Ajker Patrika

ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষে হলের গেস্টরুমের সোফা

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষে হলের গেস্টরুমের সোফা

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) বঙ্গবন্ধু হলের ৩০২ নম্বর কক্ষ। ভেতরে সুন্দর নকশায় তৈরি একটি খাট। অতিথিকক্ষ থেকে এনে রাখা হয়েছে এক সেট সোফা। চারজনের জন্য বরাদ্দ এই কক্ষটি পরিপাটিভাবে সাজিয়ে একাই থাকছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হোসেন অবশ্য একটু ব্যতিক্রম। তিনি হল প্রশাসনের দেওয়া কোনো আসবাব ব্যবহার করেন না। রুম থেকে হলের নির্ধারিত বিছানা-টেবিল বের করে রেখেছেন ছাদে। আর নিজ টাকায় খাট-সোফা কিনে সাজিয়েছেন হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী হলের ৩৬১ নম্বর রুম। চারজনের এই রুমে তিনিও একাই থাকেন।

সিট স্বল্পতার কারণে চারজনের কক্ষে ছয়জন করে থাকলেও ছাত্রলীগ নেতাদের ‘রুমবিলাস’ ঠিকই চলছে সিকৃবির আবাসিক হলগুলোয়।

সিকৃবির বঙ্গবন্ধু হলে গিয়ে দেখা যায়, হলের অতিথিকক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে ব্যবহারযোগ্য আসবাব নেই। তাই অতিথি এলে বসতে দিতে পারেন না শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষার্থী জানান, গত বছরের জুলাই মাসের শেষ দিকে সিকৃবি ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়। কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু হলের অতিথিকক্ষের সোফা নিজের রুমে নিয়ে যান ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান। তখন থেকেই অতিথিকক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘পুরোনো সোফা গেস্টরুমে পড়েছিল। সিনিয়র ছাত্র হিসেবে এটি নিয়ে ব্যবহার করছি। ছাত্রলীগের সভাপতির রুমে অনেক শিক্ষার্থীরা আসেন, এ জন্য রুম একটু গুছিয়ে রাখা এবং একা থাকা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট প্রফেসর বিশ্বজিৎ দেবনাথ জানান, ‘বর্তমানে হলের কমনরুম বা গেস্টরুমের সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা সেটি চালু করবেন। হয়তো মিটিং করার জন্য শিক্ষার্থীরা এগুলো ব্যবহার করেছে।’

নয় বছর পর গত বছরের ৩০ জুলাই এক বছরের জন্য সিকৃবিতে ২০ সদস্যের আংশিক শাখা কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে আশিকুর রহমান আশিককে সভাপতি ও মো. এমাদুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বেপরোয়া চলাফেরা শুরু করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সংগঠন—কোনোটিরই নিয়মনীতি মানছেন না। তাঁদের বেপরোয়া কার্যক্রমে ক্যাম্পাসজুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান সভাপতি-সম্পাদকবলয়ের নেতা-কর্মীরা। সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী পক্ষের নেতারা। এর জেরে ৬ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ফিশারিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুকের ডান চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বর্তমানে রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত শুক্রবার মোবাইল ফোনে ওমর ফারুকের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ওমর ফারুকের চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপর ডান চোখটিতে আর আলো পাচ্ছে না।’

কর্মীদের বেপরোয়া আচরণ ও নেতাদের রুমবিলাস বিষয়ে জানতে চাইলে সিকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এমাদুল হোসেন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন চলছে। রুমে হলের নির্ধারিত খাট-টেবিল ব্যবহার করতেছি।এসব অপপ্রচার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত