Ajker Patrika

পেঁয়াজের ফলনে খুশি দামে বেজার কৃষক

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৪৬
পেঁয়াজের ফলনে খুশি দামে বেজার কৃষক

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজ ঘরে তোলা, কাটা ও সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক-কৃষাণিরা। তবে ফলনে খুশি হলেও দামে বেজার তাঁরা। বর্তমানে বাজার দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হলে প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা লোকসান গুনতে হবে তাঁদের।

উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ও হাট ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার ৬০ থেকে ৮০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে বীজ, কীটনাশক, পরিচর্যা, শ্রমিক ও পরিবহন বাবদ খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। আবার বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। এতে প্রতি কেজিতে কৃষকের ৫ থেকে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রতি শুক্রবার উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বসে সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট। সকালে কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক, পেঁয়াজ আর ব্যবসায়ীদের পদচারণে মুখরিত কলেজের সবুজ চত্বর। পেঁয়াজের আকার আকৃতি মানভেদে প্রতিকেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

হাটে আসা কৃষকেরা জানায়, এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দাম কম। কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা গেলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক ফজুল শেখ বলেন, ‘১১ মণ পেঁয়াজ হাটে এনেছিলাম। প্রতিকেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। যা উৎপাদন ব্যয় থেকে ১৫ টাকা কম।’

পান্টি ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘দেশে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রায় ২৫ টাকা খরচ হয়েছে। সেই পেঁয়াজ ১৮ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। দাম এমন থাকলে কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষ বন্ধ করে দেবে’

শৈলকুপার কচুয়া গ্রাম থেকে হাটে আসা কৃষক ইউনুছ আলী বলেন, ‘রাত তিনটায় পেঁয়াজ নিয়ে হাটে এসেছি। পেঁয়াজের দাম নেই। সামনের বছর আর পেঁয়াজের চাষ করব না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আকার আকৃতি ও মান ভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ কেনাবেচা হচ্ছে। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি ও বাইরের পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দাম কম।’

পান্টি পেঁয়াজ হাটের ইজারাদার এইচ এম আব্দুল্লাহ টিপু বলেন, ‘প্রায় ৫ হাজার মণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে হাটে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে এসেছে। তবে দাম কম থাকায় কৃষকেরা লোকসান গুনছেন।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর। এ বছর পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ১০ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৫ হেক্টর বেশি জমি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকেরা এখন পেঁয়াজ ঘরে তোলা, কাঁটা ও সংরক্ষণের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। পেঁয়াজের দামে কৃষকেরা অখুশি। তবে এখনো উৎপাদন পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত