Ajker Patrika

পেট্রল পাম্প স্থাপনের অনুমতি নেওয়া হয়নি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১৩: ৪৭
পেট্রল পাম্প স্থাপনের অনুমতি নেওয়া হয়নি

পেট্রল পাম্প স্থাপন করতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অনুমতি নিতে হয়। এরপর বিপিসির অধিভুক্ত তিনটি বিপণন কোম্পানির যেকোনো একটির কাছ থেকে নিতে হয় ডিলারশিপ। কিন্তু সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে থাকা পেট্রল পাম্প স্থাপনে এসব নিয়ম মানেনি মালিকপক্ষ। বিপিসির অনুমতি, বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিলারশিপ ছাড়াই সেখানে পেট্রল পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদনহীন এই পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, বিপিসি থেকে অনুমতি নেওয়ার পর পেট্রল পাম্প স্থাপনে ইচ্ছুক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এম ফরমে পাঁচ সেটের একটি আবেদন করবেন। এরপর জেলা প্রশাসক কার্যালয় এ আবেদনের একটি কপি ফায়ার সার্ভিস, একটি পরিবেশ অধিদপ্তর, একটি সড়ক ও জনপথ (সওজ), একটি পুলিশ ও অন্যটি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠাবেন। এরপর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তিপত্র, ছাড়পত্র দেওয়ার পর জেলা প্রশাসক অনুমতি দেবেন। এরপর বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স পেলেই কেউ পেট্রল পাম্প স্থাপন করতে পারেন।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে পেট্রোল পাম্প স্থাপনে এসব নিয়ম কানুনও অনুসরণ করা হয়নি। যদিও বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পেট্রোল পাম্প স্থাপনে ডিপো মালিকপক্ষ কোনো নিয়মই মানেনি।

বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘বিএম কন্টেইনার ডিপোতে পেট্রল পাম্প থাকার বিষয়টি আমরা জেনেছি। এরপর আমরা আমাদের অধিভুক্ত তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কাছ থেকে অনুমোদিত পেট্রোল পাম্পের তালিকা এনেছি। তাতে দেখেছি, বিএম কন্টেইনার ডিপোর অনুকূলে এ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো কনজুমার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তারা যদি এটি করে থাকে, তাহলে তারা বেআইনিভাবে করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’

অনুমোদন না থাকলে ওই পেট্রোল পাম্প কোথা থেকে জ্বালানি সরবরাহ করত এমন প্রশ্নের জবাবে অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘এ ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। এ ব্যাখ্যা তারা দেবে।’

গত ৪ জুন রাত ৯টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোর মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় সারিতে থাকা একটি কনটেইনারে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ওই কনটেইনারে তৈরি পোশাক শিল্পের মালামাল ছিল। পরে খবর পেয়ে রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ওই কন্টেইনারের পাশে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি কন্টেইনার আগুনের তাপ লেগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত অন্তত ১৪৬ জন।

দুর্ঘটনার পর ওই ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, ডিপোর গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই হাতের ডানে একটি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। ডিপোতে আসা কাভার্ডভ্যান, লরিতে ওই পেট্রোল পাম্প থেকে তেল সরবরাহ করা হতো। বিস্ফোরণের পর যদি ওই তেলের পাম্পে আগুন লাগত, তাহলে আরও অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপণে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই দিন পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকগুণ বেশি হতো। আগুন আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ত।

এ সম্পর্কে জানতে স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘পেট্রোল পাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদের (পরিবেশ অধিদপ্তরের) ছাড়পত্র নিতে হয়। বিএম কনটেইনার ডিপোতে যে পেট্রোল পাম্পটি আছে, ওইটি স্থাপনে মালিকপক্ষ আমাদের কাছ থেকে কোনো ছাড়পত্র নেয়নি।’

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম) পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেনের কাছে পেট্রোল পাম্প নির্মাণে বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল করা হলে তিনি আর মোবাইল রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত