Ajker Patrika

নিষিদ্ধ জাল পড়ে মাসোহারায়

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১২: ৫২
নিষিদ্ধ জাল পড়ে মাসোহারায়

উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলেদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিলে নিষিদ্ধ জাল পেতে মাছ ধরার সুযোগ পান জেলেরা। আর টাকা দিতে না পারলে তাঁদের জাল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন জেলেরা।

জেলেদের অভিযোগ, ‘মাসোহারা’ নেওয়ার নেওয়া হয় উপজেলার সখিনা নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে। এ ছাড়া কোস্টগার্ডের সোর্স পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি জেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা।

উপজেলার হরিণঘাটা, পদ্মাসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের মূল পেশা সাগর ও নদীতে মাছ শিকার। শুধু পাথরঘাটা নয়, জেলার তিনটি প্রধান নদ-নদী পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের বেশির ভাগই জেলে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ জাল জব্দে অভিযানের সময় পাথরঘাটার পদ্মা স্লুইজের পশ্চিম খাল এলাকায় অভিযান চালায় প্রশাসন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মৎস্য কর্মকর্তা, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ মৎস্য বিভাগের মাঝিমাল্লারা উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে জেলেরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে অন্তত আটজন আহত হন। এর আগেও উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের সংঘবদ্ধ হামলার শিকার হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে নেতা বলেন, উপকূলের জেলেরা নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বন বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয়ে ‘মাসোহারা’ নেওয়া হয়। এতে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের সুযোগ পান জেলেরা। মাসে দুবার মোট ছয় থেকে সাত দিন মাছ শিকারের সময় থাকে। জেলেদের ভাষায় এই সময়কে বলা হয় ‘গোন’ (অমাবস্যা ও পূর্ণিমার আগে ও পরে তিন দিন)। তিনি বলেন, ওই গোনের সময় মাছ ধরতে কচিখালী, দুবলা ও শেওলা—এ তিন এলাকার বন বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয়ে এক হাজার টাকা করে মোট তিন হাজার টাকা আদায় করা হয়। এরপর চরদুয়ানী নৌপুলিশ পরিচয়ে আদায় করা হয় এক হাজার ও কোস্টগার্ড পরিচয়ে এক হাজার করে টাকা। তিনজন স্থানীয় সোর্স আলমগীর, মান্নান ও মাসুম জেলেদের কাছ থেকে মাসোহারার টাকা তোলেন।

ওই জেলে নেতা আরও বলেন, নদীতে জাল পাতলেই এই সোর্সরা সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে ফোনে বিষয়টি জানান। দর-কষাকষির পর টাকা হাতে পেয়ে তাঁরা আবার ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করলেই জেলেরা নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারেন।

একই রকম বক্তব্য দেন পদ্মা এলাকার অর্ধশতাধিক জেলে। তাঁরা বলেন, কোনো জেলে টাকা দিতে ব্যর্থ হলেই তিনি ‘রেড সিগন্যালের’ আওতায় পড়ে যান। তখন তুলে নেওয়া হয় তাঁর জাল, মাছ ও রসদ। এ ছাড়া অভিযানের সময় কোনো জেলে ধরা পড়লে, সোর্সরা তীরে থেকে দর-কষাকষি করে টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর ফোনে জানিয়ে দেওয়া হলে জাল ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে সখিনা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা গত দুই মাসে কোনো অভিযান পরিচালনা করিনি। কালাম মাঝিকে আমি চিনি, জেলেদের কাছ থেকে আমাদের নাম করে সে যদি টাকা তোলে, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কোস্টগার্ড পাথরঘাটা ঘাঁটির স্টেশন কমান্ডার লে. হারুন-অর রশীদ বলেন, ‘আমি এখানে জয়েন করেছি দুই মাস হলো। এরপর যার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, আমি সেই সোর্স পরিচয়দানকারী ও ট্রলার মাঝির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এমন অভিযোগ শুনিনি। আমি বিষয়টির খোঁজ নেব। বন বিভাগের কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইপিএলে চাহালের রেকর্ড হ্যাটট্রিকের রাতে রহস্যময় পোস্ট এই নারীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত