Ajker Patrika

নারী

সম্পাদকীয়
নারী

কামরুল হাসানের ছবি যাঁরা দেখেছেন কাগজে ও ক্যানভাসে, তাঁরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, শিল্পী নারীদের অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। এত এত নারীকে কেন আঁকলেন পটুয়া? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর। উত্তরটি শুনে নিয়ে আমরা শুনব, এ ব্যাপারে সৈয়দ শামসুল হকের বক্তব্য। বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর প্রশ্নটার উত্তর খুঁজেছেন এভাবে: এটা আসলে কামরুল হাসানের ব্যক্তিগত জীবনের অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতা থেকে এসেছে।

ব্যক্তিজীবনের অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতা থেকে নারী!

তারও উত্তর আছে। কামরুল হাসান নিরাপত্তা আর নিশ্চয়তা খুঁজেছেন এসব নারীদেহে। নারীর দেহ, নারীর মুখ, দেহের বাঁক, বুকের উজ্জ্বলতা—এসব দিয়েই তাঁর আনন্দ অভিমুখে যাত্রা। যা ব্যক্তিগত জীবনে পাননি, তা তিনি খুঁজে নিয়েছেন শিল্পে। বাস্তবতা তাঁকে কখনো ভীত করেছে, শঙ্কিত করেছে, আবার ব্যক্তিজীবনের তিক্ততাও তাতে ছাপ ফেলেছে। নারী নিয়ে এই ভিন্নধর্মী দুই প্রতিক্রিয়া নারীর মুখকে, দেহকে সাপ, ছুঁচো, নেউলেও বানিয়ে দিয়েছে; অর্থাৎ বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের মতে, শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে শিল্পসৃষ্টির প্রত্যক্ষ একটা সম্পর্ক রয়েছে।

সৈয়দ হকের বিশ্বাস ঠিক এর বিপরীত। শিল্পীর জীবন জানা একেবারেই প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন না সৈয়দ হক। শিল্প তো রসিকের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের দিকেই যায়, শিল্পীর দিকে নয়। একবার রচিত হয়ে যাওয়ার পর শিল্পীর সঙ্গে শিল্পের চূড়ান্ত বিচ্ছেদ বা বিযুক্তি ঘটে যায়। শিল্প সৃষ্টির আগে শিল্পী থাকেন সাধারণ মানুষ, সৃষ্টির সময় তিনি হয়ে ওঠেন বিশেষ মানুষ। শিল্প সৃষ্টির পর আবার তিনি সাধারণ মানুষ!

তাহলে কামরুল হাসান নারীকে আঁকার সময় কি বিশেষ মানুষে পরিণত হতেন? আঁকার সময় তাঁর একরকম উত্তরণ ঘটত? আঁকা শেষ হয়ে গেলে তিনি আবার নিজের আটপৌরে জীবনে প্রত্যাবর্তন করতেন?

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন শুধু কামরুল হাসান। আফসোস, তিনি আর নেই। 

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ৩৮৪-৩৮৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত