Ajker Patrika

একীভূত আতঙ্কে ৫ ইসলামি ব্যাংকের শেয়ারদরে ধস

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ৫১
একীভূত আতঙ্কে ৫ ইসলামি ব্যাংকের শেয়ারদরে ধস

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি শরিয়াহ্‌ভিত্তিক ব্যাংক টানা দরপতনের মুখোমুখি। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এই পাঁচ ব্যাংক এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আতঙ্কের প্রতীক। মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ এবং আমানত সংকটের বোঝা সামলাতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের একীভূতের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই ঘোষণাই বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তার বদলে আরও অনিশ্চয়তার ছাপ ফেলেছে। বর্তমানে এসব ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা বাজারে তাদের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। এই অনিশ্চয়তার কারণে শেয়ারদর আরও নিচে নামছে এবং পুঁজিবাজারে তাদের অবস্থা দিন দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

কতটা কমেছে দাম

গত এক মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শরিয়াহ্‌ভিত্তিক এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হয়েছে ২২ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ২৮ জুলাই যেখানে প্রতি শেয়ার ৮ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছিল, গতকাল রোববার সেটি নেমেছে ৫ টাকা ৫০ পয়সায়; অর্থাৎ প্রায় ৩৫ শতাংশ পতন। তার পরেই আছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যার শেয়ারদর ৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে এখন ৩ টাকা, অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মূল্য হারিয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের দামও কমেছে প্রায় সমান হারে—৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৪০ পয়সায়, যা ৩২ শতাংশের বেশি পতন। অন্যদিকে গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক উভয়ের শেয়ারদর ৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে নেমে ২ টাকা ৪০ পয়সায় নেমেছে, দুই ক্ষেত্রেই দরপতন ২২ শতাংশের বেশি।

টাকার হিসাবে পতনটা প্রথমে সামান্য মনে হতে পারে। যেহেতু এসব শেয়ারের দাম ২ থেকে ৩ টাকার ঘরে ঘোরাফেরা করছে, তাই কয়েক পয়সার দরপতনও শতাংশের হিসাবে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা বাজারে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা কেন আতঙ্কে

এ বিষয়ে বিশ্লেষক ও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, এই ব্যাংকগুলো একীভূত হয়ে একটা প্রতিষ্ঠান/সত্তা হারিয়ে ফেললে কোন মূলধনি শেয়ারের অংশের কী হারে, কী রূপান্তরিত হবে, সেটা অনিশ্চিত। সেই অনিশ্চয়তায় থেকে অনেকে ভাবছে, এখানে যা পাই, সেটা নিয়ে থাকি। এ জন্য লোকসান হলেও বিক্রি করে দিচ্ছে। এটা ছাড়া তাঁর উপায় নেই। একীভূত হয়ে গেলে সেটা তো আর তালিকাভুক্ত থাকবে না।

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরীর মতে, ব্যাংকগুলোয় নতুন আমানত আসছে না। বরং আমানতকারীরা টাকা তুলতে চাইছেন। বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ব্যাংকগুলো হয়তো টিকবে না। তাই যত দামেই হোক, শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

শেয়ারদর নেমে যাওয়া স্বাভাবিক

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রকৃতপক্ষে এসব ব্যাংকের দায় সম্পদের চেয়ে বেশি। তাই অভিহিত মূল্যের নিচে শেয়ারদর নেমে যাওয়া স্বাভাবিক। বাস্তবে এদের কোনো শেয়ারের মূল্য থাকার কথা নয়; কারণ, এগুলো ঋণাত্মক সম্পদে চলছে। একীভূত হওয়ার পর সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত