Ajker Patrika

উদ্যোগেই আটকে আছে মাতৃভাষায় পাঠদান

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ৪২
উদ্যোগেই আটকে আছে মাতৃভাষায় পাঠদান

মাতৃভাষায় তাঁরা কথা বলতে পারলেও লিখতে কিংবা পড়তে পারেন না। সান্ত্বনা এটুকুই, ঘরে নিজের ভাষার অন্তত একটা বই তো আছে। ২০১৭ সালে মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল পাঁচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। কিন্তু সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে গত পাঁচ বছরেও সরকারি সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সেগুলো বেশি দূর এগোয়নি। এমনকি সরকারি কোনো স্কুলেও পড়ানো হচ্ছে না এসব বই।

সংশ্লিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম দফায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এবং সমতলের সাদরি ও গারো—এই পাঁচ ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। বই প্রকাশের পর দু-একজন শিক্ষক সেগুলো কেবল হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখেছেন। কিন্তু ক্লাসরুমে পড়ানো হয়নি বইগুলো। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ ও সিলেটের মতো ক্ষুদ্র জাতিসত্তা-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর স্কুলে এসব বই কখন, কীভাবে পড়ানো হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও তৈরি হয়নি।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মেঘাটিলা পুঞ্জি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা সিলভিয়া খংলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলে কোনো সরকারি স্কুলেই নৃগোষ্ঠীর ভাষার বইয়ে পাঠদান করা হয় না, আগেও হয়নি।’

খাসিয়া সম্প্রদায়ের নেতা অরিজেন খংলা বলেন, ‘কুলাউড়ার মেঘাটিলা পুঞ্জি ও নুনছড়া পুঞ্জিতে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় ও বেসরকারি উদ্যোগে এখনো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কলেবর বাড়েনি। তা ছাড়া সরকারি স্কুলগুলোয় মাতৃভাষায় পাঠদানের যে বিষয়টি ছিল, তা শুধু ঘোষণাসর্বস্বই ছিল।’

মাতৃভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪১টি ভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা অন্তত ২৭টি।

এমন প্রাচুর্য থাকলেও ইতিমধ্যে ১৪টি ভাষা প্রায় হারিয়ে গেছে বলে জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া একটি দেশে এতগুলো ভাষা হারিয়ে যাওয়া সত্যিই দুঃখজনক।’

সঞ্জীব দ্রং জানান, ২০২২ থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা দশক ঘোষণা করেছে ইউনেসকো। তাদের ধারণা, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে ৬ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩ হাজার ভাষা হারিয়ে যাবে।

জাতিসংঘের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘আমরা চাই, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করুক। তা না হলে অচিরেই ২৫টি ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ বাংলা একাডেমির মতো জাতীয় পর্যায়ে একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার দাবি করেন তিনি।

স্কুলে বই না পড়ানোর অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা পরিচালক মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, বইগুলো প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এগুলো নিয়ে সরকার যথাযথ তদারকি করা দরকার।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকসংকট ও মেধাভিত্তিক নির্বাচনপদ্ধতির কারণে নির্দিষ্ট এলাকা বা সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। সব থেকে বড় বিষয়, সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় থেকে তেমন আবেদনকারীও পাওয়া যায় না। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে এলেই সংকট কেটে যাবে। আশা করি, শিক্ষকসংকট দূর হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত