রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো উজবুক। দৈনন্দিন কথাবার্তায় আমরা প্রায়ই শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত পরিস্থিতির প্রসঙ্গক্রমে বুদ্ধিহীন বা নির্বোধ কোনো ব্যক্তিকে তুচ্ছার্থে উজবুক বলে সম্বোধন করতে দেখি। কিন্তু উজবুক শব্দটি বাংলা ভাষায় কীভাবে নির্বোধ বা আহাম্মক অর্থে প্রযুক্ত হলো, তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? এ শব্দটির সঙ্গে কি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ উজবেকিস্তানের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? নাকি অন্য কোনো উৎসজাত শব্দ এটি। তবে চলুন, আজ জানব উজবুকের ইতিবৃত্ত।
উজবুক তুর্কি শব্দ। এটি যুগপৎ বিশেষণ এবং বিশেষ্য পদ। উজবুক শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো আহাম্মক, বোকা, নির্বোধ; মূর্খ ব্যক্তি। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ উজবুক এবং উজবক দুটো ভুক্তি রয়েছে। এর অর্থ দেওয়া হয়েছে: বি. ১. তাতারীয় জাতিবিশেষ, ২. উজবকজাতীয় সৈন্য, এর প্রয়োগবাক্য দিয়েছেন (যবন কিরাত শক আগুদলে উজবক, খোরাসানি মোগল পাঠান—মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)। বিণ. তাদের মতো অশিক্ষিত এবং অজবুড়ো; নির্বোধ; আহাম্মক। অশোক মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘সমার্থশব্দকোষ’-এ উজবুক শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে অজবুক, বোকা, নির্বোধ, অকাট, আকাট, গবেট, অগারাম, ভোঁতাবুদ্ধি, নাদান, ল্যালা, অলবড্ডে প্রভৃতি শব্দকে নির্দেশ করেছেন। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অভিধানে উজবুক এবং অজবুক দুটো ভুক্তিকেই স্থান দিয়েছেন।উজবুকের অর্থ হিসেবে বলেছেন, বি. তাতারের জাতিবিশেষ, তজ্জাতীয় সৈন্য এবং বিণ. (সাদৃশ্যে) অসভ্য, মূর্খ, আনাড়ি প্রভৃতি।অপরদিকে অজবুক শব্দের অর্থ লিখেছেন, বিণ. মূর্খ, আনাড়ি, বেকুফ প্রভৃতি। অজবুক শব্দের উদাহরণ হিসেবে প্রয়োগবাক্য দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরে বাইরে’ রচনা থেকে (ওরা যে আমাদের অসভ্য অজবুক মনে করে যাবে)।
কেন উজবুক অর্থে বোকা, নির্বোধ, আহাম্মককে নির্দেশ করা হয়? মধ্য এশিয়ার একটি বৃহৎ প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলো উজবেকিস্তান। ১৯২৪ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় উজবেকিস্তান। প্রাচীন সমরখন্দ-তাসখন্দ-ইয়ারখন্দ উজবেকিস্তানে অবস্থিত। বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোটের প্রাচীন নাম ছিল চিহানখন্দ। এখানে বৈয়াকরণ পাণিনির বাড়ি ছিল।
‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থে আমরা এই নামের উল্লেখ পাই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধ্যযুগের অধিকাংশ মুসলিম শাসক তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য উজবেকিস্তান থেকে ভাড়া করে সৈনিক আনত। সে সময় ওই দেশের সৈনিকদের সংক্ষেপে উজবেক বা উজবক বলা হতো। এই উজবেক সৈন্যরা শারীরিকভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী হলেও বুদ্ধির উৎকর্ষে নাকি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এই উজবক বা উজবেকরাই কালের ধারায় বুদ্ধিহীনতাহেতু বাঙালিদের কাছে উজবুক হয়ে দাঁড়ায় এবং পরে বাঙালিদের মধ্যেও কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনায় উজবুক দেখা দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই উজবুক শব্দটি বাংলা অভিধানে আহাম্মক বা নির্বোধ অর্থে প্রতিস্থাপিত হয়। এ ছাড়া উজবেকিস্তানের সঙ্গে ‘উজবুক’, ‘উজবক’, ‘উজবগ’, ‘উজবুগ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করে থাকে।
উজবুক শব্দটির উৎসসন্ধান সম্পর্কে আরেকটি বিকল্প সূত্রের ধারণাও আমরা যাচাই করে দেখতে পারি। সেটি হলো [অজবোকা> অজবুকা > অজবুক > উজবুক]; মানে অজবোকা শব্দ থেকে ক্রমবিবর্তনের ধারায় উজবুক শব্দটি এলেও আসতে পারে। আমাদের সাহিত্যের বর্ণনায় অজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ যেমন রয়েছে, তেমনি কিন্তু আমরা অজবোকা শব্দের প্রয়োগও লক্ষ করি।
১৩৪৪ বঙ্গাব্দে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভূতিভূষণ গুপ্তের ‘অভাবনীয়’ গল্পে এবং ১২৮৬ বঙ্গাব্দে দুর্গাচরণ রায়ের রচিত ‘পাশকরা ডাক্তার’ নাটকে আমরা অজবোকা শব্দের জুতসই প্রয়োগ দেখতে পাই। হয়তো এমন আরও অনেক বিদ্বজ্জনের রচনায় এ শব্দটির ব্যবহার থাকতে পারে, যা আমাদের জানার বাইরে। সুতরাং এত বছর আগেও যেখানে আমরা অজবোকা শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করি, সেখানে একতরফা উজবেকিস্তানিদের উজবুক না বলে এ উৎসটিও আমরা অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য বিবেচনায় নিতে পারি।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো উজবুক। দৈনন্দিন কথাবার্তায় আমরা প্রায়ই শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত পরিস্থিতির প্রসঙ্গক্রমে বুদ্ধিহীন বা নির্বোধ কোনো ব্যক্তিকে তুচ্ছার্থে উজবুক বলে সম্বোধন করতে দেখি। কিন্তু উজবুক শব্দটি বাংলা ভাষায় কীভাবে নির্বোধ বা আহাম্মক অর্থে প্রযুক্ত হলো, তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? এ শব্দটির সঙ্গে কি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ উজবেকিস্তানের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? নাকি অন্য কোনো উৎসজাত শব্দ এটি। তবে চলুন, আজ জানব উজবুকের ইতিবৃত্ত।
উজবুক তুর্কি শব্দ। এটি যুগপৎ বিশেষণ এবং বিশেষ্য পদ। উজবুক শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো আহাম্মক, বোকা, নির্বোধ; মূর্খ ব্যক্তি। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ উজবুক এবং উজবক দুটো ভুক্তি রয়েছে। এর অর্থ দেওয়া হয়েছে: বি. ১. তাতারীয় জাতিবিশেষ, ২. উজবকজাতীয় সৈন্য, এর প্রয়োগবাক্য দিয়েছেন (যবন কিরাত শক আগুদলে উজবক, খোরাসানি মোগল পাঠান—মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)। বিণ. তাদের মতো অশিক্ষিত এবং অজবুড়ো; নির্বোধ; আহাম্মক। অশোক মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘সমার্থশব্দকোষ’-এ উজবুক শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে অজবুক, বোকা, নির্বোধ, অকাট, আকাট, গবেট, অগারাম, ভোঁতাবুদ্ধি, নাদান, ল্যালা, অলবড্ডে প্রভৃতি শব্দকে নির্দেশ করেছেন। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অভিধানে উজবুক এবং অজবুক দুটো ভুক্তিকেই স্থান দিয়েছেন।উজবুকের অর্থ হিসেবে বলেছেন, বি. তাতারের জাতিবিশেষ, তজ্জাতীয় সৈন্য এবং বিণ. (সাদৃশ্যে) অসভ্য, মূর্খ, আনাড়ি প্রভৃতি।অপরদিকে অজবুক শব্দের অর্থ লিখেছেন, বিণ. মূর্খ, আনাড়ি, বেকুফ প্রভৃতি। অজবুক শব্দের উদাহরণ হিসেবে প্রয়োগবাক্য দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরে বাইরে’ রচনা থেকে (ওরা যে আমাদের অসভ্য অজবুক মনে করে যাবে)।
কেন উজবুক অর্থে বোকা, নির্বোধ, আহাম্মককে নির্দেশ করা হয়? মধ্য এশিয়ার একটি বৃহৎ প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলো উজবেকিস্তান। ১৯২৪ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় উজবেকিস্তান। প্রাচীন সমরখন্দ-তাসখন্দ-ইয়ারখন্দ উজবেকিস্তানে অবস্থিত। বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোটের প্রাচীন নাম ছিল চিহানখন্দ। এখানে বৈয়াকরণ পাণিনির বাড়ি ছিল।
‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থে আমরা এই নামের উল্লেখ পাই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধ্যযুগের অধিকাংশ মুসলিম শাসক তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য উজবেকিস্তান থেকে ভাড়া করে সৈনিক আনত। সে সময় ওই দেশের সৈনিকদের সংক্ষেপে উজবেক বা উজবক বলা হতো। এই উজবেক সৈন্যরা শারীরিকভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী হলেও বুদ্ধির উৎকর্ষে নাকি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এই উজবক বা উজবেকরাই কালের ধারায় বুদ্ধিহীনতাহেতু বাঙালিদের কাছে উজবুক হয়ে দাঁড়ায় এবং পরে বাঙালিদের মধ্যেও কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনায় উজবুক দেখা দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই উজবুক শব্দটি বাংলা অভিধানে আহাম্মক বা নির্বোধ অর্থে প্রতিস্থাপিত হয়। এ ছাড়া উজবেকিস্তানের সঙ্গে ‘উজবুক’, ‘উজবক’, ‘উজবগ’, ‘উজবুগ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করে থাকে।
উজবুক শব্দটির উৎসসন্ধান সম্পর্কে আরেকটি বিকল্প সূত্রের ধারণাও আমরা যাচাই করে দেখতে পারি। সেটি হলো [অজবোকা> অজবুকা > অজবুক > উজবুক]; মানে অজবোকা শব্দ থেকে ক্রমবিবর্তনের ধারায় উজবুক শব্দটি এলেও আসতে পারে। আমাদের সাহিত্যের বর্ণনায় অজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ যেমন রয়েছে, তেমনি কিন্তু আমরা অজবোকা শব্দের প্রয়োগও লক্ষ করি।
১৩৪৪ বঙ্গাব্দে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভূতিভূষণ গুপ্তের ‘অভাবনীয়’ গল্পে এবং ১২৮৬ বঙ্গাব্দে দুর্গাচরণ রায়ের রচিত ‘পাশকরা ডাক্তার’ নাটকে আমরা অজবোকা শব্দের জুতসই প্রয়োগ দেখতে পাই। হয়তো এমন আরও অনেক বিদ্বজ্জনের রচনায় এ শব্দটির ব্যবহার থাকতে পারে, যা আমাদের জানার বাইরে। সুতরাং এত বছর আগেও যেখানে আমরা অজবোকা শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করি, সেখানে একতরফা উজবেকিস্তানিদের উজবুক না বলে এ উৎসটিও আমরা অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য বিবেচনায় নিতে পারি।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫