Ajker Patrika

কারাগারের ‘পাঠশালাতেই’ তৈরি হচ্ছে ভয়ংকর জঙ্গি

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৩২
কারাগারের ‘পাঠশালাতেই’  তৈরি হচ্ছে ভয়ংকর জঙ্গি

২০১৮ সালে ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন কুমিল্লার কলেজছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান ওরফে বাছির। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার বাছিরকে রাখা হয় কারাগারের জঙ্গি সেলে। এক বছর তিন মাস পর বাছির যখন জামিনে মুক্তি পান, তখন তিনি নব্য জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার। কারাগারে বসেই জঙ্গিবাদের দীক্ষা আর সংগঠনের পদ পেয়ে যান তিনি। সেখানে বসেই তুরস্কে থাকা সংগঠনের আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের আস্থাভাজনও হয়ে ওঠেন। জঙ্গিবাদের তালিম নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই একাই রাজধানীর পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টে বোমা (আইইডি) হামলা করেন। এক বছর পর গত সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হন তিনি।

আধুনিক ধারণায় কারাগারকে শুধু শাস্তির জায়গা হিসেবে না রেখে বন্দীদের ‘সংশোধনাগার’ হিসেবে দেখা হয়। শাস্তি ভোগ করে বেরিয়ে বন্দীরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, সে জন্য আছে নানা ব্যবস্থা। এরপরও সেখানে ঢোকার পর যদিও কেউ জঙ্গিবাদে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়, সেটা উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারাগারে জঙ্গিদের অপতৎপরতা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কারাগারে নজরদারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখন চিঠির জবাবের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা।

সিটিটিসি কর্মকর্তাদের কথায় এ দায় অনেকাংশেই যায় কারা কর্তৃপক্ষের ওপর। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ এই দায় নিতে নারাজ। অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল আকবর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আটক জঙ্গিদের কঠোর নজরদারিতেই রাখা হয়েছে। তবে জামিনে বের হয়ে কেউ যদি পুনরায় জঙ্গিবাদে জড়ায় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’

কারা সূত্রে জানা গেছে, হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহরীর, হিজবুত তাওহিদসহ বিভিন্ন সংগঠনের সন্দেহভাজন এক হাজার ৯৬৭ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময় জামিন পেয়েছেন এক হাজারেরও বেশি। চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিলেন অন্তত ৮৫০ জন। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ জনকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করে গাজীপুর কারাগারে একটি সেলে রাখা হয়েছে। বাকিরা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কারাগারে জঙ্গিদের ওপর সেভাবে নজরদারি নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারাগারকে ‘প্রশিক্ষণ সেন্টারে’ পরিণত করেছে জঙ্গিরা। সেখানে বসেই নিচ্ছে জঙ্গিবাদের তালিম। উগ্রবাদী হয়ে প্রবেশ করে কারাগার থেকে বের হচ্ছে ভয়ংকর জঙ্গি হয়ে।

জঙ্গিদের নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সর্বশেষ একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগাযোগের জন্য জেলখানাকেই আপাতত নিরাপদ জায়গা মনে করছে জঙ্গিরা। সেখানে সংগঠনের বড় নেতা আবুল আব্বাস আল বাঙালি, শুরা সদস্য আবু রুহাম ও আবু আহসান হাবীবের সঙ্গে সংগঠনের অন্য সদস্যদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এ মুহূর্তে কারাগারে আইএসপন্থী নব্য জেএমবির সদস্যদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন জঙ্গি নেতা গালিব।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুরা সদস্য আবু রুহাম তাঁর পরিচিত লোক দিয়ে নানা কৌশলে বন্দী জঙ্গিদের কাছে স্মার্টফোন পৌঁছে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন নিরাপদ অ্যাপস (টেলিগ্রাম, সিগন্যাল)-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। তা ছাড়া কারাগারে অন্য জঙ্গিদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছেন জঙ্গি নেতা এমডি সাদ, আবু রাহিক (খালেদ)।

গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসা জঙ্গি সংগঠনের এক সদস্য ভেতরের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, কারাগারে জঙ্গিদের জন্য একাধিক সেল রয়েছে। ৭-৮টি কক্ষ নিয়ে করা একেকটি সেল। প্রতিটি কক্ষে চার-পাঁচজন করে বন্দীর থাকার ব্যবস্থা আছে। তাঁরা এক সেল খেকে অন্য সেলে না যেতে পারলেও একই সেলের বন্দীরা একসঙ্গে মেলামেশা ও চলাফেরা করতে পারেন।

বিষয়টি অস্বীকার করেননি অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল আকবর হোসেন। তিনি বলেছেন, সাধারণ বন্দীদের থেকে তাঁদের আলাদা করতে জঙ্গিদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে। এতে তুলনামূলক ঝুঁকি কম। তবে এটা লক্ষ্যও রাখা হয় তাঁরা যেন পরস্পর খুব বেশি না মিশতে পারেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাইরে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়লেও কারাবন্দী জঙ্গিরাই সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কারাগারে জঙ্গিদের জন্য আলাদা আলাদা সেল না থাকায় এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জঙ্গিরা একত্রিত হয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে জামিনে বের হয়ে তারা আবার জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত