Ajker Patrika

সরকারি প্রণোদনার বীজ নষ্ট কেন

সম্পাদকীয়
সরকারি প্রণোদনার বীজ নষ্ট কেন

কৃষিবিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়ই হচ্ছে, কৃষকের বীজ ও বীজ সংরক্ষণ ব্যবস্থা। কিন্তু সে জায়গায় কৃষকেরা আর নেই। অনেক দিন থেকে বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানির প্যাকেটজাত বীজের ওপরই তাঁদের নির্ভর করতে হচ্ছে।

আমাদের দেশের কৃষকেরা হাজার বছর ধরে নিজেদের চাষাবাদের বীজ নিজেরাই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতেন। সংকটের সময় পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে এক কৃষকের বীজ দিয়ে অন্য কৃষক উপকৃত হতেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কৃষকেরা এখন আর নেই।

এ কারণে তাঁদের এখন সরকারের প্রণোদনার বীজের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানাভাবে কৃষি সহযোগিতা ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি পালন করছে। এরই অংশ হিসেবে কৃষকদের প্রতিবছর বিনা টাকায় প্রণোদনার বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজে যদি চারা না গজায়, তাহলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় প্রথমত কৃষককে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ‘চারা হয় না প্রণোদনার বীজে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে রোববার।

খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে কৃষকদের মধ্যে নিম্নমানের চীনাবাদাম বীজ সরবরাহ করা হয়।কিন্তু বিতরণ করা ওই বীজের বড় অংশ থেকেই চারা না গজানোর অভিযোগ উঠেছে। নোয়াখালীর হাতিয়া, নরসিংদীর রায়পুরা ও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় এ রকম ঘটনা ঘটেছে।

সরকার দুর্যোগ, মন্দা কিংবা কোনো সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রণোদনায় বীজ দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি প্রণোদনার বীজে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব বীজে চাষ করে কৃষকের সময়, শ্রম ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। এটা দেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যব্যবস্থার ওপর একধরনের চাপও তৈরি করছে। এ ঘটনায় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না থাকায় যাবতীয় ভোগান্তি কৃষককেই বহন করতে হয়। তবে করপোরেট কোম্পানি আর রাষ্ট্রের বীজ প্রণোদনা এক বিষয় নয়। যদি কোম্পানির মতো রাষ্ট্রের সরবরাহ করা বীজেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে দেশের কৃষিসমাজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

এমনিতেই দিন দিন কৃষিজমি কমছে। এর পরও নানা সংকট সামলে আমাদের দেশের কৃষকেরা এখনো কৃষি নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কৃষকের সম্মান ও মর্যাদা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। বীজ নিয়ে কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। যে বীজ আমাদের ভবিষ্যতের বেঁচে থাকার শর্ত পূরণ করে, সেই বীজ ব্যবস্থাপনাকে রাষ্ট্রের কৃষি বিভাগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার বীজ কৃষকের হাতে পৌঁছানোর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি বিএডিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। নতুবা সরকারের কৃষি নিয়ে সব ভালো উদ্যোগ সমালোচনার মধ্যে পড়বে। এতে সরকারের জনপ্রিয়তাও কমে যেতে পারে।

আমরা আশা করি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে দাঁড়াবে রাষ্ট্র। প্রণোদনার বীজ সরবরাহের আগে যথার্থ মনিটরিং করতে হবে। আর বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সব ঘটনার তদন্ত ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত