Ajker Patrika

আতঙ্কের পথ আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৩৪
আতঙ্কের পথ আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা

আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে আর যাই মনে হোক কোনোভাবেই রাস্তা মনে হয় না। ফ্লাইওভারের পিলারের পর পড়ে থাকা সড়ক নির্মাণসামগ্রী, ইট, বালু আর পাথরের স্তূপের দখলে। চার লেনের এই সড়কের তিন লেন পরিমাণ জায়গাই বেদখল হয়ে গেছে। এই পথে চলাচল করা পরিবহনের কচ্ছপ গতিতে অতিষ্ঠ যাত্রীরা। ক্রমে ছোট হওয়া এই মহাসড়কে ঈদযাত্রা কতটা ভোগান্তির হতে পারে, সেটা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্ট সবাই। এই মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে ঘুরে মনে হয়েছে যাতায়াতের অভিধানে নির্বিঘ্ন, আরাম এসব বিশেষণ অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে।

ঢাকা থেকে গাজীপুর যাত্রায় প্রথম প্রতিবন্ধকতা শুরু হয় মূলত আবদুল্লাহপুর ব্রিজের মুখেই। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলায় উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুরের প্রবেশ মুখ এখন সংকুচিত। সরু পথে যানবাহন-গুলোকে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে উঠতে হয় আবদুল্লাহপুর সেতুতে। কিন্তু সেতুতে উঠবে কী, তার আগে লম্বা লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষা। সেতু পার হতেই টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে মিলগেট হয়ে চেরাগ আলী মার্কেটের আগপর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ করা উড়ালপথের (বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট) পিলারের সঙ্গে আপস করে এগোতে হয়। সঙ্গে বাড়তি যন্ত্রণা হিসেবে থাকে উড়ালপথের নিচের অংশের কার্পেটিংয়ের কাজ। ভবিষ্যৎ সড়কের কর্মযজ্ঞে উধাও বর্তমান যাত্রাপথের সব শান্তি।

এমন কর্মযজ্ঞে চার লেনের সড়ক কোথাও তিন আবার কোথাও দুই লেনে

পরিণত হয়েছে। দৃশ্যমান এসব লেনেও জায়গা মূলত এক লেনের। একমুখী সড়কের জায়গায় দুই দিক দিয়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলতে হওয়ায় পথ এগোয় থেমে থেমে। জেব্রা ক্রসিং আর ফুটপাত না থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই পথটুকু পথচারীদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের মাঝে রাখা স্ল্যাব আর উড়ালসড়কের পিলারের ফাঁক দিয়ে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে কে যে কখন, কোন গাড়ির সামনে পড়বে, সেটা আন্দাজ করা যায় না। এভাবে পথচারী চলাচলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধীরগতির যানবাহন, যা দূরপাল্লার বাসসহ অন্য যানবাহনের গতি কমাতে সাহায্য করে। ফলে যাত্রা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।

স্টেশন রোড ও কুনিয়া বড়বাড়ি মাঝামাঝি করিমপুর সুপার মার্কেট ও মৎস্যজীবী খামার এলাকায় সড়কের মাঝে ইট, সিমেন্ট ও পাথর মেশানোর চাতাল তৈরি করা হয়েছে। দুই পাশের ফুটপাতে পিলার বসানোর জন্য খাল খনন করায় অবশিষ্ট মূল সড়কও খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো ডুবে থাকায় ঝাঁকুনিতে প্রাণ যায়যায় অবস্থা যাত্রীদের। গত বুধবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে আবদুল্লাহপুর থেকে বলাকা বাসে রওনা দিয়ে করিমপুর সুপার মার্কেট পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগল দেড় ঘণ্টা। এ সময় সাধারণত গাড়ির চাপ একটু কম থাকে। তারপরও এতটা সময় লাগায় প্রতিদিনকার মতো বিরক্ত চালক মুক্তার হোসেন। এ দিনের ধীরগতির জন্য দায়ী করলেন বৈশাখী বৃষ্টিকে। বললেন, বৃষ্টিতে নির্মাণকাজ চলায় কখন কোথায় গর্ত আছে, সেটা বোঝা মুশকিল। তাই দেখেশুনে না চালালে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

এমন অবস্থায় এই সড়কে ঈদযাত্রা কেমন হবে—এ প্রশ্নের জবাবে মুক্তার হোসেন বললেন, ‘মানুষ তো আবদুল্লাহপুরের ব্রিজই পার হইতে পারব না। এই সড়কে গাড়ি দাঁড়ায়া থাকব গাছের মতো। ফ্লাইওভারের কাম তো আর ঈদের আগে শ্যাষ হইব না। কামের জন্য যে যন্ত্রপাতি আইনা রাস্তায় রাখছে ঐডিও তো সরানি যাইব না। এহনই এই রাস্তা গাড়ি চলার উপযুক্ত না। ঈদে গাড়ি বাড়ব দুই-তিন গুণ, তহন ঢাকা থাইকা দূরদূরান্ত যাওয়া পরের কথা, গাজীপুরের মানুষ এই রাস্তায় উত্তরা যাইতে পারব না।’

কুনিয়া তারগাছ বাজারের সামনে উভয় পাশের সড়কে ইট বিছিয়ে কোনোমতে সড়ক চালু রাখা হয়েছে। এসব জায়গায় গাড়ি চলে ধুঁকে ধুঁকে। বিপজ্জনক খাদ আছে ছয়দানা ও ভোগরা বাসস্ট্যান্ডে। সাইনবোর্ড ও বোর্ডবাজার বাসস্ট্যান্ডও খানাখন্দে ভরা। ফুটপাতজুড়ে বসেছে নানা দোকান। এক মিনিট গাড়ি চললে থেমে থাকে দশ মিনিট। এভাবে বিধ্বস্ত এক সড়ক ধরে আহত, ক্লান্ত বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার এগোয় (বাধ্য হয়) শম্বুকগতিতে।

তাই ঈদযাত্রায় এই সড়ক নিয়ে আশার পরিবর্তে আতঙ্কই ভর করেছে গাড়িচালক, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে।

ঈদযাত্রা / ভোগান্তি সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত