Ajker Patrika

বিবাহবিচ্ছেদের ইসলামি রীতি

আবদুল আযীয কাসেমি
বিবাহবিচ্ছেদের ইসলামি রীতি

তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া। ইসলামের পরিভাষায় বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতিকে তালাক বলা হয়। তালাক আল্লাহ তাআলার খুবই অপছন্দের কাজ। তবে প্রয়োজনের কারণে তালাকের বিধান বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। এ জন্য তালাককে হাদিসে ‘সবচেয়ে নিন্দনীয় বৈধ কাজ’ বলা হয়েছে। তালাক সম্পর্কে আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের পরিষ্কার ধারণা নেই। এখানে তালাকসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ৫টি মাসায়েল তুলে ধরা হলো:

তালাকের শরিয়াহসম্মত পদ্ধতি
পারতপক্ষে তালাক দিতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। একান্তই তালাক দিতে হলে শরিয়াহসম্মত নিয়ম হলো, দুই মাসে দুটি তালাক দেবে। প্রথম মাসে স্ত্রীর ঋতুস্রাব শেষ হলে পবিত্রতার সময়ে একটি তালাক দেবে। এরপর পরের মাসে ঋতুস্রাব শেষ হলে পবিত্রতার সময়ে আরেকটি তালাক দেবে। এরপর চাইলে তাকে ফিরিয়ে নেবে, অন্যথায় তাকে ইদ্দত পালন করতে দেবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। এরপর আবার সেই স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাইলে নতুন করে সাক্ষী ও মোহর ঠিক করে বিয়ে করতে হবে। (সুরা বাকারা: ২২৯) 

একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়া গুনাহ
একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়া, একই মাসের ঋতুস্রাব-পরবর্তী সময়ে তিন তালাক দেওয়া অথবা ঋতুস্রাবের সময় তালাক দেওয়া ইসলামি শরিয়াহ পরিপন্থী। তবে মনে রাখতে হবে, যদিও একসঙ্গে তালাক দেওয়া শরিয়াহর নীতিবিরুদ্ধ; তবে এর অর্থ এই নয় যে দিলে তালাক পতিত হবে না; বরং তালাক অবশ্যই পতিত হবে এবং শরিয়াহর নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে গুনাহও হবে। (হেদায়া) 

ঋতুস্রাব চলাকালে তালাক দেওয়া মাকরুহ
ঋতুস্রাব চলাকালে তালাক দিলে তালাক পতিত হবে, তবে তাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। পরবর্তী ঋতুস্রাব চলে যাওয়ার পর তাকে তালাক দেবে। হজরত ইবনে ওমর (রা) তাঁর স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের সময় তালাক দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) শুনে ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। পরের ঋতু-পরবর্তী পবিত্রতার সময়ে তালাক দিতে পরামর্শ দেন। (বুখারি) 

তালাক শব্দে তালাক দেওয়াই নিয়ম
সাধারণত তালাকের নিয়ম হলো দ্ব্যর্থহীন শব্দে তালাক দেওয়া; অর্থাৎ তালাক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। এ নিয়মে যদি কেউ এক তালাক বা দুই তালাক দেয়, তাহলে সে তার স্ত্রীকে নতুনভাবে বিয়ে করা ছাড়া ফিরিয়ে নিতে পারবে। আর যদি তিন তালাক দেয়, তাহলে সেটা সুদৃঢ় হয়ে যাবে। তখন আর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না; বরং তার ইদ্দত পালন শেষে অন্য কোনো স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করার সুযোগ নেই। (হেদায়া) 

দ্ব্যর্থবোধক শব্দে তালাক দেওয়া অনুচিত
দ্ব্যর্থবোধক শব্দে তালাক দেওয়াকে ফিকহের পরিভাষায় ‘কিনায়া তালাক’ বলা হয়। সাধারণত কেউ যদি তালাক দিতে দ্ব্যর্থবোধক শব্দের আশ্রয় নেয়, তবে তার নিয়ত দেখতে হবে। সে যদি তালাকের নিয়ত না করে, তবে তালাক হবে না। যেমন স্বামী স্ত্রীকে বলল, ‘তুই আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যা’, ‘আমি তোর মুখ দেখতে চাই না’ ইত্যাদি, তবে তার নিয়ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে যদি তালাকের নিয়ত করে, তবে এক তালাকে বায়েন (যেখানে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার থাকে না) পতিত হবে। ফের তার সঙ্গে সংসার করতে চাইলে ইদ্দতের পর নতুন করে বিয়ের যাবতীয় শর্ত রক্ষা করে বিয়ে করতে হবে। (ফাতহুল কাদির) 

লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত