকালে দেখা গেল, শট দেওয়ার সময় দীর্ঘক্ষণ সব্যসাচীর চোখের পলক পড়ছে না। 

সূত্র: সন্দীপ রায়, আমি আর ফেলুদা, পৃষ্ঠা ১১-১২ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত